Ad T1

বর্ষবরণের আঁতুড়ঘর যশোরে আদিরূপে ফিরছে আয়োজন

আহসান কবীর, যশোর অফিস
প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ০৬
বাংলা বর্ষবরণের নির্ভেজাল আনন্দ আয়োজনকে আওয়ামী-সিপিবিপন্থিরা রাজনীতিকীকরণ করেছিল। ‘সংস্কৃতির শহর’ যশোরে ১৯৮৫ সালে ‘চারুপীঠ’ নামে একটি সংগঠনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা বর্ষবরণ শুরু হয়।
তার নাম ছিল ‘বর্ষবরণ শোভাযাত্রা’। একপর্যায়ে ১৯৯০ সালে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রায়’ পর্যবসিত হয় । ক্রমে প্রবেশ ঘটানো হয় হিন্দুত্ববাদের বিভিন্ন অনুষঙ্গ। সেখানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন দেবদেবীর বাহনকে গুরুত্বসহকারে উপস্থাপন করা হয়। এমনকি ফ্যাসিবাদী শাসনামলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নেতাদের বিকৃত মোটিফও ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। নির্বাসিত হয় চিরায়ত বাংলার সাংস্কৃতিক উপকরণ।
Jashore-1
বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের প্রতিষ্ঠিত চারুপীঠের কর্ণধার মাহবুব জামাল শামিম প্রথম ১৯৮৫ সালে পহেলা বৈশাখের প্রভাতে বর্ণিল শোভাযাত্রা ও নেচেগেয়ে বর্ষবরণের রেওয়াজ শুরু করেন। ওই উদ্যোগে তার সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন আরেক শিল্পী হীরণ্ময় চন্দ্র। ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার চারুকলা ইনস্টিটিউটে গিয়ে শিল্পী শামিম ও তার বন্ধুদের উদ্যোগে একই ধরনের আয়োজন হয়। দিনে দিনে এই আয়োজন ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।
এবার যশোরে সম্মিলিত আয়োজনে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ হবে। ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করে যাওয়া সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর অবশ্য এতে আপত্তি ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারাও এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং প্রধান সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংগঠকরা বলেছেন, এবারের উৎসব হবে বৃহৎ কলেবরে।
পহেলা বৈশাখে জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত আয়োজনের মধ্যে রয়েছেÑ সকাল সাড়ে ৮টায় কালেক্টরেট চত্বরে জমায়েত এবং ৯টার মধ্যে সবাইকে নিয়ে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ বের করা।
Jashore-2
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম গতকাল শনিবার বিকালে আমার দেশকে বলেন, বর্ষবরণ উৎসবের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে পুলিশ ও গোয়েন্দারা মাঠে কাজ করছে। স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। সামাজিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণে আয়োজন হবে জমজমাট।
বর্ষবরণের নাগরিক আয়োজন যাদের হাতে শুরু হয়েছিল, সেই চারুপীঠ আর্ট রিসার্চ সেন্টারের কর্ণধার শিল্পী মাহবুব জামাল শামিম ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বাদ দিয়ে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ আয়োজনে কোনো সমস্যা দেখছেন না। তার অভিমত, “আমরা যশোরে ১৯৮৫ সালে প্রথম যে আয়োজনটি করেছিলাম, তার নাম ছিল ‘বর্ষবরণ শোভাযাত্রা’। এখন সেই জায়গায় ফিরে যাওয়া হলো।”
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু জানান, যশোরের ৩০টির বেশি সাংস্কৃতিক সংগঠন বর্ষবরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। শেষ সময়ে চলছে দাওয়াতপত্র সরবরাহসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি। নাচ, গান, নাটক ও আবৃত্তির মহড়া চলছে সাড়ম্বরে। নিকট অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এ বছর যশোরে বর্ষবরণে ব্যাপক সাড়া পড়বে বলে তিনি মনে করেন।
এবারকার আয়োজনটি হচ্ছে একটি মুক্ত পরিবেশে। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে প্রথম বাংলা বর্ষবরণের এ আয়োজনে হাজারো মানুষের ঢল নামবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। শোভাযাত্রায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি তুলে ধরার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান সাংস্কৃতিক সংগঠক মামুনুর রশিদ।
Ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত