Ad T1

ড. ইউনূস : ব্যবহার বনাম অপব্যবহার

মিনার রশীদ
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২: ২৩

জাতি হিসেবে আমাদের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে! যেকোনো বড় ইস্যুতে আমরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাই। তখন যে যেদিকে তাকায়, সে অন্যদিকের কথা সম্পূর্ণ ভুলে যায়! ১৯৫২ থেকে শুরু করে ১৯৭১ সাল, এমনকি হাল আমলের এক-এগারো এবং সর্বশেষ জুলাই বিপ্লব অথবা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে পড়ে। ১৯৫২ সালে পাকিস্তানি শাসকশ্রেণি একটি হঠকারিতামূলক পদক্ষেপ নেয়, উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেয়।

আমরা জানি কিংবা আমাদের জানানো হয়েছে, এসব কাজ শুধু উর্দুভাষী পশ্চিম পাকিস্তানিরা একাকী করেছে! কিন্তু সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন তখন নিয়ন্ত্রণ করত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাঞ্জাবি, সিন্ধি বা বেলুচি ভাষাভাষী মানুষ। এমনকি বাংলা ভাষাভাষীরা পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আসনে আসীন ছিলেন! খাজা নাজিমুদ্দিন পাকিস্তানের দ্বিতীয় গভর্নর জেনারেল ছিলেন। তিনি এই পদে ছিলেন ১৯৪৮ সালের ১৪ আগস্ট থেকে ১৯৫১ সালের ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত। তিনি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুর পর গভর্নর জেনারেল হন এবং পরবর্তী সময়ে ১৯৫১ সালে লিয়াকত আলি খান আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। তারপর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আসেন বগুড়ার মোহাম্মদ আলী। পাকিস্তানের আরেক প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীও বাঙালি ছিলেন, বাংলায় কথা বলতেন। যে পুলিশ অফিসার ২১ ফেব্রুয়ারিতে ছাত্রদের মিছিলে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনিও ছিলেন বাংলাভাষী। কিন্তু পাকিস্তানিদের প্রতি আমাদের ক্ষোভ হালকা হয়ে পড়বে, সেজন্য সেই বাঙালি পুলিশ কর্মকর্তার নামটি টুকে রাখিনি! কাজেই এরা সবাই মিলে কখনোই ‘আমার মুখের ভাষা কাইড়া’ নিতে চায়নি; বরং বহু ভাষাভাষী একটি দেশে সবার জন্য কমন ল্যাংগুয়েজ হিসেবে উর্দুকে বেছে নিয়েছিল অত্যন্ত প্র্যাকটিক্যাল কারণে, যেভাবে হিন্দিকে কমন ল্যাংগুয়েজ হিসেবে বেছে নিয়েছে সমগ্র ভারতবাসী। এমনকি আমাদের অতিপূজনীয় বাঙালি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কখনোই বাংলাকে ইন্ডিয়ার কমন ল্যাংগুয়েজ হিসেবে যোগ্য গণ্য করেননি, বরং শক্তভাবে হিন্দির পক্ষেই নিজের মতামত দিয়েছিলেন। মজার বিষয় হলো, বাঙালি হয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য খাজা নাজিমুদ্দিনকে আমরা ধিক্কার দিলেও একই কাজের জন্য আমরা রবিঠাকুরকে কিছু বলি না। যদিও পাকিস্তানের শাসকশ্রেণি পরবর্তী সময়ে বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল, কিন্তু আমরা এখনো বিশ্বাস করি, ওরা আমাদের মুখের ভাষা ‘কাইড়া নিতে’ চেয়েছিল! এটা নিয়ে যারা আসল কথাটি বলার চেষ্টা করবেন, ৮০ বছর পরেও তাদের খবর করে দেবেন বাংলার মরাল ব্রিগেড!

১৯৭১ সালে এসে আবার দুভাগে বিভক্ত হলাম। এক ভাগ চাইলাম পাকিস্তান ভাঙতে, অন্যভাগ দাঁড়িয়ে গেলাম পাকিস্তান রক্ষায়। সব বিচারে শেখ মুজিব কিন্তু দ্বিতীয় দলেই ছিলেন। ২৫ মার্চ পর্যন্ত তিনি প্রকাশ্যে পাকিস্তান রক্ষায় ইয়াহিয়া-ভুট্টোর সঙ্গে কাজ করে গেছেন। এরপর পাকিস্তানের জেলখানায় বসে কনফেডারেশন গড়ার কাজ চালিয়ে গেছেন। এ কারণেই তিনি সুহৃদ তাজউদ্দীন আহমদসহ অন্যদের পরামর্শমতো পালিয়ে না এসে স্ট্র্যাটেজিক গ্রেপ্তার বরণ করেছিলেন!

বিভক্ত জাতির একপক্ষের কনসার্ন বা ভাবনা অন্য পক্ষকে স্পর্শ করল না! ফলে ৫০ বছর পরেও আমরা মনস্তাত্বিক বিভক্তির এক জায়গায় রয়ে গেছি। লেখার কলেবর অনেক বেড়ে যাবে বলে এ বিষয়ে এখানে বিস্তারিত লিখছি না।

২০০৭ সালের এক-এগারোতেও দেখা গেল এক নতুন হেংকিপেংকি! । মনে হলো, আরেক কারবালা। হুজুগ ওঠানো হলো মাইনাস টুয়ের। সারা জাতি মাইনাস টুয়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল! এই পরিস্থিতি দেখে মাত্রাধিক উৎফুল্ল মতি-মাহফুজ টিভিতে প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন, এক-এগারো তাদের ব্রেইন চাইল্ড! বিশেষ করে এক-এগারোর প্রথম ছয় মাস ছিল খুবই ভয়াবহ । ওই সময় মাইনাস টুয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো রীতিমতো কবিরা গুনাহ। তারপরও এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন শফিক রেহমান, ড. মাহমুদুর রহমান, ফরহাদ মাজহার, মরহুম সিরাজুর রহমান প্রমুখ। নবাগত কলামিস্ট হিসেবে এই নগণ্যও ছিল তাদের সঙ্গে! খুশির কথা, এক-এগারো শুরুর ছয়-সাত মাসের মধ্যেই জাতির হুঁশটি ফিরতে শুরু করে, কিন্তু সেই এক-এগারোর কব্জা থেকে জাতি এখনো পুরাপুরি বের হতে পারেনি।

২০২৫ সালে এসে নতুন উন্মাদনা শুরু হয়ে গেছে—সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে। এটা যেন ‘মুরগি আগে না ডিম আগে’র মতোই একটি জটিল প্রশ্ন হয়ে পড়েছে!

এই বিতর্ককে কেন্দ্র করে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মাঝে মতভিন্নতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। বলা হচ্ছে, নির্বাচনের দরকার নেই, দরকার সংস্কার। কিন্তু নির্বাচনটা যে সংস্কারের ব্যবহারিক প্রয়োগ, এই কথাটি অনেকেই ভুলে যাচ্ছেন। নির্বাচন ও সংস্কারকে মুখোমুখি করে কেমন যেন একটা সুগার কোটেড হুজুগ তোলা হচ্ছে! এ অবস্থায় নির্বাচন চাওয়া কবিরা গুনাহর সমতুল্য হয়ে পড়েছে!

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার বদলে আমরা আবেগনির্ভর সমাজেই রয়ে গেছি। ’৭১-এর চেতনাকে যেভাবে এক্সপ্লয়েট করা হয়েছে, সেই একই এক্সপ্লয়টেশনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে ’২৪-কে ঘিরে। আসলে চিন্তার ক্ষেত্রে আমরা কেমন যেন অস্থির ও অধৈর্য হয়ে পড়ছি। যে চকোলেট চুষে খাওয়ার কথা তা চিবিয়ে খাচ্ছি।

ড. ইউনূসকে একটা লম্বা সময়ের জন্য ক্ষমতায় দেখতে চান এদেশের অনেকেই। পেছনের কারণটি স্পষ্ট। আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী আমাদের সঙ্গে যে দুশমনি শুরু করছে তার মোকাবিলায় অনেকেই ইউনূসের বিকল্প এই মুহূর্তে দেখছেন না! শেখ হাসিনা উৎখাত হওয়ায় আমাদের প্রতিবেশীর যতটুকু ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়েও বেশি ক্ষতি হয়েছে ড. ইউনূসের মতো কেউ এদেশের শাসনভার গ্রহণ করায়। জঙ্গিবাদী বা উগ্রবাদীরা ক্ষমতা দখল করেছে, আমাদের প্রতিবেশীর অহর্নিশ এই প্রচারণাও ড. ইউনূসের ক্ষেত্রে ধোপে টিকছে না।

ড. ইউনূস চীন, থাইল্যান্ড যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই তার কূটনৈতিক সাফল্য জাজ্বল্যমান হয়ে পড়ছে। অনেকেই বলাবলি শুরু করেছেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পর এমন ক্যারিশমেটিক নেতৃত্ব এদেশের ভাগ্যে জোটেনি!

যেকোনো ভালো জিনিসের ভালোত্ব কেন যেন আমরা ধরে রাখতে পারি না! উত্তম কাজটি আমরা কেন যেন উত্তম পদ্ধতিতে করতে পারি না, কিংবা তা করি না! ড. ইউনূস যদি আমাদের জন্য অপরিহার্য হয়ে থাকেন, তাহলে তাকে কেন পরবর্তী নির্বাচিত সরকারেই কোনো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সেট করার চিন্তাভাবনা করছি না?

জাতি হিসেবে আমাদের যে জিনিসটির অভাব তা হলো একজন সত্যিকার অভিভাবকের। সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়ার পরেও মেন্টর মিনিস্টার হিসেবে আরো দীর্ঘদিন জাতির অভিভাবকত্ব করে গেছেন। তার সন্তানও এখন সিনিয়র মিনিস্টার হিসেবে একই কাজ করছেন। একইভাবে ডক্টর ইউনূসও থাকতে পারেন একই ভূমিকায়। যতদিন আল্লাহ তাকে মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতাসহ বাঁচিয়ে রাখবেন, ততদিন তিনি মিনিস্টার মেন্টর হিসেবে থাকতে পারবেন। আমি মনে করি, তার জন্য সবচেয়ে সুইটেবল হবে ‘ন্যায়পাল’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা।

সামনে যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, তার মতো ব্যক্তিত্ব যদি ‘ন্যায়পাল’ হিসেবে থাকেন, তবে জাতি দুর্নীতি নামক মারণব্যাধি থেকে অনেকটাই মুক্তিলাভ করতে পারবে। আমার মতে, এটাই ড. ইউনূসের সর্বোত্তম ব্যবহার হবে। এটাই হবে জাতির শ্রেষ্ঠতম সংস্কার! তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্টের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বা মর্যাদাবান ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হবেন!

সংস্কার বলতে অনেকেই মনে করেন এটা একটা জাদুর চাবি। ড.ইউনূস সেই চাবিটি একবার মেরে দেবেন, আর আমরা আজীবন ‘চেলচেলিয়ে’ চলতে থাকব!

আমরা ভুলে যাই, ড. ইউনূস একাকী পুরো জাতির বা পুরা রাজনীতির খাসলত বদলাতে পারবেন না। ড. ইউনূস দুই বছরই ক্ষমতায় থাকুন কিংবা পাঁচ বছরই থাকুন, যতটুকু ধারণা করতে পেরেছি, তার সঙ্গে সেই আসিফ নজরুল, সেই সাখাওয়াত, সেই আলী ইমাম, সেই ফারুকী, কিংবা আলো-স্টারের সুশীলরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবেন। জাতির শেকড়ের সঙ্গে সম্পর্কহীন আলী রীয়াজরাই আমাদের বোধ-বিশ্বাস ও রাজনীতির বড় সংস্কারক হিসেবে আবির্ভূত হবেন! এদের কখনোই ড. ইউনূসের কাছ থেকে সরাতে পারবেন না। ড. ইউনূস নামক গোলাপের ঘ্রাণ শুকতে গেলে ওইসব কাঁটার ঘা খেতেই হবে। এটাই আমাদের নিয়তি।

আমরা সিস্টেমের সংস্কার চাই। কিন্তু যে মানুষগুলো এই সংস্কারের স্টেইকহোল্ডার তাদের মন-মগজের কোনো সংস্কার চাই না! যে দেশে এক ছাগলের দাম দিয়ে কমপক্ষে ১০টি ভোট কেনা যায়, সেই দেশে বৈপ্লবিক সংস্কার এখানে কীভাবে কাজ করবে? কাজেই একটা সিকোয়েন্স মেনে সংস্কার যে কাজ করত, এ রকম বৈপ্লবিক সংস্কারের স্বপ্ন সেই সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেয়।

যে কুকাজটি করে গেছে এক-এগারোর প্রবক্তারা! উদ্দীনদের সেই জরুরি সরকার সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামের আওয়াজ তুলেছিলেন। তখন আমি লিখেছিলাম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে চারটি ফ্রন্টে একসঙ্গে সংগ্রাম শুরু করতে হবে। এই চারটি ফ্রন্ট হলো অর্থনৈতিক সংগ্রাম, নৈতিক সংগ্রাম, সামাজিক সংগ্রাম ও রাজনৈতিক সংগ্রাম। এই চারটি ফ্রন্টের কোনো একটি ফ্রন্টকে অকেজো বা নিষ্ক্রিয় করে রাখলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামে জয়লাভ করা যাবে না। যে ভদ্রলোক নিজের সন্তানের দুধ কিনতে পারে না, নিজের স্ত্রীর চিকিৎসার পয়সা জোগাড় করতে পারে না, তার কানে কোনো নৈতিক শিক্ষা ঢুকবে না। মানুষের বেসিক প্রয়োজন না মিটিয়ে শুধু নৈতিক সংগ্রাম কাজে লাগবে না।

আমরা জানি, আমাদের কোরআন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সংবিধান। অথচ আজকের মুসলমান পৃথিবীর সর্বনিকৃষ্ট জাতি। কোরআনের ভাষা আরবি যারা বোঝেন, তাদের দ্বারা সংগঠিত কুকর্মের সংখ্যা কম নয়, বরং অনেক বেশি। কাজেই যারা ব্যবহারিক আচরণ বা ‘ট্রায়াল ও এরর’ বাদ রেখে তাত্ত্বিক সংস্কারকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন, তাদের এই অবস্থান পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।

যে জনগোষ্ঠী থেকে বিএনপি তার নেতাকর্মী পেয়েছে, সেই একই জনগোষ্ঠী থেকে এনসিপি তাদের নেতাকর্মী খুঁজে নিচ্ছে। সুযোগ পেলে এদের অনেকেই দুর্নীতি করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এদেশে সততার মূর্ত প্রতীক জিয়ার নাম উঠতে-বসতে জপেও অনেকে নিজে চরম অসৎ হয়ে পড়েছেন। তেমনি ‘ইউনূস, ইউনূস’ জপলেই যে এনসিপির তাসনিম জারারা সৎ থাকবেন, সেটারও কোনো গ্যারান্টি নেই! সততার গ্যারান্টি আসলে অন্য জায়গায়। সেই গ্যারান্টি নিশ্চিত হয় সিস্টেমেটিক প্রটেকশন তৈরির মাধ্যমে! তবে সবার শেষে লাগবে এই সিস্টেমকে চালানোর জন্য উন্নত বুদ্ধিমত্তা ও মানবিকতাবোধ-সম্পন্ন কিছু মানুষ। আর সেই মানুষগুলো যদি ঊর্ধ্বতন কোনো সত্তার কাছে জবাবদিহির অনুভূতি ধারণ করে, সেটা সোনায় সোহাগা হয়। সংস্কারের মূল লক্ষ্য হবে দুর্নীতি করতে পারার এই সুযোগগুলো কমিয়ে আনা! এই সংস্কার থিওরিটিক্যাল বিষয় নয়, এটা নেহায়েত প্র্যাকটিক্যাল বিষয়।

নির্বাচন চাওয়াকে কবিরা গুনাহর মতো পাপ বানিয়ে ফেললে আমাদের সারজিসরা, আমাদের জারারা সোনার মানুষগুলোকে বাছাই করবে কীভাবে? এক ড. ইউনূস বা জিয়াকে গলায় ঝুলিয়ে অনেক মতলববাজ পাওয়া যাবে, কাঙ্ক্ষিত সোনার মানুষ বাছাই করা যাবে না!

আমরা জানি, জামায়াত-সহ ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নৈতিক অবস্থান তুলনামূলকভাবে ভালো—সেখানেও কোয়ালিটি ধরে রাখতে গিয়ে কোয়ান্টিটি বা সংখ্যা সীমিত রাখতে হয়। এখন যদি এই কোয়ান্টিটি বাড়িয়ে ফেলা হয়, তবে তাদের কোয়ালিটি বিএনপি অথবা মুসলিম লীগের কাছাকাছি হয়ে পড়বে। কোয়ালিটি বিসর্জন দিয়ে জামায়াত যদি কোয়ান্টিটি বাড়িয়ে দেয়, তবে তা তাদের জন্যও বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। একইভাবে বিএনপি যদি তাদের কোয়ান্টিটি কমিয়ে কোয়ালিটি বাড়াতে চেষ্টা করে, তবে সেটা তাদের জন্যে ‘ঠগ বাছতে গিয়ে গাঁও উজাড়ের মতো’ পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।

কাজেই ড. ইউনূসকে দিয়ে সংস্কারের চাবি মেরে দিলে রাতারাতি ফেরেশতা দিয়ে দেশ ভরে যাবে না। আসুন, আমরা ড. ইউনূসকে ব্যবহারের চিন্তা করি, তবে অপব্যবহার নয়। নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার দরকার। সেজন্য সামনের ছয় মাস থেকে এক বছর সময়ই যথেষ্ট যদি সংস্কার করার আসলেই কোনো ইচ্ছা থাকে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত