Ad T1

পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ, বরিশালে ইলিশের কেজি ৪ হাজার

জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১৬: ২২
পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে বরিশাল পোর্ট রোডের পাইকারি বাজারে ইলিশের আমদানি দ্বিগুণ হলেও দাম একেবারেই আকাশছোঁয়া। এ মোকামে দেড় কেজি সাইজের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে চার হাজার টাকা কেজি দরে। একই ভাবে ১ কেজি ২শ গ্রাম সাইজের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ টাকা আর ১ কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৩২০০ টাকা কেজি দরে।
শনিবার বরিশালের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার পোর্ট রোডে গিয়ে ইলিশের এমন ঊর্ধ্বমুখী দামে বিস্মিত হয়েছেন ক্রেতারা। তবে বিক্রেতারা বলছেন পহেলা বৈশাখের ইলিশ পান্তা আয়োজনকে কেন্দ্র করে বরিশালের বাজারে ইলিশের দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী। তবে পয়লা বৈশাখের পরেই দাম কিছুটা কমতে পারে বলে মনে করছেন বিক্রেতারা। বরিশাল পোর্ট রোডের একাধিক মৎস্য আড়তদার জানান, দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ ইলিশের মোকাম হওয়া স্বত্বেও সারা বছর ইলিশের তেমন ‘আমদানি’ ছিল না। গত কয়েক মাছ ধরে অনেকটা ইলিশ শূন্য বরিশালের ইলিশের মোকাম। গত দু’দিন ধরে এ মোকামে কিছুটা মাছ আসছে। আড়তদাররা জানান, শনিবার কমপক্ষে ১০০ মন মাছের ‘আমদানি’ হয়েছে । শুক্রবার এ মোকামে ২শ মনেরও বেশি ইলিশের আমদানি ছিল। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ৬০ থেকে ৮০ মন ইলিশ উঠেছে এ মোকামে। পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে গত দু দিন ধরে সাগর থেকে ধরা ইলিশ নিয়ে বরিশালের মোকামে আসেন জেলেরা। এ কারণে গত দু দিন ধরে ইলিশের পরিমাণ বেশি ছিল এখানে। তবে ইলিশের দাম না কমে আরো বেড়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। মো : নাছির উদ্দীন নামের এক মৎস্য আড়তদার জানান, গত দুই দিন ধরে বরিশালের মোকামে ইলিশের আমদানি অনেকটা বেশি। গতকাল শনিবার এখানে ১শ মনের বেশি এবং এর আগের দিন শুক্রবার এখানে ২শ মন ইলিশের আমদানি হয়। তবে ইলিশের দাম না কমে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে । তিনি বলেন আগে এখানে দেড় কেজি সাইজের ইলিশ ২৫শ টাকায় বিক্রি হলেও এখন প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার টাকার উপরে। একইভাবে এক কেজি ২শ গ্রাম সাইজের ইলিশ আগে ২২শ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫শ টাকা এবং ১ কেজি সাইজের ইলিশ আগে ১৭শ থেকে ১৮শ টাকায় বিক্রি হলেও শুক্রবার বিকি হয়েছে ৩২শ টাকা কেজি। এছাড়া এলসি সাইজের ৭শ থেকে ৯শ গ্রাম সাইজের ইলিশ ২৪শ টাকা, ৫শ থেকে ৬শ গ্রাম সাইজের ইলিশ সাড়ে ১৬শ টাকা, ৪শ থেকে ৫শ গ্রাম সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি ১১শ ৫০ টাকা এবং ছোট ৩শ গ্রাম সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি ৮শ থেকে ৯শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
ইলিশ মাছ
ইলিশ মাছ কিনতে এসে বিথী বেগম নামে এক ক্রেতা বলেন, ইলিশের দাম জিজ্ঞেস করে আমি হতবাক হয়ে গেছি। আধা কেজি ওজন সাইজের মাছে দাম প্রতি কেজি দুই হাজার টাকা চায়। পালটা দাম বলার কোনো সুযোগও নেই বলে বিক্রেতা জানিয়ে দিয়েছেন। ইলিশের দাম শুনে পান্তা ইলিশ খাওয়ার সাধ মিটে গেছে।
তিনি বলেন, যারা কোটি কোটিপতিরাই তারাই শুধু ইলিশ কিনতে পরে, আমাদের মতো মধ্য বিত্তের জন্য পান্তা ইলিশ নয়।
মো: রাসেল নামের এক মৎস্য আড়তদার বলেন, প্রতিবছরই নিষিদ্ধ চলাকালীন সময়ে কীর্ত্তনখোলা ও মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ভাবে জাটকা ইলিশ শিকার করছে জেলেরা। এ কারণে দিন দিন ইলিশের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে আরো সতর্ক হলে এবং জাটকা ধরা বন্ধ হলে আগামীতে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে।
তিনি বলেন, এবছর জাটকা ধরা বন্ধে মৎস্য অফিস, নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের জোরালো ভূমিকা ছিল। তাই আগামীতে ইলিশের উৎপাদন বাড়তে পারে।
পোর্ট রোড বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল সিকদার বলেন, পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ইলিশের দাম বেড়েছে। বাজারে যে মাছ পাওয়া যায়, তা দিয়ে স্থানীয় চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। এছাড়া বিশেষ দিনের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা চাহিদার তুলনায় বেশি ইলিশ কিনছেন। এ কারণে ইলিশের দাম অনেকটা বেড়েছে।
তিনি বলেন, শুক্রবার সাগর থেকে ৩টি এবং শনিবার ২টি ট্রলার বোঝাই করে ইলিশ এসেছে বরিশালের মোকামে। এ কারণে ইলিশের ‘আমদানি’ বেশি ছিল। এর আগে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ মন ইলিশের ‘আমদানি’ ছিল এখানে।
এ বিষয়ে হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম বলেন, মেঘনা নদীর অভয়াশ্রমে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত যেকোনো মাছ শিকার নিষিদ্ধ রয়েছে। বর্তমানে নদীতে কম ইলিশ মাছ ধরা পড়ার কারণে দাম অনেকটা বেশি। সামনে জোয়ার আছে এবং বৃষ্টি হলেই জেলেদের জালে ইলিশ পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদী।
এমএস
Ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত