Ad T1

রপ্তানিতে ভবিষ্যৎ শঙ্কা কাটাতে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি উদ্যোক্তাদের

সৈয়দ মিজানুর রহমান
প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ২৫
ছবি: সংগৃহীত

৯০ দিনের জন্য আমদানিতে নতুন শুল্কহার স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে ‘পাল্টা শুল্ক’ কার্যকর হওয়ার দিনই বেশিরভাগ দেশের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটি স্থগিত করা হলো। ফলে বাংলাদেশের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে আগের মতোই ১০ ভাগ শুল্ক দিয়ে প্রবেশের সুযোগ থাকছে। ৩৭ ভাগ শুল্কারোপ নিয়ে রপ্তানি খাতে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল, তা আপাতত কেটে গেছে।

ট্রাম্প বাংলাদেশসহ কিছু দেশের জন্য শুল্কহার আগের মতোই অপরিবর্তিত রাখার নতুন ঘোষণা দিলেও কানাডা, মেক্সিকো ও চীনকে এ তালিকার বাইরে রেখেছেন। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা এ সময়ে অতিরিক্ত রপ্তানি আদেশও প্রত্যাশা করছেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ৯০ দিনের জন্য নতুন শুল্কহার স্থগিতের অনুরোধে সাড়া দেওয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

দেশের রপ্তানি খাত-সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা বলছেন, বিগত হাসিনা সরকারের আমলে দেশের জ্বালানি খাতকে ধ্বংস করা হয়েছে। কমিশনের লোভে বিদ্যুৎ আমদানির অনুমতি এবং লুটপাটের ব্যবস্থা করতে কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এই খাতে একরকম বিপর্যয় ডেকে এনেছে। বিদ্যুতের মতোই গ্যাস খাতে চলছে নাজুক অবস্থা। দিনের বেশিরভাগ সময়ই গ্যাস থাকে না শিল্প-কারখানায়। এ অবস্থায় ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি রপ্তানি খাতে বড় শঙ্কা তৈরি করেছিল। বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনওয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ আমার দেশকে বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলে শুল্ক-বাণিজ্য যুদ্ধে বাংলাদেশের এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিপর্যয়, গ্যাসের চাপ হ্রাস এবং সরবরাহে অনিয়মের কারণে ছোট ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি ভুগছে। বড় কারখানাগুলো কোনোভাবে চালিয়ে নেওয়া গেলেও ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। তার ওপর শুল্কযুদ্ধ যদি দীর্ঘায়িত হয় বা ফের কার্যকর হয়, তাহলে শিল্প খাত ভবিষ্যতে মারাত্মক চাপে পড়বেÑ এটা নিশ্চিত। এই চাপ মোকাবিলায় শিল্পে জ্বালানির মূল্যহার, নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি নিশ্চিত এবং পোশাক খাতে যাতে কেউ শ্রমিক অসন্তোষ বা অস্থিরতা তৈরি করতে না পারে, সেজন্য উচ্চপর্যায়ের মনিটরিং সেল গঠনের সুপারিশও করেছেন তিনি।

বাংলাদেশের জন্য স্বস্তি, তবে সাময়িক

বাংলাদেশের পণ্যে আগে আরোপ করা হয়েছিল ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক। তা স্থগিত হওয়ায় উদ্যোক্তারা খানিকটা স্বস্তি পেলেও এটিকে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে দেখছেন না তারা।

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও রপ্তানি খাতে অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী ফজলুল হক বলেন, বর্তমানে বড় বড় কারখানাগুলোর জন্য হয়তো সরাসরি কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি আবার শুল্ক কার্যকর হয়, তাহলে নতুন করে উৎপাদন শুরুর বা সম্প্রসারণের সাহস অনেক প্রতিষ্ঠান পাবে না। তিনি আরো বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন যে শুল্ক আরোপ করেছিল, তা যদি বহাল থাকত, তবে অতিরিক্ত পার্শ্ব খরচ বাবদ বাংলাদেশের বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার জোগান দিতে হতো। এখন অন্তত কিছুটা স্বস্তি পাওয়া গেছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এই স্বস্তি ধরে রাখতে হলে আমাদের আন্তর্জাতিক মহলে কূটনৈতিকভাবে কাজ করতে হবে।

জ্বালানি সংকটে উৎপাদনে ছন্দপতন

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে অনিয়ম এখন বড় সমস্যা। শিল্প-কারখানাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস নিশ্চিত না হওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা এই সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নোমান গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তা সিফাত হোসেন ফাহিম আমার দেশকে বলেন, ‘আমাদের মতো বড় কারখানায় বিকল্প ব্যবস্থা বা ব্যাকআপ জেনারেশন থাকলেও ছোট কারখানাগুলোতে সেই সক্ষমতা নেই। তারা নির্ভর করে জাতীয় গ্রিডের ওপর। ফলে লোডশেডিং বা গ্যাসের চাপ কমে গেলে সরাসরি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সে সঙ্গে দেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম ইতোমধ্যেই কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে উৎপাদন খরচ বেড়েছে।

পোশাক খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রাম্পের নতুন ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শিগগিরই বড় বড় অর্ডার আসবে। এসব অর্ডার ধরে রাখতে ছোট-বড় সব কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও পোশাক খাতে যাতে হঠাৎ কোনো অস্থিরতা তৈরি না হয়, সে বিষয়ে সরকারকে কঠোর নজরদারির পরামর্শ দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল আমার দেশকে বলেন, ‘ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই দেশে এক ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা শুরু হয়েছিল অর্ডার বাতিল নিয়ে। বাস্তবে কোনো কারখানার অর্ডার বাতিল হয়নি। কিছু রপ্তানি আদেশ অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল। সেগুলো কদিনের মধ্যেই চালু হবে। সে সঙ্গে আগামী তিন মাস প্রচুরসংখ্যক রপ্তানি আদেশ পাবে বাংলাদেশ।

বিষয়:

রপ্তানি
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত