Ad T1

সন্তানদের নিয়ে অথৈ সাগরে শহীদ দুলালের স্ত্রী

গোলাম রহমান, পটুয়াখালী
প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৫, ১১: ৫৫

অভাবের সংসারের চাকা সচল করতে ঢাকা এসেছিলেন দুলাল সরদার। পরিবারও নিয়ে এসেছিলেন ঢাকায়। চলছিলও ভালোভাবে। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সবকিছু উলটপালট করে দিল। শহীদ হলেন চার সন্তানের এ বাবা। তাকে হারিয়ে সন্তানদের নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েছেন স্ত্রী তাসলিমা বেগম।

জানা যায়, রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন পটুয়াখালীর সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের হকতুল্লাহ গ্রামের দুলাল সরদার। একটি রেন্ট-এ কার কোম্পানির গাড়ি চালাতেন তিনি। তিনি চাকরির বেতন দিয়ে নিজের এবং বাবা-মার খরচের জোগানও দিতেন। ১৮ জুলাই যখন আন্দোলনে উত্তাল ঢাকা, তখন তিনি অফিসে যান এবং সেখান থেকে বের হয়ে ডিউটিতে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে হাসপাতালে নেওয়ার পথে শহীদ হন তিনি।

স্ত্রী তাসলিমা বেগম বলেন, স্বৈরাচারের একটি বুলেটে এতিম হয়ে গেছে আমার সন্তানরা। আমার সাজানো সংসারের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। তাকে হারিয়ে এখন ৪ সন্তান নিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছি। সংসারের অবস্থা খুবই করুণ। বড় ছেলেটা একটি কোম্পানিতে ছোট্ট একটা চাকরি করে। এখন সব ভার পড়েছে তার ওপর।

আমি নিজে হার্টের রোগী। ওষুধ কিনে দেওয়ারও কেউ নেই এবং ওষুধ কিনে খাওয়ারও সামর্থ্য নেই।

স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দুলালের পরিবারটি এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। মা ও তিন ভাইসহ দাদা-দাদির দায়িত্ব এখন দুলালের বড় ছেলেটার ওপর পড়েছে। দুলাল মারা যাওয়ার পর বড় ছেলেই সংসারটা কোনো মতে টিকিয়ে রেখেছে। কিন্তু তার একার পক্ষে সংসারের হাল ধরে রাখা সম্ভব নয়। সরকার যদি দুলালের পরিবারের আরেক ছেলেকে চাকরি দিয়ে সহায়তা করত তাহলে এ পরিবারটি ভালোভাবে চলতে পারত।

দুলালের বাবা সুলতান সরদার বলেন, আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। আমার কাজকর্ম নেই, আমি কষ্ট করে খাই। এখন এই ছেলে বউটা ও চারটি নাতি কীভাবে চলবে তা নিয়ে চিন্তায় আছি।

দুলালের বৃদ্ধ মা হালিমা বেগম বলেন, আমার ছেলে হত্যার বিচার আল্লাহ ছাড়া কেউ করতে পারবে না। সরকার যদি আমার ছেলের স্ত্রী-সন্তানদের দিকে একটু তাকায় তাহলে ওরা ভালোভাবে বাঁইচ্চা থাকতে পারব।

শহীদ দুলালের বড় ছেলে সাইদুল ইসলাম সোহাগ সরদার বলেন, আমরা এখন খুব কষ্টে আছি। বাবার মৃত্যুতে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে সংসার চলছে। বাবাকে ফিরে পাব না, কিন্তু আমাদের যারা এতিম করেছে তাদের বিচার চাই।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত