Ad T1

বৈশাখী সাজে সোনামণিরা

তনিমা রহমান
প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৯: ১৮
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৯: ৩০
বৈশাখ মানেই শিশুদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। হই-হই রই-রই আনন্দ। একসময় পহেলা বৈশাখ মানেই ছিল বৈশাখী মেলা। সবুজ খোলা মাঠে থরে থরে সাজানো বাতাসা, কদমা, মুড়ালি, গজা, বাদাম টানা, হাওয়াই মিঠাই, মিছরির তৈরি হাতি-ঘোড়া ও বিন্নি। এ ছাড়া মাটির পুতুল, নানারকম খেলনা, কাচের চুড়ি, রঙিন ফিতা, বায়োস্কোপ আর নাগরদোলা। মা-বাবার হাত ধরে ছোট্ট শিশুর মেলাজুড়ে ছোটাছুটি। মেলা থেকে ফেরার পথে একহাতে নানারকম খাবার জিনিস আর অন্য হাতে রঙবেরঙয়ের খেলনা শোভা পেত। গ্রামেগঞ্জে টিকে থাকলেও এসব মেলা শহুরে জীবন থেকে এখন বলতে গেলে হারিয়ে যাচ্ছে। এই বৈশাখী মেলা সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে শিশুদের, আর বায়নাও তাদেরই সবচেয়ে বেশি।
বাংলা নববর্ষের বিশেষ এই দিনটিতে বাড়ির ছোট সদস্যটিরও চাই রঙিন পোশাক। বৈশাখে শিশুকে কী পরাবেন, তা নির্ভর করবে আবহাওয়া ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর।
boisakh_2
এ প্রসঙ্গে কয়েকজন মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যেহেতু এটা গরমের দিন বা গ্রীষ্ম ঋতুর শুরু, তাই তারা সন্তানের আরামকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন।
মেয়েদের ক্ষেত্রে এই পোশাক হতে পারে শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ। ছেলেশিশুদের ক্ষেত্রে পাঞ্জাবি, পায়জামা, ধুতি, টি-শার্ট বা ফতুয়া। চাইলে লুঙ্গিও পরাতে পারেন। এখন ফ্যাশনে সবাই চায় চলতি ধারা অনুসরণ করতে। তবে বড়দের ফ্যাশনে যত দ্রুত পরিবর্তন আসে, ছোটদের ক্ষেত্রে ততটা নয়। বড়দের পোশাকের কিছু কিছু ধারাই বরং ঢুকে পড়ে শিশুদের পোশাকে। তবে শিশুদের পোশাকের ‘ট্রেন্ড সেটার’ মূলত মায়েরা। মা যেমন পোশাক পরাতে চান, শিশু তেমন পোশাকই পরবে। একজন মা-ই বোঝেন তার শিশুকে কেমন পোশাক পরলে মানাবে, কোনটাতে তারা আরাম পাবে।
এবার যেহেতু প্রচণ্ড গরম পড়েছে, তাই সুতি কাপড়েই শিশুদের সব পোশাক নকশা করা হয়েছে। মূল রঙ রাখা হয়েছে লাল ও সাদা। কোনো কোনো পোশাকে সামান্য সবুজ, হলুদ কিংবা নীলের ছোঁয়াও দেখা যাচ্ছে।
বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস ঘুরে দেখা গেল, ছেলেদের পাঞ্জাবিগুলোও স্ক্রিনপ্রিন্টের ওপর খুব ছিমছাম নকশায় তৈরি। ছেলেদের পোশাকে ব্লক ও ঐতিহ্যবাহী নানা নকশা উঠে এসেছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সালোয়ার-কামিজ ও ফ্রক কাটিং পোশাক।
কে ক্রাফট-এর ফ্যাশন হাউসের কর্ণধার জানান, পরিবেশ ও আবহাওয়ার সঙ্গে আরামদায়ক বিষয়টি মাথায় রেখে ফেব্রিক হিসেবে নেওয়া হয়েছে কটন, জ্যাকার্ড কটন, সুইস কটন, হ্যান্ডলুম কটন, লিনেন, জর্জেট, সিল্ক, জয়শ্রী সিল্ক, হাফ সিল্ক ও অরগাঞ্জা। লাল সাদার চিরাচরিত সমন্বয়, সঙ্গে নানা রঙের ছোঁয়ায় পোশাকগুলো পেয়েছে বর্ণিল রূপ।
কে ক্র্যাফটের বৈশাখী আয়োজনে শিশুদের জন্য রয়েছে আরামদায়ক, সময়োপযোগী ও উৎসবধর্মী পোশাক।
মেয়ে শিশুদের জন্য থাকছে—সালওয়ার-কামিজ, ফ্রক, কুর্তি, টপস, লেহেঙ্গা সেট, টপস সেট ও স্কার্ট। ছোট ছেলেদের জন্য নানা রঙের পাঞ্জাবি, হাফহাতা শার্ট, ফতুয়া ও টি-শার্ট। প্যাটার্নে ভিন্নতা ও রঙে উৎসবের আমেজ বহন করবে। এ ছাড়া বোন অথবা মায়ের সঙ্গে ছোট মেয়েদের মিলিয়ে পরার জন্য সালওয়ার-কামিজ ও কুর্তি এবং বাবা ও ছেলের জন্য পাঞ্জাবি ও শার্ট থাকবে বরাবরের মতো।
ডিজাইনারদের মতে, শিশুদের একটু ঢিলেঢালা পোশাক পরালেই ভালো, গরমে তা হলে হাঁসফাঁস লাগবে না। আর শিশুদের জন্য গরমে সুতি কাপড়ের ঢিলেঢালা পোশাকই উত্তম।
রঙ বাংলাদেশ-এর কর্ণধার সৌমিক দাস জানান, বাঙালির এই অন্যতম উৎসবের আবহকে তুলে ধরতে আমরা এই বৈশাখের ডিজাইনে দুটি বিশেষ থিম নিয়ে কাজ করেছি। একটি হলো ‘কাঠের পুতুল’। কাঠের পুতুল বাঙালির লোকশিল্প ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অনন্য নিদর্শন হিসেবে সমাদৃত। এ ছাড়া বৈচিত্র্যের কথা মাথায় রেখে ‘কাঠের পুতুল’-এর নকশার সঙ্গে ‘মুখোশ’-এর থিমকেও ডিজাইনে নিয়ে এসেছি আমরা।
বৈশাখের উৎসবকে রাঙাতে তাদের সব পণ্যে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে লাল, মেরুন ও সাদার সঙ্গে বিভিন্ন হালকা অথচ উজ্জ্বল রঙের নানারকম শেড। গরমের কথা বিবেচনায় রেখে কাপড়ে আরামের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বৈশাখের পরিকল্পনা নিয়ে কথা হচ্ছিল চাকরিজীবী মা রোকসানার সঙ্গে। তিনি ছেলেকে তার বাবার পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে সাদার মধ্যে ব্লক করা সুতি কাপড়ের তৈরি পাঞ্জাবি পরাবেন।
বৈশাখের পরিকল্পনা নিয়ে কথা হচ্ছিল চাকরিজীবী মা শারমিনার সঙ্গে। তিনি জানালেন, মেয়ে জারিফা আর তিনি এবার ম্যাচিং শাড়ি পরবেন। পহেলা বৈশাখের ভোরেই তারা পরিবারসহ ঘুরতে বেরিয়ে যাবেন। গরমে শিশুর যেন অস্বস্তি না লাগে, এজন্য তাকে লাল আর সাদার মিশেলে সুতির রেডিমেড শাড়িই পরাবেন। এটি ছোটরা সহজে বহন করতে পারে, পরাতেও ঝামেলা নেই। মেয়েকে রোকসানা সাজাবেন বেলি ফুল দিয়ে। কপালে থাকবে টিপ, পায়ে আলতা ও নূপূর আর হাতে চুড়ি। হয়ে গেল শিশুদের সুন্দর সাজ।
Ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত