Ad T1

তুলির আঁচড়ে স্বপ্ন আঁকেন আলপনা

বিউটি হাসু
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০: ১৩
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ২৩: ২৬

ছবি কথা বলে। হাজার শব্দের চেয়েও একটি ছবি শক্তিশালী। একজন শিল্পী রঙতুলি দিয়েই মনের অব্যক্ত কথা, আনন্দ-বেদনা, দেশপ্রেম, ভালোবাসা-ঘৃণা সব প্রকাশ করেন। তুলির আঁচড়েই শিল্পী তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও ঘটনা জীবন্ত করে তোলেন। শিল্পীর বড় হাতিয়ার রঙ-তুলি। শিল্পী স্বপ্ন আঁকেন রঙ-তুলি দিয়ে; জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলেন এবং গল্পও বলেন রঙ-তুলি দিয়ে। রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা ও প্রতিবাদের ভাষাও প্রকাশ করেন রঙ-তুলি দিয়েই।

এমনই একজন গুণী শিল্পী যার একটি ছবি হাজার শব্দের চেয়েও মূল্যবান। সুদূর জার্মানির বার্লিন থেকেও যিনি নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশকে নিজের মধ্যে ধারণ করেন, লালন করেন, দেশকে নিয়ে ভাবেন। যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে দেশপ্রেম। তাইতো তার তুলির আঁচড়ে ফুটে ওঠে দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট, অসংগতি ও গভীর দেশপ্রেম। বলছিলাম আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী মুর্শিদা আরজু আল্পনার কথা, যিনি সুদূর জার্মানি থেকে তার শিল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাম রোশন করে চলেছেন। তার শিল্পকর্মের খ্যাতি ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিস্তৃত করে নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে উপস্থাপন করছেন। সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতায় তার শৈল্পিক কর্মের কিছু কথা তুলে ধরেছেন বিউটি হাসু

Alphona-2

জন্মগ্রহণ ও পরিবার : জন্ম ঢাকায়। মনে-প্রাণে সংস্কৃতিকে ধারণ করেন এমন পরিবারে তার জন্ম। সাত বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে তার স্থান পঞ্চম। ছয় ভাইবোন ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ও মাস্টার্স করেন।

পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই বাংলাদেশ টেলিভিশন ও ঢাকা বেতার কেন্দ্রের নিবন্ধিত সংগীতশিল্পী ছিলেন। এখনো যারা গান পরিবেশন করে আসছেন ফেরদৌসি বেগম। অপর দুই বোন প্রফেসর ড. আফরোজা ইয়াসমীন ও ড. ইশরাত জাহান।

ছবি আঁকা শুরু এবং অনুপ্রেরণা : শুরু ১৯৭৭ সালে ঢাকা চারুকলা ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্টসে। তবে এ চর্চা শুরু বহু আগেই। তিনি বলেন, চার-পাঁচ বছর বয়সে পুকুরধারের আঠালো মাটি সংগ্রহ করতাম। সেই মাটি দিয়ে ঘরে ব্যবহার করা নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য উপাদানগুলো ক্ষুদ্র হাতের অঙ্গুলি দিয়ে বিভিন্ন রূপ দিতাম। আর কাগজ পেলেই পারিপার্শ্বিকতা পর্যবেক্ষণ করে নানা ন্যারেটিভ বিষয়ে ড্রয়িং করতাম। সেখানে হাস্যরসও ফুটে উঠতো।

বড় ভাই মাহমুদ ইমরানের ড্রয়িংয়ের হাত ছিল নিখুঁত ও পরিপক্ব। তার আঁকা দেখে ছয়-সাত বছর থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি। তবে স্কুলে ব্যবহার্য স্লেটে আমার ড্রয়িং প্র্যাকটিস হতো।

পরবর্তী সময়ে চারুকলায় শিক্ষা চলাকালে দুর্ভিক্ষের ওপর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের কালিকলমের ড্রয়িং আমাকে অনুপ্রাণিত করে। এসএম সুলতানের আঁকা ছবিও আমাকে বেশ অনুপ্রাণিত করে। কারণ তার ছবির বিষয়বস্তু বাংলার খেটে খাওয়া মানুষের খুব কাছাকাছি ছিল। এ ছাড়া শিল্পী রশীদ চৌধুরীর ট্যাপেস্ট্রি, মো. কিবরিয়ার পেইন্টিং, প্রিন্ট শফিউদ্দীন আহমেদের প্রিন্ট, শিল্পী আবদুল বাসেতের আঁকা (তেলচিত্র) আমাকে আকৃষ্ট করেছে।

পাশ্চাত্যের রেনেসাঁ যুগের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি থেকে শুরু করে কিউবিজমের জনক পাবলো পিকাসো ও জর্জ ব্রাক থেকে শুরু করে সমসাময়িককালের অনেক শিল্পীই আমাকে অনুপ্রাণিত করেন।

Alphona-4

লেখাপড়া ও চাকরিজীবন : ঢাকা চারুকলা ইনস্টিটিউটে ড্রয়িং ও পেইন্টিংয়ে ব্যাচেলর্স ডিগ্রি নেওয়া হয়। এরপর ভারতে বৃত্তি নিয়ে শান্তিনিকেতনের কলাভবন থেকে একই বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি নিই ১৯৮৬-৮৮ সালে। দুটোতেই ফার্স্ট ক্লাস পাই। ঢাকায় ফিরে ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্বেরিয়ামে ইলাস্ট্রেটর/আর্টিস্ট হিসেবে চাকরিতে যোগ দেই। ১৯৯২ সালে ঢাকা চারুকলা ইনস্টিটিউটে লেকচারার পদে যোগদান করি।

১৯৯৩ সালে জার্মানির DAAD-এর (জার্মান একাডেমিক এক্সচেঞ্জ প্রোগাম) বৃত্তি নিয়ে বার্লিনে আসা হয়। আড়াই বছরের বৃত্তি শেষে বার্লিনের বিখ্যাত HDK, Hochschule der Künste থেকে এক্সপেরিমেন্টাল ড্রয়িং ও পেইন্টিং থেকে যথাক্রমে বিশেষ সাফল্যসহ ব্যাচেলর ও মাস্টার অব ফাইন আর্টসে ডিগ্রি অর্জন করি।

দেশ-বিদেশ মিলে ছবি প্রদর্শনী : দেশ-বিদেশে আন্তর্জাতিক শিল্প প্রদর্শনীতে প্রায় ১৫০-১৬০টি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন।

আন্তর্জাতিক ছবি প্রদর্শনী : এই শিল্পী প্রায় ২০-২৫টি দেশে আন্তর্জাতিক ছবি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন।

Buringa

শিল্পকর্ম :

বুড়িগঙ্গা নদী, রামপাল, কাঁটাতারের পাশে বিষণ্ণ মেয়ে দাঁড়ানো: শিক্ষাজীবনের শুরুতে বুড়িগঙ্গা নদীর এপার-ওপারে স্কেচ ও জলরঙে ছবি আঁকার অনুশীলনে ভোর থেকে দিনের বিভিন্ন সময়ে যাওয়া-আসা ছিল। সোয়ারীঘাটের চিত্র ও বুড়িগঙ্গায় ভেসে যাওয়া বিচিত্র রঙের পালতোলা নৌকার মনোরম দৃশ্য এঁকেছি। আজ তার অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। ২০০৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত আমি ঢাকার শান্ত মরিয়ম ইউনিভার্সিটি ও UODA-তে শিক্ষকতা করেছি। ২০০৯ সালে বুড়িগঙ্গায় যাওয়া হতো। একসময়কার স্বচ্ছ পানি দেখলাম কালো কুচকুচে রঙ ধারণ করেছে। জানা গেল, বছরের পর বছর বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির ফেলা বিষাক্ত বর্জ্য নদীর গভীরে এক মিটারেরও বেশি উচ্চতায় তেলতেলে আস্তর তৈরি করেছে।

পানির বৈজ্ঞানিক পরীক্ষণে ধারণা করা হয়, বুড়িগঙ্গা নদীর মৃত্যু ঘটেছে। এটি আমাকে অত্যন্ত ব্যথিত করে এবং দুশ্চিন্তারও উদ্রেক ঘটায়। একটি শহরের পাশে বয়ে যাওয়া নদীর মৃত্যু মানে শহরটিরও মৃত্যু বটে! সেই ব্যথার অনুভূতিই এই চিত্রে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।

একইভাবে দক্ষিণে সুন্দরবনে কয়লা থেকে রামপালের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। কারণ সুন্দরবনে যুগ যুগ ধরে বসবাস করা পশুপাখি বা প্রাণীর জীবনের বিলুপ্তির আশঙ্কায় ২০১৬ সালে No Comments ছবিটি আঁকি। সেখানে দুটি হরিণকে কয়লায় পুড়ে যাওয়া কালো দেহের বিচরণ দেখানো হয়েছে। এখানে পরিবেশবিজ্ঞানে সচেতনতার প্রকাশ করেছি।

আমার বাংলাদেশটি তো ভারতের দেওয়া বৈদ্যুতিক কাঁটাতারেই ঝুলে আছে। এটি আমাদের অস্তিত্বেই এক অশনিসংকেত। সেই ভাবনাতেই কাঁটাতারের ছবিটি আঁকা। এখানে আমি নিজেকেই উপস্থাপন করেছি।

জার্মানির বার্লিনে ১০ হাজার মাইলের ব্যবধানও আমাকে দেশ নিয়ে ভাবনা থেকে দূরে সরাতে পারেনি না। পারবেও না।

Katatar

গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ বা সেরা অর্জন : প্রতি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটিরই স্বকীয়তা আছে। ভিন্ন মাত্রায় প্রতি প্রদর্শনীর মূল্য আছে। তারপরও তারপরও কিছু কিছু প্রদর্শনী বিশেষ কারণে নিজের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ‘Art Fair Art Karlsruhe 2025’ উল্লেখযোগ্য। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অত্যন্ত খ্যাতনামা গ্যালারিগুলো তাদের সবচেয়ে ভালো শিল্পীদের কাজ প্রদর্শন করে থাকে। সেখানে প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত শিল্পী ও মধ্যস্তরের প্রতিষ্ঠিত শিল্পী থেকে একেবারে নতুন উঠতি সম্ভাবনাময় শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়।

হাজার হাজার শিল্পীর মধ্যে মাত্র ৭৮ শিল্পীর শিল্পকর্ম One Artist Show-এর জন্য আমন্ত্রিত হন বা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচিত হন। আমার শিল্পকর্মও One Artist Show-এর জন্য নির্বাচিত হয়। অগণিত মানুষের প্রশংসা ও সখ্য পেয়েছি। আমার শিল্পপ্রেমিক বন্ধুরা বার্লিন, এমনকি ফ্রান্স থেকেও ছবি দেখার জন্য এসেছিলেন।

এরই মধ্যে সবচেয়ে ভালো লাগার একটি মুহূর্ত হচ্ছে শিল্পজগতের একজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব Markus Lüpertz যখন কাজ দেখতে দেখতে আমার গ্যালারিতে প্রবেশ করলেন। তাকে চিনতে পেরেই আমি স্বাগত জানাই। তিনি ছবির কাছে গিয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। আমিও তার সঙ্গে সঙ্গেই ছিলাম। একপর্যায়ে তিনি আমার Gallerist Ms. Ljiljana Vulin Hinrichs-কে জিজ্ঞাসা করেন, ‘কে এই শিল্পী, কে এই শিল্পী?’ Gallerist আমার দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন, ‘উনিই সেই শিল্পী।’

Markus Lüpertz পলকহীনভাবে আমাকে দেখলেন, আর বলে উঠলেন, ‘Compliment really big compliment, very strong work, do contiune your work.’ এ অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে আমার শিল্পসৃষ্টিতে পাথেয় হয়ে থাকবে। এ ছাড়া আরো উল্লেখযোগ্য অভিজ্ঞতার উদাহরণ ঘটেছে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে, বলাবাহুল্য।

Alphona-7

সেরা কাজ : প্রতিটি শিল্পকর্মই কম-বেশি গুরুত্ব বহন করে। শিল্প সৃষ্টিতে আত্মতৃপ্তি আজও কোনো স্থায়ী রূপ ধারণ করেনি। এক সৃষ্টি থেকে আরেক সৃষ্টিতে চলে যাই। আজ যে ছবিটি ভালো লাগলো, পরে সেই ভালো লাগাটা আর থাকছে না। সৃষ্টির ক্ষুধা থেকেই যাচ্ছে। আর তাই যেন আমার বিরতিহীন সৃষ্টির সোপান।

এক্ষেত্রে একজন দর্শক, একজন শিল্পপ্রিয় মানুষ, একজন শিল্পবোদ্ধা, শিল্প সমালোচক বা শিল্পকর্মের ক্রেতা দ্বারাই নির্ধারিত হয় কোন শিল্পকর্মটি সেরা। শিল্প বিচারে তারপরও কিছু ভালো লাগা কাজ থেকেই যায়। এক্ষেত্রে ‘Final Dive যে ছবিটি আমার Masterpiece-এর সম্মান পেয়েছে, সেটি আমার একটি সেরা বা প্রিয় কাজ।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কার : এ পর্যন্ত ১৬-১৮টি পুরস্কার Visual Art-এ অর্জিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হচ্ছে ২০২০ সালে Falken Rot Award 2020, International Künstlerhaus Bethanien, Berlin, Germany.

২০১৬ সালে Australian Ministry of Home Affairs থেকে প্রদত্ত ‘Distinguished Talent’ Award.

২০১৩ সালে Mr Reinhard Fuchs-এর প্রকাশিত বই Women in Art-এ গত প্রায় এক হাজার বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৫১২ শিল্পীর মধ্যে আমার কাজ মাস্টারপিস হিসেবে প্রকাশিত বা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

২০১০ সালে লন্ডনে বিশ্বের সব কমনওয়েলথ দেশের ১০০ বছরপূর্তিতে St. James's Palace-এ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে একজন Most Distinguished Visual Artist হিসেবে সাক্ষাতের সম্মান মেলে। বহু দেশের বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। ROSL Arts in London এই আয়োজন করেছিল।

২০১০ সালে Diploma of Excellence Award প্রাপ্তি। In Art Now 3, UK 2008-এ Royal Overseas League (ROSL) Arts in London আমাকে Jury/Curator-এর সম্মান প্রদান করেন।

২০০৬ সালে ঢাকার অনন্যা দ্বারা বাংলাদেশের Best Artist Award প্রদান করা হয়।

১৯৯৯ ও ১৯৯৬ সালে জার্মানির মিউনিখ শহর থেকে যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় পুরস্কারের জন্য Silk Screen Print এডিশনে Commision প্রাপ্তি ।

১৯৯৩ সালে কানাডার টরন্টোতে জলরঙে দ্বিতীয় পুরস্কার প্রাপ্তি।

১৯৯২ সালে লন্ডনে Royal Overseas Arts-এর দ্বারা আয়োজিত Visual Art-এ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তেলরঙে Best Overseas Artist Award প্রাপ্তি।

১৯৮৩ সালে তেলরঙে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন গোল্ড মেডেল প্রাপ্তি। এটি সব মাধ্যমের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত। এ ছাড়া ১৯৮২ ও ১৯৮০ সালে তেলরঙে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও জলরঙে খাজা শফিক আহমেদ মেমোরিয়াল পুরস্কারপ্রাপ্তি।

Tuli

ছবি আঁকা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা : ভবিষ্যতে ছবি শুধু অবলোকন করাই নয়, বরং ছবি কথা বলবে সুরে, কবিতায়, শব্দচয়নে, নানা ধ্বনির ঝংকারে, ক্যামেরায় চোখ দিয়ে মূর্ত হয়ে ওঠা, ইলেকট্রনিক শব্দের মিশ্রণ, যেটি নিয়ে কয়েক বছর থেকেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। আমি ছবিতে অপর এক মাত্রার সংযোজন ঘটাতে চাই। জন্মভূমি বাংলাদেশে এসে কাজ করার দৃঢ় ইচ্ছা আছে। এর জন্য সব সহযোগিতা কাম্য।

শিল্পী না হলে হতেন: একজন শিল্পী না হলে হয়তো আরেকবার শিল্পী হয়ে জন্মানোর স্বপ্ন দেখতাম। তবে কখনো কখনো একজনের Archeologist হওয়ার ক্ষুদ্র বাসনা উঁকিঝুঁকি দেয়। প্রকৃতি ও প্রাণিজগৎ ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে।

ছবি আঁকা ছাড়া যা করেন : অবসরে কবিতা লিখি, গান গাই। গান লিখি ও কমপোজ করি। ভালো বই পড়ি, রান্না করি, অনেক দূরে সুন্দর জায়গায় চলে যাই। Concert-এ যাই। ভালো বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাই। তবে সংখ্যায় তেমন বেশি নয়। মাঝেমধ্যে প্রদর্শনীতে যাই, কিংবা মিউজিয়ামে যাই।

পছন্দের খাবার : দেশীয় খাবারই আমার কাছে শ্রেষ্ঠ। আমি এক ভোজনবিলাসী পরিবারে জন্মেছি। খেতে পছন্দ করি- মাছ, মাংসের ভুনা, বিভিন্ন পদের ভর্তা, ইলিশ রেজালা, ইলিশ পোলাও, চিতয়ের খাকরি, চিকেন রোস্ট, কাচ্চি বিরিয়ানি, চিকেন কোর্মা সঙ্গে পোলাও, নানা তরিতরকারির নিরামিষ, দেশীয় নানা পিঠা, খেজুরের গুড়ের পায়েস...। তবে পরিমাণে কম খাই। ইউরোপের ইটালিয়ান খাবার পছন্দ। Original জার্মান কিছু খাবারও পছন্দের।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান যেভাবে দেখেন এবং নতুনদের কাছে প্রত্যাশা :

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান পৃথিবীর ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। আর বাংলাদেশে তো বটেই। আমার দৃষ্টিতে এটি এক অভূতপূর্ব ঘটে যাওয়া অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। গত ১৭ বছরের পাথর হয়ে জমে থাকা ক্ষোভ, রাগ ও ঘৃণার প্রতিক্রিয়ায় নতুন বাংলাদেশে স্বপ্নের এক অভাবনীয় বিস্ফোরণ ঘটেছে। এই দেশের শিক্ষানবিশ তরুণ-তরুণীরা তাদের সিংহরূপ সাহসে নিজের জীবন দিয়ে ও রক্তের বিনিময়ে দেশকে ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্ত করেছে। দেশে বিরাজমান অন্যায়-অবিচার, দুর্নীতি আর নির্লজ্জ অরাজকতার হাত থেকে দেশকে বাঁচিয়েছে। দেশের আপামর জনতার সম্পৃক্ততা ৩৬ দিনের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আরো তীব্র গতি আনতে সক্ষম হয়েছে।

এ অভ্যুত্থান অত্যন্ত ইতিবাচক, যা ছিল অপরিহার্য। হাজার শহীদের এ ত্যাগ যেন আর বৃথা না যায়। তাদের ঋণ কোনোদিনই শোধ করার নয়। তারা যেন অভ্যুত্থান চলাকালে সত্য পথটি থেকে ছিটকে বা পিছলে না পড়ে। নতুন দেশ গড়ার মূল হাতিয়ার তাদের হাতে আঁকা। তবে অভিজ্ঞদের সহযোগিতা ছাড়া কিছুই সম্ভব হবে না। জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের সংস্পর্শে থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বয়োজ্যেষ্ঠদের উপদেশ এবং তাদের চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ঘটাতে হবে সমাজ ও দেশের সর্বস্তরেই।

সারাদেশে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানে তাদের নামখচিত স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হোক—এ আমার প্রত্যাশা, আমার দাবি।

যেমন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন : এক দুর্নীতিমুক্ত নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। যেখানে মানুষের মুক্ত মনের ও কণ্ঠের বজ্রধ্বনির যথাক্রমে উন্মোচন ঘটবে আর শোনা যাবে। প্রতিদিন চলায় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত অঘটন ঘটবে না। কারোই সন্তান, বাবা-মা ও স্বামী-স্ত্রীর নিখোঁজ বার্তা আসবে না। জুলুম হবে না। খুন হবে না। বাংলার আকাশ, বাতাস ও মাটিতে সত্যের জয় হোক—এটাই কামনা।

বিষয়:

আলপনা
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত