Ad T1

তাপপ্রবাহের কবলে আমের গুটি ফলন নিয়ে শঙ্কা

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১৩: ৫৬

রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে চলা তাপপ্রবাহে বাগানগুলোয় ব্যাপকভাবে আমের গুটি ঝরে পড়ছে। কৃষি বিভাগ বলছে, গড়ে ২৫ শতাংশ গুটি ঝরে পড়েছে। এবার আমের ফলন গতবারের চেয়ে অর্ধেক হবে বলে আশঙ্কা কররা হচ্ছে। পানি সেচ ও কীটনাশক দিয়েও গুটি রক্ষা করা যাচ্ছে না বলছেন বাগান মালিকরা। এ সময়ে বৃষ্টি খুব প্রয়োজন। আবহাওয়া অফিসও দিতে পারছে না কোনো ভালো সংবাদ।

এ বছর আমের অনইয়ার চলছে। চলতি মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলের জেলাগুলোতে আমের বাম্পার ফলন হওয়ায় কথা। গত বছর ছিল ‘অফইয়ার’। ফলন ভালো হয়নি। গতবারের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা করেছিলেন বাগান মালিকরা।

দিনের বেলায় ঘর থেকে বের হলেই সূর্যের তীব্র তাপ গায়ে আগুনের হলকার মতো বিঁধে। তাপপ্রবাহে বরেন্দ্র অঞ্চলখ্যাত রাজশাহীর মাঠঘাট ও জলাশয় শুকিয়ে যাচ্ছে। বিলগুলো খাঁ খাঁ করছে পানির অভাবে।

মাঝে মাত্র ১৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া রাতে বিজলিসহ কিছুটা দমকা হাওয়া বয়ে গেছে। আবার কোথাও হয়নি। পাশাপাশি বাতাসের আর্দ্রতা কমেছে। মাটি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। ফলে আমের গুটি শুকিয়ে যাচ্ছে। পানি সেচ ও কীটনাশক দিয়েও গুটি রক্ষা করা যাচ্ছে না।

চাষিরা জানান, রোদের কারণে আমের গুটি ঝরে পড়ে। কিন্তু বৃষ্টির অভাব ও তাপপ্রবাহে অনেক বাগানের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ গুটি ঝরে গেছে।

পবার নওহাটা পেরৗসভার আমচাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, কয়েকটি বাগানে শতাধিক আমের বড় গাছ আছে। প্রতিটি গাছে এবার মুকুল ভালো আসে। ফলে গতবারের চেয়ে গুটিও এসেছে ভালো। কিন্তু রোদ আর গরমে ওই গুটিও ব্যাপকহারে ঝরে পড়ছে। গাছের গোড়ায় পানি ও সেচ দিয়েও গুটি ঝরা রোধ করা যাচ্ছে না।

মানিক বলেন, আমের জন্য এ সময়ে বৃষ্টি খুব প্রয়োজন। বৃষ্টি হলে গুটি ঝরা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু কাঙ্ক্ষি সেই বৃষ্টির দেখা নাই। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গুটি ঝরছে। এবার আমের ফলনও গতবারের চেয়ে অর্ধেক হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২৫৭ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এ ছাড়া নাটোর, পাবনা, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া জেলায় আরো ৫ হাজার ৪৭৮ হেক্টর জমি আম চাষের আওতায় আছে। সবচেয়ে বেশি ৩৮ হাজার ৬০৮ হেক্টর আমবাগান রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। রাজশাহী অঞ্চলের এই পরিমাণ বাগান থেকে চলতি মৌসুমে সাড়ে ১১ লাখ টন আম উৎপন্ন হবে বলে কৃষি বিভাগের আশা। এই পরিমাণ আমের বাজারমূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় আমের গুটি ঝরে পড়ছে। এ কারণে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম জানান, গত ২২ মার্চ থেকে এ অঞ্চলে বয়ে চলেছে মৃদু তাপপ্রবাহ। গড় তাপমাত্রা ২৮-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটাকে স্বাভাবিক ধরা হয়। আর ৪২-এর উপরে গেলে সেটাকে অতিতীব্র তাপপ্রবাহ বলে।

গত ২৮ মার্চ রাজশাহীতে ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

এ ছাড়াও ৬ এপ্রিল ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে তাপপ্রবাহ আরো তীব্র হবে। সেক্ষেত্রে গড় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি অতিক্রম করতে পারে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত