Ad T1

স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে কাজ করবে মেডিসিন সোসাইটি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১: ৩৩

দলীয়করণ করায় চিকিৎসকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন গত দেড় দশকে দেশের চিকিৎসা খাতে কার্যকরি ভূমিকা পালন করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন দেশের মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ভিন্নমতের হওয়ায় শ শ মেডিসিন চিকিৎসকের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। সিনিয়র চিকিৎসককে রেখে জুনিয়র চিকিৎসককে পদোন্নতি পেয়েছে। সোসাইটিকে ব্যবহার করে ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার করা হলেও দেশের চিকিৎসা খাতে ভূমিকা রাখা হয়নি। তবে সময় পরিবর্তন হয়েছে। নতুন বাংলাদেশে মেডিসিন সোসাইটি স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।

রোববার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সংগঠনটির নতুন কমিটির দায়িত্বগ্রহণ ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারে মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। ২৭ সদস্যের নতুন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মো. মনির-উজ জামান। সদস্যসচিব করা হয়েছে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাকারীয়া আল-আজিজকে।

অনুষ্ঠানে চব্বিশের গণভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। একই সঙ্গে তাদের পরিবারের সহযোগিতায় জুলাই ফাউন্ডেশনে মেডিসিন সোসাইটির পক্ষ থেকে ১৭ লাখ টাকা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে সোসাইটির সদস্যসচিব অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাকারীয়া আল-আজিজ বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচারি সরকারের গত দেড় দশকে শুধু সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনতা বেষম্যের শিকার হয়নি, ভিন্নমতের চিকিৎসকেরাও চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। সিনিয়দের বঞ্চিত করে জুনিয়রদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, যখন-তখন যাকে-তাকে বদলি করা হতো। আমাদের অনেক সিনিয়র ভাই, যারা উচ্চতর কোর্সগুলোও ঠিকমতো করতে পারেনি। এমনকি কোনো কমিটিতে রাখা কিংবা প্রেজেন্টশনও করতে দেওয়া হতোনা। সবকিছুর তদারকি করতো আওয়ামী পন্থীরা। আমাদের জন্য যা ছিল আতঙ্কের।’

তিনি বলেন, ‘সহস্র মানুষের আত্মত্যাগের নতুন বাংলাদেশে আমরা সোসাইটিকে নতুন করে সাজাতে চাই। যেখানে সোসাইটি কারো ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে ব্যবহার হবেনা। নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, ভাবধারা ও কোনো বৈষম্যহীন আমরা গড়তে চাই। দলমত নির্বিশেষে মেডিসিন চিকিৎসকদের পেশার মানোন্নয়ন, নতুন পদ সৃষ্টি, রোগীদের সেবার ক্ষেত্রে কর্ম পরিবেশ তৈরিই হবে এবং স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষায় নীতিমালা প্রণয়নে সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করাই হবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাকারীয়া আল-আজিজ বলেন, ‘নিজেরা বঞ্চনার শিকার হলেও আমরা কাউকে বঞ্চিত করতে চাইনা। বিগত ১৫ বছরে উন্নয়নের কথা বলে স্বাস্থ্য শিক্ষাকে চরম ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। আমাদের ডিগ্রিকে অনেক দেশ গ্রহণ করছেনা। তাই আমাদের কাজ হবে কিভাবে এক্রিডিটেশনকে ফিরিয়ে আনা যায় সেই চেষ্টা করা।’

এ সময় সাব কমিটির সদস্য শাহাদুল হুদা চৌধুরী বলেন, ‘আগামী ২৫ থেকে ২৭ এপ্রিল ঢাকায় আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করা হচ্ছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। যেখানে তরুণ চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, গবেষণায় আত্মনিয়োগ ও ইন্টারভেশনে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আমাদের দেশের চিকিৎসকদের জন্য এটি পেশাগত জীবনে বড় ভূমিকা পালন করবে।’

মেডিসিন সোসাইটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মো. মনির-উজ জামান বলেন, ‘৫ আগস্টের পর প্রতিটি খাতে একধরনের স্থরিবতা নেমে আসে। আমাদের মেডিসিন বিশেজ্ঞদের মধ্যে যারা ফ্যাসিস্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তারাও কাজ কর্ম থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন। এমন পরিস্থিতিতে দেশের স্বাস্থ্য খাতকে এগিয়ে নিতে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘সোসাইটিকে এতদিন গোষ্ঠী ও ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ এটি হয়েছিল কিভাবে স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও গবেষণাকে এগিয়ে নেওয়া যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করবে। সেটা না হয়ে বরং দলীয়ভাবে এটাকে ব্যবহার করে অনেকে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে নিজেদেরকে নিয়ে গেছে। ফলে মানসম্মত চিকিৎসা শিক্ষা গড়ে ওঠেনি। সারাদেশে মেডিকেল শিক্ষাকে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে সমানভাবে এগিয়ে নিতে আমরা সোসাইটির পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’

অধ্যাপক মনির-উজ জামান বলেন, ‘বর্তমানে কারিকুলাম অনেক আপডেট করতে হবে। পৃথিবী যেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে, অমাাদের স্বাস্থ্যশিক্ষা এখনো অনেক পিছিয়ে। সরকারের সংস্কার কমিটি অনেক কাজ করছে। কিন্তু তারাও শেষ করে যেতে পারবেনা। সেটাকে ধরে আরও এগিয়ে নিতে হবে। জনস্বাস্থ্যমুখী মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলবে হবে।’

Ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত