Ad T1

রুপালি পর্দায় ফিলিস্তিন

বিনোদন রিপোর্টার
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১১: ৫৪
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১৬: ২০
ফিলিস্তিনি ভূমি দখল করে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ অঞ্চলের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন বলে কিছু নেই। ভূমি থেকে উচ্ছেদ, স্বজনের লাশ তাদের নিত্যকার ঘটনা। তারপরও জীবন থেমে থাকে না। ফিলিস্তিনি মানুষের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে যেমন সিনেমা ডকুফিল্ম নির্মিত হয়েছে, তেমনি এই অঞ্চলের মানুষও নিজেদের দুঃখ ফুটিয়ে তুলেছেন রুপালি পর্দায়। তার অনেক সিনেমা আবার বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে। এ বছর অস্কার জেতার তালিকায়ও আছে ‘নো আদার ল্যান্ড’ নামে একটি ফিলিস্তিনি ডকুফিল্ম।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর হামলার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের লড়াই ও নিজ বাড়িঘর সুরক্ষিত রাখার প্রচেষ্টার ঘটনাগুলো নিয়ে নির্মিত ‘নো আদার ল্যান্ড’ এ বছর সেরা তথ্যচিত্র বিভাগে অস্কার জিতেছে। বৈরী দুই রাষ্ট্রের দুই যুবক এটি নির্মাণ করেছেন।
২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ‘নো আদার ল্যান্ড’ তৈরি করা হয়। এতে মানবাধিকারকর্মী বাসেল আদরাকে অনুসরণ করা হয়। তিনি গ্রেপ্তারের ঝুঁকি নিয়ে ইসরাইল অধিকৃত পশ্চিম তীরের দক্ষিণে নিজ এলাকা মাসাফের ইয়াত্তার ধ্বংসযজ্ঞ ক্যামেরায় ধারণ করেন। ইসরাইলি সেনারা ওই জায়গাটি ধ্বংস করে সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করে।
তথ্যচিত্রে দেখানো হয়, শুরুতে আদরার কথা কেউ শুনছেন না। পরে এক ইহুদি ইসরাইলি সাংবাদিকের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। সাংবাদিক ইউভাল আবরাহাম মানবাধিকারকর্মী বাসেল আদরার তথ্যচিত্রকে আরো গ্রহণযোগ্যতা এনে দিতে কাজ করেন। দুজন মিলেই শেষ করেন তথ্যচিত্রটির নির্মাণকাজ।
Gaza
যুক্তরাষ্ট্রে এই তথ্যচিত্র দেখাতে পরিবেশক পেতে সংকটে পড়েন নির্মাতারা। অবশেষে গত নভেম্বরে লিঙ্কন সেন্টারে এক সপ্তাহ এটি দেখানোর অনুমতি পান আদরা-আবরাহাম। সেই প্রদর্শনী না করতে পারলে তথ্যচিত্রটি অস্কার পাওয়ার জন্য বিবেচিত হতো না। মূলত আদরার নিজস্ব আর্কাইভের ক্যামকর্ডার ফুটেজের ভিত্তিতে এটি তৈরি করা হয়েছে। তিনি ক্যামেরায় ইসরাইলি সেনাদের বুলডোজার দিয়ে তার গ্রামের স্কুলটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য ধারণ করেন। এ ছাড়া খাওয়ার পানির কুয়োগুলো সিমেন্ট দিয়ে ভরে দেওয়ার দৃশ্যও ধরা পড়ে ক্যামেরায়। অন্য ফুটেজে দেখা যায় এক ইসরাইলি সেনা এক ফিলিস্তিনি ব্যক্তিকে গুলি করছেন। তার অপরাধ, ইসরাইলিরা তার বাড়ি ধ্বংস করে দেওয়ায় তিনি প্রতিবাদ করেছিলেন। গুলিতে আহত ব্যক্তি পরে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন। মায়ের সঙ্গে গুহায় আশ্রয় নেন তিনি। আহত ছেলের যত্ন নিতে হিমশিম খান। পরে এলাকার অন্য ফিলিস্তিনিরা এক হয়ে তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন।
এ ছাড়া ‘প্যারাডাইস নাউ’ নামে একটি সিনেমা নির্মাণ করেন হানি আবু আসাদ। সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০০৫ সালে। এটি একটি সাইকোলজিক্যাল ড্রামা, যা আবর্তিত হয়েছে দুই ফিলিস্তিনি নাগরিক সাইদ ও খালেদকে ঘিরে। তারা ইসরাইলে একটি আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করে। তারা ধার্মিক না, তারা রাজনৈতিক কর্মীও না। তারা দুই বন্ধু নিজেদের শেষ দিনগুলো একসঙ্গে যাপন করছিল। এর মধ্য দিয়েই বা তাদের গল্পের মধ্য দিয়েই সিনেমায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ফিলিস্তিনের অবস্থা।
গোল্ডেন গ্লোবে সেরা বিদেশি সিনেমা বিভাগে পুরস্কার পেয়েছিল। এ ছাড়া প্রথম ফিলিস্তিনি সিনেমা হিসেবে এটি মনোনীত হয়েছিল একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে। একই সময়ে সিনেমাসংশ্লিষ্ট বেশকিছু গ্রুপ প্যারাডাইস নাউকে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড থেকে বাদ দেওয়ার জন্যও আন্দোলন করেছিল।
এরি ফোলম্যান ২০০৮ সালে নির্মাণ করেন ‘ওয়াল্টজ ইউথ বশির’ নামের একটি সিনেমা। লাইভ অ্যাকশন না, সিনেমাটি অ্যানিমেটেড। মূলত ১৯৮২ সালের লেবানন যুদ্ধের এক সেনাকে নিয়ে এগোয় গল্পটি। সিনেমার অ্যানিমেশন করেছিলেন ডেভিড পোলনস্কি। তার অ্যানিমেশন ও ফোলম্যানের নির্মাণের বিষয়কে আরো স্পষ্ট করে তুলেছিল দর্শকের কাছে। ফলে ওয়াল্টজ উইথ বশির গোল্ডেন গ্লোবে সেরা অ্যানিমেটেড সিনেমার পুরস্কার পাওয়ার পাশাপাশি অস্কারেও মনোনীত হয়েছিল।
২০০৮ সালে ‘লেমন ট্রি’ নামে একটি সিনেমা নির্মাণ করেছেন এরান রিকলিস। সিনেমাটিতে সালমার গল্প বলা হয়েছে। তিনি ফিলিস্তিনের একটি গ্রামের বাসিন্দা। লেবু বাগানের ওপর নির্ভর করেই জীবনধারণ করেন। কিন্তু একটা সময় ইসরাইলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিছু উদ্যোগ নেন। নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার নামে কিছু সীমানা তৈরির চেষ্টা করে, যার কারণে ধ্বংসের মুখে পড়ে সালমার লেবু বাগান। সালমা তা মানতে চায় না। সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যায় সে। লেমন ট্রি মূলত একটি মানবিক গল্প। একটি ছোট পরিসরের গল্প থেকে বড় পরিসরের বাস্তবতা বোঝানোর চেষ্টা দেখা যায় এ সিনেমায়।
ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে। এর মধ্যে একটা সময় ইসরাইলি সেনাবাহিনী শুরু করে হত্যার মহোৎসব। কিন্তু নানা সময় তাদের এসব কাজের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন হয়েছে। সে গল্প নিয়েই ‘ফাইভ ব্রোকের ক্যামেরাস’ নামে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন গাই দাভিদি ও এমাদ বার্নাট। পশ্চিম তীরের বহু ঘর, পরিবারের ওপর ঘটে যাওয়া অত্যাচার ও নিপীড়নের চিত্র এ দুই নির্মাতা তুলে রেখেছিলেন তাদের ক্যামেরায়। প্রায় পাঁচ বছর ধরে তারা কাজটি করেছেন। তথ্যচিত্রকে বলা হচ্ছে রাজনৈতিক ও সিনেম্যাটিক অ্যাক্টিভিজমের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। নির্মাতারা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, যে কোনো সময় তাদের ঘরের দরজায় ধাক্কা পড়তে পারে এবং সব শেষ হয়ে যেতে পারে জেনেও তারা কাজ করে গেছেন।
২০১২ মুক্তি পাওয়া ‘দ্য গেটকিপারস’ সিনেমাটিকে ইসরাইলি সিনেমা বলা হলেও বস্তুতের পেছনে কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রযোজনা সংস্থার হাত আছে। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন ইসরাইলি নির্মাতা দোরর মোরে। কম্পিউটার অ্যানিমেশন ও বেশকিছু দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়ে তিনি সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন। এ ছাড়া আছে আর্কাইভের বেশকিছু ফুটেজ। ইসরাইলি সরকার ছাড়াও যে তাদের এজেন্সি শিন বেট বেশির ভাগ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে এ সিনেমা সেদিকে নজর দেয়। সিনেমায় যুদ্ধ নিয়ে বেশকিছু চিত্র আছে। নির্মাতা দ্য ফগ অব ওয়ার থেকে অনুপ্রাণিত ছিলেন বলে সিনেমা বিশ্লেষকরা মনে করেন।
এক ধারার নাচের নাম হলেও স্যামুয়েল মাওজের ‘ফক্সট্রট’। এই নামে একটি ফ্যামিলি ট্র্যাজেডি নির্মিত হয়। নির্মাতা এ সিনেমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে। সিনেমাটি পেয়েছিল সিলভার লায়ন। এ সিনেমায় তিন ধাপ বা ভাগে গল্পটি বলা হয়েছে। শুরুর গল্পে সেনারা এক মধ্যবয়সি দম্পতির বাড়িতে এসে জানায় তাদের ছেলে ডিউটিরত অবস্থায় মারা গেছে। এরপর সীমান্তে দায়িত্বরত সেনাদের জীবনের গল্প দেখানো হয়। সেখান থেকে গল্প আবার চলে যায় ওই দম্পতির কাছে। সিনেমাটিতে মূলত সেনাদের অবস্থা দেখানো হয়েছে। সেনারা সরল মনে সীমান্ত ও যুদ্ধে গিয়ে রাজনীতির বলি কীভাবে হন সে কথা বলে সিনেমাটি। সিনেমা বিশ্লেষকরা বলতে চার মাওজের কাজটি মানবিকতার দিক তুলে ধরতে চেয়েছে।
‘গাজা মন আমোর’ নামের জার্মান সিনেমাটির পরিচালক আরব নাসর ও তার্জান নাসর। সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া হয়েছিল জার্মান, পর্তুগিজ ও আরবি ভাষায়। এটি মূলত ৬০ বছর বয়সি জেলের গল্প, যে কখনো তার পছন্দের নারীকে ভালোবাসার কথা বলতে পারেনি। কিন্তু একসময় জালে ওঠা গ্রিক দেবতা অ্যাপলোর মূর্তি দেখে তার মনে হয় ভাগ্যদেবতা এবার প্রসন্ন হলেন। কিন্তু দেবতা প্রসন্ন হলেও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ মূর্তির খোঁজ পেলে শুরু হয় নতুন সমস্যা। সিনেমার এ গল্পের মধ্য দিয়ে গাজার চলমান অস্থিরতা, সামাজিক সংকট ইত্যাদি তুলে ধরেছেন নির্মাতারা।
Ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত