Ad T1

ইসলামী ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে দুটি বড় ব্যাংক করা হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১০: ২৫
দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে বড় দুটি ব্যাংক গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকগুলোকে পুরোদমে নতুন রূপ দেওয়া হবে। একটি বড় ও অনেকগুলো ছোট ইসলামী ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো সমস্যার মধ্যে আছে। এসব ব্যাংক একীভূত করে বড় দুটি ইসলামী ব্যাংক গড়ে তোলা হবে। ইসলামী ব্যাংক নিয়ে আমাদের প্রপার রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক নেই। তাই ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য আইন ও তদারকব্যবস্থা চালু করা হবে।
গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত দশম বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এসব কথা বলেন। বিআইবিএমের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যায়ের উপাচার্য আব্দুল হান্নান চৌধুরী।
দেশে বর্তমানে ১০টি ইসলামী ব্যাংক রয়েছে। ব্যাংকগুলো হলোÑ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক।
গত সরকারের আমলে ইসলামী ধারার পাঁচটি ব্যাংক ছিল এস আলমের দখলে। এসব ব্যাংক গ্রুপটির দখলে থাকাকালে সীমাহীন অনিয়ম ও লুটপাট হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন সমস্যায় রয়েছে।
গভর্নর বলেন, বিদায়ী সরকারের আমলে ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও নন-ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। পাচার করা অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন এজেন্সি কাজ করছে এবং আমরা এ প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিচ্ছি। এক্ষেত্রে আইনি ও নৈতিক দুই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পাচার হওয়া অর্থ সম্পূর্ণরূপে উদ্ধার না হলেও যারা অর্থ পাচার করেছে তাদের জীবন কঠিন করে ফেলা হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ অর্থ পাচার করতে না পারে, সে ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সহায়তা প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, যেসব ব্যাংকে অনিয়ম হয়েছে, আমানতকারীদের স্বার্থে এসব ব্যাংকের পর্ষদে পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রথমে ১১ ব্যাংক, এরপর আরো দুটি ব্যাংকে পরিবর্তন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপের মুখে ইতোমধ্যে একটি ব্যাংক তাদের কার্যক্রম পরিবর্তন করেছে। সঠিক নিয়মের মধ্যে থেকে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাতে হবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে একদম পরিষ্কার ও লাউড। ব্যাংক কোম্পানি আইনে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। কারা পর্ষদে আসবেন, স্বতন্ত্র পরিচালক কারা হবেন, তার যোগ্যতা নির্ধারণ করা হচ্ছে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংক খাতে সমস্যার পেছনে বাংলাদেশ ব্যাংকও একটি কারণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্তিশালী করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর বিভিন্ন চাপ থাকে, ব্যাংক খাতে দ্বৈত শাসন আছে। স্বায়ত্তশাসন ও তদারক বাড়াতে কাজ চলছে, যাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কার্যকরী হয়ে ওঠে। ব্যাংক খাতের সমস্যা আগেই জানতে পারে। আমরা ব্যাংকগুলোর দৈনন্দিন কাজে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। তবে পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা যাতে তাদের দায়িত্ব পালন করে, তা নিবিড়ভাবে তদারক করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিপোর্টিং পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় করা হবে। সবকিছু অনলাইনের মাধ্যমে জমা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘সমস্যায় পড়া বেশিরভাগ ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে চলছে। এসব ব্যাংকের অবস্থা খুবই খারাপ। এসব ব্যাংক ঠিক করতে কয়েক বছর লেগে যাবে। রাজনীতির পালাবদলে এসব সংস্কারে সমর্থন লাগবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখতে হবে।’
আগামীর ব্যাংকিং খাত নিয়ে গভর্নর বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং সিস্টেম আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী সম্মানজনক খাত হিসেবে গড়ে তোলা হবে। তবে তার জন্য সময় দিতে হবে। একদিনেই তা সম্ভব হবে না।
অনুষ্ঠানে বিআইবিএমের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এই একাডেমিক সম্মেলনের লক্ষ্য ব্যাংকিং খাতের ওপর প্রভাব ফেলছে এমন ক্রমবর্ধমান নিয়মকানুন এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বিশ্লেষণাত্মক অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করা।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান চৌধুরী বলেন, একটি দেশের অর্থনীতির শক্তি তার ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশলতার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। একটি স্থিতিশীল, দক্ষ ও সুনিয়ন্ত্রিত আর্থিকব্যবস্থা কেবল প্রয়োজনীয়তা নয়, এটি টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি। বাংলাদেশের জন্য এই ভিত্তিটি চাপের মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলো উৎসাহজনক এবং আশার আলো দেখিয়েছে। তবে এসব উদ্যোগ আরো বিস্তৃত ও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
Ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত