মো. জাকির হোসেন, টঙ্গী
‘বাবা আমি মইরা যামু, আমার লাশটা নিয়া যাইও’ বাবা আবুল হোসেনের সঙ্গে এটিই ছিল শহীদ নাফিসা হোসেন মারওয়ার শেষ কথা। গুলি খাওয়ার প্রায় আধা ঘণ্টা পর বাবার মোবাইলে মৃদু কণ্ঠে কথাগুলো বলেছিলেন নাফিসা। গত বছরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত হন তিনি।
এদিকে নাফিসার শেষ কথা মনে পড়লে স্থির থাকতে পারেন না চা দোকানি বাবা। এ কারণে এখনো প্রায় প্রতিদিন কবরে গিয়ে আদরের মেয়ে নাফিসাকে খুঁজে ফেরেন আবুল হাসান। মেয়ের কথা মনে হলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন।
টঙ্গী সাহাজউদ্দিন সরকার আদর্শ বিদ্যানিকেতন অ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন নাফিসা। সেখান থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৪.২৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ফল প্রকাশের এক সপ্তাহ আগে শহীদ হন নাফিসা। ছোট বোন সাবা হোসেন রাইসা সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। সাভারে নানির বাসায় থেকে পড়াশোনা করে রাইসা। মা কুলসুম বেগম ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্নে ২০২২ সালে কুয়েতে পাড়ি জমিয়েছেন।
জানা গেছে, জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাহসিকতার সঙ্গে রাজপথে নেতৃত্ব দেন নাফিসা হোসেন মারওয়া। টঙ্গীর এরশাদনগর ৮ নম্বর ব্লকের একটি ছোট ভাড়া বাসায় ছোট বোন ও চা দোকানি বাবার সঙ্গে বাস করতেন নাফিসা।
আন্দোলনের প্রথমদিকে মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলে নিজেদের মধ্যে আলাপ করে প্রতিদিন রাজপথে নামতেন নাফিসা ও তার সহপাঠীরা। বাবা সকালে দোকানে চলে গেলে, কাউকে না জানিয়ে আন্দোলনে যেতেন নাফিসা। প্রতিবেশীদের মাধ্যমে মেয়ের আন্দোলনে যাওয়ার খবর শুনে বাবা আবুল হোসেন তাকে বকাঝকা করেন।
একপর্যায়ে ২৮ জুলাই বাবার কাছে অনুমতি নিয়ে নাফিসা ঢাকার ধামরাইয়ের বড় মামার বাসায় যান। সেখান থেকে ৩০ জুলাই সাভারে ছোট মামার বাসায় ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকেও প্রতিদিন আন্দোলনে অংশ নেন। ৩ আগস্ট বিকেলে আন্দোলনের কিছু ছবি তার বাবাকে পাঠান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তার বাবা তাকে বকাঝকা করেন।
৫ আগস্ট সকালে মামাদের বাধা উপেক্ষা করে সাভারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে লং মার্চে যোগ দেন। বেলা ২টার কিছুক্ষণ পর সাভার মডেল মসজিদের সামনে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ও আওয়ামী দোসরদের যৌথ হামলা শুরু হয়। এ সময় পুলিশ সরাসরি গুলি চালালে সামনের সারিতে থাকা নাফিসার বুকে গুলি লাগে। সহযোদ্ধারা তাকে উদ্ধার করে সাভার ল্যাবজোন হাসপাতালে নিয়ে যান।
বেলা সাড়ে ৩টার দিকে একটি অচেনা নম্বর থেকে আবুল হোসেনের ফোনে কল করে বলা হয়, ‘আপনি ওর কী হন? তাড়াতাড়ি ল্যাবজোন হাসপাতালে আসেন, নাফিসার গায়ে গুলি লেগেছে।’
এ খবর শুনেই নাফিসার দিশাহারা হয়ে পড়েন বাবা। চায়ের দোকান খোলা রেখেই তিনি সাভারের উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু রাস্তায় কোনো গাড়ি না থাকায় হেঁটে ও ভেঙে ভেঙে রিকশায় করে সাভার পৌঁছান।
ল্যাবজোন থেকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাফিসাকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চিকিৎসক জানান অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে অনেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
রাতে সাভারে নাফিসার প্রথম জানাজা শেষে টঙ্গীর এরশাদনগরে লাশ আনা হয়। পরে এরশাদনগরে দ্বিতীয় জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। নাফিসার প্রসঙ্গে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি গরিব, সহায়-সম্বল বলতে কিছুই নেই।
আমার দুইটা মেয়ে। তারাই ছিল আমার সম্বল।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দোসররা আমার মেয়েটাকে বাঁচতে দিল না। মেয়েটার কথা বারবারই মনে পড়ে।’
মনির হোসেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। যেদিন তিনি গুলিবিদ্ধ হন, সেদিন তার বাবা আলমগীর হোসেন আওয়ামী লীগ নেতাদের ভয়ে ঘরের মধ্যেই ছেলের জন্য শব্দ করে কাঁদতেও পারেননি।
১০ ঘণ্টা আগেমা-বাবার সংসারে উপার্জনক্ষম ছেলে ছিলেন শহীদ সোহেল রানা। গার্মেন্টসে চাকরি করে আয় যা হতো, তা থেকে বড় একটা অংশ পাঠিয়ে দিতেন পরিবারের জন্য। তাতে ঘর তো চলতই, চলত তার বোনের পড়াশোনা। কিন্তু ঘরের আলো সোহেল শহীদ হওয়ার পর পরিবারে নেমে এসেছে ঘোর অমানিশা। মাকে নিরাপদ থাকার কথা বলে নিজেই হারিয়ে গেলেন চিরতরে।
১ দিন আগেমাথায় এখনো তিনটি রাবার বুলেট। প্রায়ই ব্যথায় অস্থির হয়ে পড়েন। আর ঝিমঝিম ভাব তো আছেই। আঁতকে উঠেন হঠাৎ হঠাৎ। যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হওয়ার কোনো পথও খোলা নেই তার। কেননা চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে যে টাকা দরকার তা তার নেই।
২ দিন আগেমাত্র ছয় মাস বয়সি ছেলেকে ঘরে রেখে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের আন্দোলনে বন্ধুদের নিয়ে রাজপথে নামেন কারখানাশ্রমিক বায়েজিদ বোস্তামি। গত বছরের ৫ আগস্ট কারফিউ ভেঙে ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন তিনি।
৩ দিন আগে