Ad T1

ইউএপির আলোচনা সভায় ডে. সেলিম জাহান

একটি শ্রেণি রাষ্ট্রের কোষাগারকে নিজেদের সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৯: ২৩

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন রিপোর্ট অফিসের সাবেক পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম জাহান বলেছেন, দেশের ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও কাঙ্ক্ষিত সামগ্রিক উন্নয়ন এখনও অর্জিত হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সমাজ জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বৈষম্যের কারণে একটি শ্রেণি রাষ্ট্রের কোষাগারকে নিজেদের সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করছে।

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ও আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের সংকটে ফেলছে বলেও জানিয়েছেন এ অর্থনীতিবিদ।

তিনি বলেছেন, 'আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে নতুন সংকটের আবির্ভাব হয়েছে। সেই সংকটের নাম ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুল্ক যুদ্ধ যেটা শুরু হয়েছে সেটা ইউক্রেন যুদ্ধের চেয়ে কম অংশে ঘাতকের ভূমিকা পালন করবে না। যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক যুদ্ধ শুরু করলে বিকল্প কী আছে। আমরা কী তা আঞ্চলিক ভাবে কাটিয়ে উঠতে পারবো এই চিন্তাগুলো করা এখনই দরকার।'

রোববার সকালে রাজধানীর গ্রিন রোডে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউপি) মিলনায়তনে বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রা: অর্জন, চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ” শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে কেবল নেতিবাচক হিসেবে দেখলে আমাদের ভুল হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে সুযোগ কতখানি আছে সেটাও দেখতে হবে। নিজের মত করে শুল্ক যুদ্ধে আলাদা অবস্থান করতে চাইলে সেটাও ভুল হবে। এখানে যুথবদ্ধ ভাবে বা যৌথভাবে একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা আমেরিকায় রপ্তানি বাড়াবো। তাদের কাছ থেকে আমদানি বাড়িয়ে ঘাড়তি পূরণ করবো তাতে যুক্তরাষ্ট্র খুশি হবে, আমাদের উপর শুল্ক কমাবে; এটা হবে না।

আরও আমদানি করে বাণিজ্য ঘাটতি মেটাবো। যুক্তরাষ্ট্র কে খুশি করবো, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এগুলো চলবে না। কারণ সে খুব যুক্তির মানুষ নয়। এ সমস্ত যুক্তি চলে যৌক্তিক মানুষের সঙ্গে। যোগ করেন তিনি।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমাদের বিকল্প চিন্তা করতে হবে। অন্যান্য রাষ্ট্র যারা আছে তাদের পণ্যের উপরে আমাদের যে শুল্ক আরোপ আছে তা যদি কমিয়ে আনতে পারি, সেই সব রাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন রকমের বাণিজ্য গড়ে তুলতে পারবো৷ আঞ্চলিক ভাবে বা আঞ্চলিক বলয়ে যে সব দেশ আছে তাদের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলাপ আলোচনা করি। এই বাজারে প্রবেশ করতে পারলে ভাল হবে। উচ্চ শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের পণ্যের দাম বাড়বে, চাহিদা কমে যাবে। সেখানে নতুন সুযোগ আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদে পণ্যের বৈচিত্র্য করতে হবে।

তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হলে কিছু সুযোগ আমরা হারাবো।বিনাশুল্কে বা কম শুল্কে পণ্য পাঠাতে পারবো না। বৈশ্বিক ঋণের জন্য প্রতিযোগিতা করতে হবে। পণ্যরপ্তানিতে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হব। এইগুলোর জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতি কী প্রস্তুত। এ নিয়ে আমাদের চিন্তা ভাবনা আছে কী না।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এক সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। প্রবৃদ্ধির হার ৬.৪ শতাংশ বা ৫.৯ শতাংশ—এই সামান্য পার্থক্য বড় কোনো বিষয় নয়; গুরুত্বপূর্ণ হলো এই প্রবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনে কতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সাময়িকভাবে কমলেও তা আবার বেড়েছে।

ড. জাহান আরও বলেন, অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য স্লথতা দেখা দিয়েছে। প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেলে অর্জিত উন্নয়নও ঝুঁকির মুখে পড়বে।

সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছু তাৎক্ষণিক, স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার অপরিহার্য। বিশেষ করে, যখন মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়, তখন তাৎক্ষণিক সংস্কারের মাধ্যমে মানুষের জীবনমান উন্নত করার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউএপির ট্রাস্টি ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, কাইয়ুম রেজা চৌধুরী, স্কুল অব বিজনেসের ডিন অধ্যাপক ড. এম. এ. বাকি খালিলি, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রধান জনাব সারওয়ার আর. চৌধুরী, অনুষদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিরা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ডিস্টিংগুইশড লেকচার সিরিজের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নাজমা বেগম স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন এবং শিক্ষার্থীদের একাডেমিক উন্নয়নে এ ধরনের অনুষ্ঠানের তাৎপর্য তুলে ধরেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত