Ad T1

‘যে রক্ত ঝরেছে, তা বৃথা যাবে না’

রায়হান আহমেদ তামীম
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬: ২৫
নূপুর আক্তার নোভা, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির পলিটিক্যাল সায়েন্সের শিক্ষার্থী। ১৫ জুলাই যখন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ন্যায্য দাবিতে রাস্তায় নামেন, তখন তিনিও সেই স্রোতে শামিল হন। যে সরকার একের পর এক শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছিল, রক্ত ঝরাচ্ছিল, সেই সরকারের বিরুদ্ধে তিনি রুখে দাঁড়ানোর শপথ নেন।
আশুলিয়া-বেড়িবাঁধের রাস্তায় যখন আন্দোলন জোরালো হতে শুরু করে, নোভা তখন আশপাশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করেন, তাদেরও আন্দোলনের অংশ হতে বলেন। ১৮ জুলাই আশুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে শিক্ষার্থীদের জড়ো করে অবরোধ গড়ে তোলেন। পুলিশের বাধা, স্থানীয় চেয়ারম্যানের হুমকি কিছুই তাকে পিছু হটাতে পারেনি। ছাত্রলীগের ক্যাডাররা পেছন থেকে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তবু তিনি দমে যাননি।
আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হলে, পুলিশ তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোঁজ নেওয়া শুরু করে, এমনকি বাড়িতেও যায়। তখন তাকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য আত্মগোপনে চলে যেতে হয়। নোভা একের পর এক লাশ পড়তে দেখেছেন, পুলিশের নির্মম লাঠিচার্জ সহ্য করেছেন, ছাত্রলীগের তাণ্ডব দেখেছেন, কিন্তু কখনো পিছু হটেননি।
৩ আগস্ট, উত্তরা বিএনএসে যখন শিক্ষার্থীরা একত্র হওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন, তখন তিনি ছিলেন প্রথম সারিতে। এক ভাইয়ের সঙ্গে সেখানে পৌঁছানোর পর ছাত্রলীগের মুখোমুখি হয়ে পড়েন। কোনোমতে নিজেদের রক্ষা করে পালাতে হয় তাকে। অন্যদিকে আশুলিয়া থেকে শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলনে আসছিলেন, তারা স্লুইসগেট পর্যন্ত আসার পর আর এগোতে পারছিলেন না। নোভা তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য ঝুঁকি নেন। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে, ছাত্রলীগের তাণ্ডব এড়িয়ে তিনি তাদের একত্র করেন এবং শহীদ মিনারের দিকে রওনা হন।
শহীদ মিনার থেকে ফেরার সময়ও বিপদ পিছু ছাড়েনি। মিরপুরে ছাত্রলীগের ধাওয়া খেতে হয়। তবু লড়াই থামাননি, কণ্ঠ চেপে রাখেননি।
৫ আগস্ট, ভোর। কারফিউ চলছে। নোভার মা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন, কাঁদলেন, মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে বিদায় জানালেন। তখনো হয়তো জানতেন না, এদিনই তার মেয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসবে।
সকালে মিরপুর-২-এ ছাত্রলীগের একটি দল তাকে আটকে ফেলে। হাতে বড় রামদা ও হকিস্টিক। চোখে খুনের ঝিলিক। প্রশ্ন ‘তুই শিক্ষার্থী? কোথায় যাচ্ছিস?’
একসময় সাংবাদিকতা করতেন নোভা। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সাংবাদিকতার আইডি কার্ড দেখান। এটিই হয়তো সেদিন তাকে রক্ষা করেছিল। তারা ছেড়ে দেয়। এরপর তিনি পৌঁছে যান আন্দোলনের মূল দলে।
তার শিক্ষকরা তাকে কখনো সমর্থন করেননি। তবে আশুলিয়ার স্কুলে তার এক শিক্ষক, আবদুল হামিদ, তাকে একদিন ক্লান্ত অবস্থায় আশ্রয় দেন। সেটাই হয়তো তাকে বড় ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘আমি এমন একটা দেশ চাই, যেখানে কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের কণ্ঠ রোধ করতে পারবে না। জনগণের ভোটাধিকার থাকবে, বাকস্বাধীনতা থাকবে। শাসকরা সেবক হবে, শোষক নয়। যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তারা জনগণের অধিকার নিশ্চিত করবে, বিপদে পাশে থাকবে, জনগণের মতামতকে শ্রদ্ধা করবে।’
তার বিশ্বাস, এই আন্দোলন থেমে থাকবে না। যে রক্ত ঝরেছে, তা বৃথা যাবে না। নতুন সূর্য উঠবেই।
Ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত