Ad T1

চীনা এআই সুনামিতে লণ্ডভণ্ড বিশ্ব প্রযুক্তি

আহমেদ আরিফ
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩: ০২

অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় ও বিস্ময়কর এআই সুনামিতে লণ্ডভণ্ড বিশ্ব প্রযুক্তির বাজার। বদলে গেছে যুগ যুগ ধরে চলে আসা বিশ্ব পুঁজিবাজারের চিরায়ত মার্কিন প্রভাবের চিত্র। চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর একের পর এক নতুন এআই মডেল আনার প্রতিযোগিতায় দিশাহারা Broadcom, Microsoft, Alphabet ও NVIDIA-এর মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলো। চ্যালেঞ্জের মুখে আমেরিকার সবল অর্থনীতি। হুমকির মুখে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে একচ্ছত্র আধিপত্য। বিশ্ব প্রযুক্তির বাজারে চলমান সুনামির শুরুটা হয় ছয় মিলিয়ন ডলারেরও কম খরচে তৈরি পুচকে চীনা কোম্পানি ডিপসিকের মাধ্যমে। এরপর রয়েছে মুনশটের ‘কিমি’ ও চীনের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবা গ্রুপের ‘কুয়েন’।

ডিপসিকের উত্থানকে মার্কিন প্রযুক্তি শিল্পের জন্য ‘সতর্কবার্তা’ বলে মন্তব্য করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সতর্কবার্তায় ঘি ঢেলেছে চীনের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবা, কারণ বিশ্বজুড়ে বেশ জনপ্রিয় আলিবাবা। মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোয় আলিবাবা গ্রুপের ব্যবসায়িক সম্পর্ক বেশ ভালো। তাই এআই প্রযুক্তির ব্যবসায় আলিবাবার ভাগ বসানো যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য মোটেই স্বস্তিকর নয়। চ্যাটজিপিটি, মাইক্রোসফট, মেটা, এনভিডিয়া, সেফোর্স ও মাইক্রোসফটের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা ডিপসিকের সুনামি শুরু হওয়ার পর এআই প্রযুক্তিতে চীনের উত্থানে ভূয়সী প্রশংসা করে মেনে নিয়েছিলেন আগামী দিনের কঠিন প্রতিযোগিতার বিষয়টি। তবে সে কঠিন প্রতিযোগিতা যে এত দ্রুত বিস্তার লাভ করবে, তা তারা কল্পনা করতে পেরেছিলেন কি?

চীনা কোম্পানিগুলোর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই-চালিত চ্যাটবটগুলো নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনার অন্যতম কারণ হচ্ছে, কম খরচের দক্ষ এআই মডেল প্রযুক্তি, যা এআই খাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এআই প্রসেসর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বৃহৎ ডেটা সেন্টার নির্মাণকারীদের মুনাফা কমে যাওয়ার সব রকমের আলামতই দৃশ্যমান, যাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো। এআই খাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে এআই প্রযুক্তিতে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থেকে বিনিয়োগ উঠিয়ে আনাই এখন অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

চীনের উদ্ভাবনী শক্তিকে দমিয়ে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর অন্যতম অস্ত্র হচ্ছে ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষায় উদ্বেগ। অতীতের মতোই ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষার দোহাই দিয়ে চীনকে বিশ্ব প্রযুক্তির বাজারে কোণঠাসা করার সব রকমের চেষ্টাই শুরু হয়েছে। ডিপসিকের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো ডিপসিককে টার্গেট করেই রুখে দিতে চাইছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে চীনের অগ্রযাত্রা। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী ও নাসা নিষিদ্ধ করেছে ডিপসিক। ইতালির অ্যাপ স্টোর ও গুগল প্লে স্টোর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ডিপসিকের চ্যাটবট অ্যাপ। ডিপসিকের তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি খতিয়ে দেখার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ শুরু করেছে নেদারল্যান্ডসের গোপনীয়তা পর্যবেক্ষণ সংস্থা এপি। আয়ারল্যান্ড ও ফ্রান্সও জানতে চেয়েছে ডিপসিকের তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি।

ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষায় উদ্বেগের অস্ত্রটি কাজ না করলে চীনকে রুখতে নতুন বিলও এনে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করলে ২০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ ডলার পর্যন্ত জরিমানার আইনের দিকেই যেতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।

Ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত