আত্রাই নদীর জয়গঞ্জ খেয়াঘাট উত্তরাঞ্চলের চার জেলার মানুষের কান্নার অন্যতম কারণ। সেতু না থাকায় সারাবছর দুর্ভোগ পোহাতে হয় সংশ্লিষ্ট লাখ লাখ মানুষকে। সেখানে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছিল নদীর দিনাজপুরের বীরগঞ্জের শতগ্রাম ইউনিয়নের গড়ফতু গ্রাম ও কাশিমনগর অংশে একটি বালুমহাল। সেটি ইজারা নিয়ে তান্ডব চালিয়েছিল কয়েক প্রভাবশালী ব্যক্তি। আড়াই বছর আগে স্থানীয়দের জানমাল রক্ষার আন্দোলনের মুখে বাতিল হয় ইজারা। আবারো সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।

২০২২ সালে ইজারা বাতিল হওয়ার পর থেকে নিরাপদেই ছিল স্থানীয় কৃষি ও জীববৈচিত্র। আশপাশের চাষিরা নানা ফসল ফলিয়ে আবারো স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিলেন, কিন্তু সেখানে পুনরায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন। ঘাটটি বালু মহাল হিসেবে ইজারা দেওয়ায় আবারো ফসলি জমি-ঘরবাড়ি হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন কৃষক ও তীরবর্তী বাসিন্দারা। বাধ্য হয়ে নেমেছেন আন্দোলনে। প্রায় প্রতিদিন আলোচনা সভা,পরামর্শ সভাসহ পালন করছেন নানা কর্মসূচি। এরই অংশ হিসেবে রোববার শতগ্রাম ইউনিয়নের ঝাড়বাড়িহাট এলাকার শান্তির মোড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। তারা আত্রাই নদীর ভাঙ্গন থেকে ফসলি জমি রক্ষা ও রাস্তায় নিরাপদে চলাচলের দাবি জানিয়েছেন।

মানববন্ধনে কৃষকরা বলেন, আত্রাই নদীর আশপাশে জমিগুলো চর এলাকা হলেও চাষবাস করে দু’মুঠো খেয়ে-পরে বাঁচার সংগ্রাম করছি। সেখানে আবারো নদীর গভীর থেকে বালু তুলছে যেটুকু জমি অবশিষ্ট আছে তা-ও বিলিন হয়ে যেতে পারে। তখন তাদের পথে বসা ছাড়া উপায় থাকবে না। বড় বড় গর্ত খনন করায় পরিবর্তন ঘটছে নদীর গতিপথের। এতে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে সেচব্যবস্থায়। বালু তোলার কারণে ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে শতাধিক একর মাটি। উত্তোলিত বালু পরিবহনে ডাম্প ট্রাকগুলো বেপরোয়া গতিতে চলাচল করায় ঝরে গেছে শিশুসহ চারটি প্রাণ, আহত হয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন।

বক্তারা আরো বলেন, আত্রাই নদী পাড়ের জমিতে পাট, ধান, সরিষা, ভুট্টাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করা হয়। এখানকার মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই চরের ফসল। এর আগেও সরকারিভাবে বালুমহাল থেকে দীর্ঘ দিন ধরে অপরিকল্পিতভাবে অবাধে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার কারণে প্রায় ২০০ বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকির মুখে পড়েছে শত শত বিঘা আবাদি জমি। আবারো সেখানে বালুমহাল ইজারা দেওয়া কৃষকের পেটে লাথি মারার শামিল। অবিলম্বের ইজারা বাতিল করে কৃষকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ভুক্তভোগী কৃষক আবদুল মতিন, গড়ফতু উদয়ন ক্লাবের সভাপতি হামিদুর রহমান, কৃষক মোহাম্মদ নুর আলম, আবু বক্কর সিদ্দিক, শাহজান আলী, সহকারী শিক্ষক মতিউল ইসলাম, ইউসুফ আলী, আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।

ইজারা পাওয়া প্রতিষ্ঠান বিসমিল্লাহ এন্টার প্রাইজের মালিক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা টেন্ডারের বিজ্ঞপ্তি পেয়েই দরপত্র দিয়েছিলাম। সেই দরপত্রের মাধ্যমে গত ৮ এপ্রিল বালু মহালটি ইজারা পেয়েছি। পহেলা বৈশাখ থেকেই বালু তোলা শুরু করব, ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’

জনগণের ক্ষোভ উপেক্ষা করে পুনরায় বালুমহাল ইজারা দেওয়ার বিষয়ে জানতে দিনাজপুরের ডিসি রফিকুল ইসলামের কার্যালয়ে গেলে এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই বলেই হন হন করে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। এরপর আর কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি।