ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী
মিয়ানমারে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। জাতিসংঘের হিসাবে, ৩০ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ভবন ধসই এর বড় কারণ।
২০২৩ সালে তুরস্কে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ৫৩ হাজার ৫০০ মানুষ মারা গেছে, যা মূলত ভবন ধসে পড়ার কারণে হয়েছে। আবার, আমরা যদি একটু পেছনে ফিরে যাই তাহলে দেখব, ২০১০ সালে হাইতিতে (৭ মাত্রার ভূমিকম্প) এবং চিলিতে (৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প) দেখা গেছে। এর মধ্যে হাইতিতে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ দুর্বল ভবনের কারণে মারা যায়, অথচ চিলিতে মাত্র ২৮০ জনের মৃত্যু হয়। যদিও চিলির ভূমিকম্পের শক্তি হাইতির তুলনায় ৮০০ গুণ বেশি ছিল, তবুও সেখানে প্রাণহানি ছিল অনেক কম।
বাংলাদেশও বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশে যে কোনো সময় ৭.৫ মাত্রার একটি বড় ভূমিকম্পের সম্মুখীন হতে পারে, এ আশঙ্কা রয়েছে।
এ ধরনের একটি ভূমিকম্প আঘাত হানার আশঙ্কা থাকলে এর আগে আমাদের সতর্কতা হিসেবে কী করতে হবে? এ ক্ষেত্রে আমাদের জরুরি কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে—
শহরের ভবনগুলোর বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন করা : আমাদের শহরগুলোর ভবনগুলো পরীক্ষা করে দুর্বল ভবনগুলো লাল, মাঝারি দুর্বলগুলো হলুদ এবং তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী ভবনগুলোকে সবুজ রঙে চিহ্নিত করতে হবে। এতে সরকার ও সিটি করপোরেশনগুলো বুঝতে পারবে কোন ভবনের দ্রুত সংস্কার দরকার। ব্যাংকগুলোও সঠিক কাগজপত্রের ভিত্তিতে ভবন মালিকদের সংস্কারের জন্য ঋণ দিতে পারবে। গত ১০ বছরে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রায় ৫০০টি গার্মেন্টস কারখানা সংস্কার করা হয়েছে।
সংস্কার কাজ দক্ষ প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তদারকি বাড়ানো : ভবন সংস্কারকাজ পর্যবেক্ষণের জন্য দক্ষ তৃতীয় পক্ষের প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান (থার্ড পার্টি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম) নিয়োগ করা প্রয়োজন, যারা বিভিন্ন ধাপে কাজের মান যাচাই করবে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১০০টি প্রকৌশল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা এই কাজ করতে সক্ষম। তবে এই সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে এবং নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শের মাধ্যমে।
নতুন প্রকৌশলীদের ভূমিকম্প সহনশীল নকশার প্রশিক্ষণ দেওয়া : নবীন প্রকৌশলীদের ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন নির্মাণ ও মাটির গঠন-সংক্রান্ত নকশা শেখানোর জন্য একটি ৩ মাসের সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা যেতে পারে। এই কোর্সটি অভিজ্ঞ প্রকৌশলী ও অধ্যাপকদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে এবং এটি একটি লাইসেন্সিং এজেন্সির অধীনে পরিচালিত হতে পারে, যেখানে অভিজ্ঞ পেশাদার প্রকৌশলীরা দায়িত্বে থাকবেন।
নতুন ভবন নির্মাণে নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করা : বাংলাদেশে নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) অনুসরণ করা হয়। তবে প্রধান সমস্যা হলো, নকশা অনুযায়ী নির্মাণকাজ সঠিকভাবে না করা এবং নির্মাণসামগ্রীর (যেমন সিমেন্ট, রড) গুণগত মান বজায় না রাখা। এ জন্য দক্ষ প্রকৌশল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান (থার্ড পার্টি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম) নিয়োগ করা প্রয়োজন, যারা কাজের মান যাচাই করবে। তাদের প্রতিবেদন ও সুপারিশের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), পল্লি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং অন্যান্য সিটি করপোরেশনগুলো ‘অকুপেন্সি সার্টিফিকেট’ দেবে। আমাদের ভবন নির্মাণ আইন এমন সার্টিফিকেট দেওয়ার বিধান রেখেছে।
বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর করা : বাংলাদেশে সিডিএ, কেডিএ, রাজউক, সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস বিভাগ— এই সংস্থাগুলোর দায়িত্ব পরস্পরের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে, যার ফলে কাজের সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউইয়র্ক, জাপানের টোকিও, ভারতের কলকাতা ও মুম্বাই, ফিলিপাইনের ম্যানিলা, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে এসব সংস্থা মেয়রের সরাসরি তত্ত্বাবধানে কাজ করে। দুর্যোগের আগে, দুর্যোগকালীন ও পরবর্তী সময়ে একটি একক কর্তৃপক্ষ এসব সংস্থাকে পরিচালনা করে। বাংলাদেশেও এই জটিলতা দ্রুত সমাধান করতে হবে।
ভূমিকম্প ঝুঁকি বিবেচনা করে ভূমি ব্যবহারের সঠিক পরিকল্পনা করা : বিভিন্ন শহরের জন্য ভূমিকম্প ঝুঁকি-সংবেদনশীল ভূমি ব্যবহারের পরিকল্পনা (রিস্ক-সেনসিটিভ ল্যান্ড ইউজ প্ল্যানিং) করা প্রয়োজন। এই পরিকল্পনায় মাটি কতটা ভূমিকম্প-প্রবণ, ভূমি তরলীকরণ (liquefaction) ঝুঁকি আছে কি না— এসব তথ্য ম্যাপে দেখানো হবে। এতে প্রকৌশলীরা বুঝতে পারবেন কোনো এলাকায় ভবন নির্মাণের আগে মাটি উন্নয়নের জন্য অতিরিক্ত বিনিয়োগ করা প্রয়োজন কি না।
জরুরি পরিষেবাগুলো ভূমিকম্প প্রতিরোধী করতে হবে : বিদ্যুৎ, গ্যাস, মোবাইল নেটওয়ার্ক, টেলিযোগাযোগ, পরিবহন ও পানি সরবরাহ— এই জীবনরক্ষাকারী (লাইফলাইন) সেবাগুলো ভূমিকম্প প্রতিরোধী করতে হবে। এ জন্য ঝুঁকি-সংবেদনশীল মানচিত্র এবং ভবন নির্মাণবিধি (বিল্ডিং কোড) অনুসারে এই কাঠামোগুলো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত। তা ছাড়া ভূমিকম্পের সময় আগুন লাগার মতো গৌণ দুর্যোগ (সেকেন্ডারি ডিজাস্টার) প্রতিরোধে জরুরি শাটডাউন প্রোটোকল প্রণয়ন করা দরকার, যাতে এসব সেবা দ্রুত বন্ধ করে বিপদ কমানো যায়।
শহরে প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করা : ফায়ার সার্ভিস বিভাগের অধীনে শহরভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী (আরবান ভলান্টিয়ার অক্সিলিয়ারি ফোর্স) গঠন ও পরিচালনা করা জরুরি। আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) অধীনে যেমন স্বেচ্ছাসেবক দল রয়েছে, ঠিক তেমনই শহরের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্যও এমন দল প্রয়োজন।
এই বাহিনীর সদস্যদের স্থানীয় জনগণের মধ্য থেকে বাছাই করা হবে। তাদের উদ্ধার কার্যক্রম (সার্চ অ্যান্ড রেস্কিউ) বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ফায়ার সার্ভিস স্টেশনগুলোতে উদ্ধার কাজে প্রয়োজনীয় কিছু সরঞ্জাম সংরক্ষণ করতে হবে।
সিটি করপোরেশন পর্যায়ে জরুরি পরিচালনা কেন্দ্র (ইওসি) প্রতিষ্ঠা করা : প্রতিটি সিটি করপোরেশনের অধীনে জরুরি পরিচালনা কেন্দ্র (ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার- ইওসি) স্থাপন করতে হবে।
এসব কেন্দ্র দক্ষ কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত হবে। আর ইওসি কার্যকর করার জন্য সঠিক কার্যপ্রণালি (প্রটোকল) নির্ধারণ করতে হবে।
ওপরের সুপারিশগুলো যদি আমরা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, তবে ভূমিকম্পজনিত ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব হবে।
আমরা গত কয়েক বছর ধরে এই বিষয়গুলো সরকারের কাছে তুলে ধরেছি, কিন্তু এখনো দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি মিয়ানমারে ঘটে যাওয়া ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আমাদের জন্য শেষ সতর্কবার্তা বা জাগরণের আহ্বান হতে পারে।
লেখক : অধ্যাপক, পুরকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
জনৈকা এনজিও নেত্রী ও বর্তমান সরকারের এক শক্তিশালী উপদেষ্টা সব রাজনীতিবিদের প্রতি প্রশ্ন রেখেছেন, ‘গত ৫৩ বছরে আপনারা কী করেছেন?’ তার এই স্পর্ধা দেখে স্তম্ভিত হলাম! ভাবতে লাগলাম, এই প্রশ্ন করার সাহস ও সুযোগটি তারা কেন পেলেন, কীভাবে পেলেন?
৩ ঘণ্টা আগেভারত অধিকৃত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত ও অনেকে আহত হওয়ার পর চিরবৈরী দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এখন চরমে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে দেশটির সঙ্গে সাড়ে ছয় দশক ধরে কার্যকর সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করাসহ কয়েকটি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
৪ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি নদী হচ্ছে ফেনী নদী। এটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত। নদীতীরের সংকীর্ণ অঞ্চল বাংলাদেশে জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে এক গুরুতর কৌশলগত বিষয় হয়ে উঠেছে।
৫ ঘণ্টা আগেপেছনের কথা বাদ, আমরা ২০০৮ সাল থেকে ধরি। আওয়ামী লীগের ‘দিনবদলের সনদ’, ‘রূপকল্প-২০৪১’, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’- এ রকম গালভরা হরেক রকম নামের অঙ্গীকারনামার কথা মনে আছে? কী ছিল না তাতে? ওইসব অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ অনেক আগেই এক মহাউন্নত আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত হতো।
১ দিন আগে