পাক-ভারত সংঘাত
ড. তাইমুর শামিল
পাকিস্তান বর্তমানে বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিকভাবে এমন একটি দেশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেটি কৌশলগতভাবে আধুনিক যুদ্ধবিদ্যার কৌশল গ্রহণ করেছে, বৈশ্বিক কূটনৈতিক জোটে যুক্ত হয়েছে এবং আঞ্চলিক সমর্থনও পাচ্ছে, যেগুলো থেকে ভারত স্পষ্টতই অনেকটা পিছিয়ে আছে। এর মধ্যেই পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে ভারত। পাল্টা হামলাও চালিয়েছে পাকিস্তান। এতে বেসামরিক লোকজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি ভারত পাঁচটি যুদ্ধবিমান হারিয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান।
ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর সৃষ্ট সংকটের প্রতি গভীরভাবে দৃষ্টি দিলে তিনটি দৃশ্যপট সামনে আসে, যা স্পষ্টতই পাকিস্তানের পক্ষে গেছে। প্রথমত. বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে কূটনৈতিক দিক থেকে পাকিস্তানের বিজয় হয়েছে। যেকোনো যুদ্ধ বা সংকটকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এ ব্যাপারে তাদের প্রতিক্রিয়া অর্থাৎ বিষয়টিকে সমর্থন বা প্রত্যাখ্যান করা বিবদমান পক্ষগুলোর জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
এ ব্যাপারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের উদাহরণ টানা যেতে পারে। বাইডেন প্রশাসনের আমলে রাশিয়াকে হাইলাইট করা হয়েছে বেশি। এ সময় বিশ্ব জনমত ছিল রাশিয়ার বিপক্ষে এবং কূটনৈতিকভাবে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও রাশিয়াকে আগ্রাসনকারী ও আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন ভঙ্গকারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়। কূটনীতি ও জনমতকে সেভাবেই সাজানো হয়। কাজেই যখনই কোনো সংকট তৈরি হয়, সেটিকে অবশ্যই বিশ্ব জনমতের ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহের প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে।
পেহেলগাম হামলার পর ভারত এটাকে তাদের পাকিস্তানবিরোধী অস্ত্র হিসেবে লুফে নেয় কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই। এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভারতের এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে এবং দেশটি কার্যত বিচ্ছিন্ন ও একঘরে হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতি ভারতের কূটনৈতিক ব্যর্থতায় নিমজ্জিত অবস্থানকেই স্পষ্ট করে তুলেছে।
পেহেলগাম হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ভারতের সমর্থনে তেমন কোনো মন্তব্য, বিবৃতি বা সমর্থন আসেনি। এটা অবশ্যই মনে রাখা দরকার, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন কানাডা ও আমেরিকায় অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা চালানোর পর দেশ দুটির কর্মকর্তারা ভারতের নিন্দা জানিয়েছেন। কাজেই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটা ভালো করেই জানে, কানাডা ও আমেরিকার মাটিতে ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করতে পারলে, তারা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে এর চেয়েও খারাপ কোনো ঘটনা ঘটাতে পারে।
অন্যদিকে, পাকিস্তান এমন একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যারা ভারতের বৈরিতা ও প্রতিকূলতার মুখে সংযম, আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়ে পাকিস্তান তার নিজের অবস্থানের জানান দিয়েছে। বিশেষ করে তালেবানের কাছে কাবুলের পতনের পর এই ভূমিকাটা বেশিই পালন করেছে পাকিস্তান। আফগান, তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় পাকিস্তানের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় ভারসাম্যমূলক অবস্থান গ্রহণ করে পাকিস্তান নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এর ফলে, শুধু বৃহৎ শক্তিগুলোরই নয়, আঞ্চলিক দেশগুলোর সমর্থনও পেয়েছে পাকিস্তান। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠা পাকিস্তানের গতিশীল কূটনীতির বিজয়ের আরেকটি বড় উদাহরণ।
সামরিক দিক থেকেও পাকিস্তান আত্মবিশ্বাস ও সংযমের বড় পরিচয় দিচ্ছে। দেশটি সীমিত ও অপ্রচলিত- এ দুই ধরনের যুদ্ধেই নিজের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। বিগত বছরগুলোয় চীন ও অন্য বড় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে পাকিস্তান তার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সমরাস্ত্রের ভান্ডার সমৃদ্ধ করেছে। একই সঙ্গে কয়েকটি দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সম্পর্কও জোরদার করেছে পাকিস্তান। একইভাবে দেশটির বিমান ও নৌবাহিনীও যেকোনো সংকটে তাদের সক্ষমতা ও সদা প্রস্তুতির চিত্র তুলে ধরেছে। তিন বাহিনীর এই সক্ষমতা ও সমন্বিত প্রস্তুতি পাকিস্তানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী একটি সামরিক শক্তিধর দেশ হিসেবে তুলে ধরেছে।
সামরিক শক্তির ভারসাম্যের সঙ্গে সংগতি রেখে পাকিস্তান কৌশলগতভাবে তার রাজনৈতিক পরিবেশকেও তৈরি করছে। দেশটির চার পাশের যেকোনো পরিবর্তিত পরিস্থিতির মোকাবিলায় নিজেদের অবস্থানেও পরিবর্তন আসার সক্ষমতা তৈরি করাই এ কৌশলের লক্ষ্য। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও দেশের সামরিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত গতিশীলতার সঙ্গে সংগতি রেখে নিজেদের কৌশলগত সক্ষমতা তৈরি করছে।
কয়েকটি ক্ষেত্রে পাকিস্তানের কৌশলগত নজর বৃদ্ধি প্রয়োজন। প্রথমত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আরো বাড়ানোর জন্য পাকিস্তানকে তার পররাষ্ট্রনীতির আচরণ ও কৌশলের বহুমুখীকরণ করতে হবে। পররাষ্ট্রবিষয়ক নীতি নয়, বরং ‘কৌশল’ হতে হবে পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠানগুলো, বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক অগ্রাধিকার। আমি একাধিকবার বিশেষ জোর দিয়ে বলেছি, সাধারণত পররাষ্ট্রনীতির কৌশলের সঙ্গে অর্থ বা আর্থিক সম্পদের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং বিষয়গুলো সম্পর্কে আইডিয়া ও কৌশলগত আন্ডারস্ট্যান্ডিং গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো দেশ, সংগঠন বা ব্যবসা কৌশল ও সুস্পষ্ট ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছাড়া চলতে পারে না। পাকিস্তানের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। পাকিস্তানেরও কৌশল ও সুস্পষ্ট ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থাকতে হবে, এটা প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত. যেকোনো সময় যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানকে তার অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও শক্তিকে অবশ্যই বহুমুখী করার পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থনৈতিক শক্তিকে কোনোভাবেই উপেক্ষা বা অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখা যাবে না, বিশেষ করে বিশ্ব যখন বহু মেরুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। পাকিস্তানকে অবশ্যই এ অঞ্চলের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মিল রেখে তার অবস্থান ও নীতি পরিবর্তন এবং সমন্বয় করতে হবে। একই সঙ্গে অর্থনীতিকে বহুমুখী ও চাঙা করার জন্য সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে।
শেষ কথা হচ্ছে, প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতা, আমলাতান্ত্রিক কাঠামো ও সদিচ্ছার অভাব একটি দক্ষ রাষ্ট্রের যেকোনো পরিকল্পনা ও সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিতে পারে। কাজেই পাকিস্তানের প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি দক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যেখানে সব সুযোগকে দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে। একই সঙ্গে লাগবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমেই পাকিস্তান আরো শক্তিশালী ও দক্ষ একটি রাষ্ট্র হয়ে উঠবে। এই মুহূর্তে পাকিস্তানের এটাই প্রয়োজন। তাহলেই পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতাদের স্বপ্নপূরণ হবে।
লেখক : যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশ্লেষক
জিও নিউজ থেকে অনুবাদ : মোতালেব জামালী
পাকিস্তান বর্তমানে বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিকভাবে এমন একটি দেশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেটি কৌশলগতভাবে আধুনিক যুদ্ধবিদ্যার কৌশল গ্রহণ করেছে, বৈশ্বিক কূটনৈতিক জোটে যুক্ত হয়েছে এবং আঞ্চলিক সমর্থনও পাচ্ছে, যেগুলো থেকে ভারত স্পষ্টতই অনেকটা পিছিয়ে আছে। এর মধ্যেই পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে ভারত। পাল্টা হামলাও চালিয়েছে পাকিস্তান। এতে বেসামরিক লোকজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি ভারত পাঁচটি যুদ্ধবিমান হারিয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান।
ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর সৃষ্ট সংকটের প্রতি গভীরভাবে দৃষ্টি দিলে তিনটি দৃশ্যপট সামনে আসে, যা স্পষ্টতই পাকিস্তানের পক্ষে গেছে। প্রথমত. বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে কূটনৈতিক দিক থেকে পাকিস্তানের বিজয় হয়েছে। যেকোনো যুদ্ধ বা সংকটকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এ ব্যাপারে তাদের প্রতিক্রিয়া অর্থাৎ বিষয়টিকে সমর্থন বা প্রত্যাখ্যান করা বিবদমান পক্ষগুলোর জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
এ ব্যাপারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের উদাহরণ টানা যেতে পারে। বাইডেন প্রশাসনের আমলে রাশিয়াকে হাইলাইট করা হয়েছে বেশি। এ সময় বিশ্ব জনমত ছিল রাশিয়ার বিপক্ষে এবং কূটনৈতিকভাবে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও রাশিয়াকে আগ্রাসনকারী ও আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন ভঙ্গকারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়। কূটনীতি ও জনমতকে সেভাবেই সাজানো হয়। কাজেই যখনই কোনো সংকট তৈরি হয়, সেটিকে অবশ্যই বিশ্ব জনমতের ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহের প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে।
পেহেলগাম হামলার পর ভারত এটাকে তাদের পাকিস্তানবিরোধী অস্ত্র হিসেবে লুফে নেয় কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই। এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভারতের এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে এবং দেশটি কার্যত বিচ্ছিন্ন ও একঘরে হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতি ভারতের কূটনৈতিক ব্যর্থতায় নিমজ্জিত অবস্থানকেই স্পষ্ট করে তুলেছে।
পেহেলগাম হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ভারতের সমর্থনে তেমন কোনো মন্তব্য, বিবৃতি বা সমর্থন আসেনি। এটা অবশ্যই মনে রাখা দরকার, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন কানাডা ও আমেরিকায় অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা চালানোর পর দেশ দুটির কর্মকর্তারা ভারতের নিন্দা জানিয়েছেন। কাজেই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটা ভালো করেই জানে, কানাডা ও আমেরিকার মাটিতে ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করতে পারলে, তারা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে এর চেয়েও খারাপ কোনো ঘটনা ঘটাতে পারে।
অন্যদিকে, পাকিস্তান এমন একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যারা ভারতের বৈরিতা ও প্রতিকূলতার মুখে সংযম, আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়ে পাকিস্তান তার নিজের অবস্থানের জানান দিয়েছে। বিশেষ করে তালেবানের কাছে কাবুলের পতনের পর এই ভূমিকাটা বেশিই পালন করেছে পাকিস্তান। আফগান, তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় পাকিস্তানের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় ভারসাম্যমূলক অবস্থান গ্রহণ করে পাকিস্তান নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এর ফলে, শুধু বৃহৎ শক্তিগুলোরই নয়, আঞ্চলিক দেশগুলোর সমর্থনও পেয়েছে পাকিস্তান। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠা পাকিস্তানের গতিশীল কূটনীতির বিজয়ের আরেকটি বড় উদাহরণ।
সামরিক দিক থেকেও পাকিস্তান আত্মবিশ্বাস ও সংযমের বড় পরিচয় দিচ্ছে। দেশটি সীমিত ও অপ্রচলিত- এ দুই ধরনের যুদ্ধেই নিজের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। বিগত বছরগুলোয় চীন ও অন্য বড় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে পাকিস্তান তার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সমরাস্ত্রের ভান্ডার সমৃদ্ধ করেছে। একই সঙ্গে কয়েকটি দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সম্পর্কও জোরদার করেছে পাকিস্তান। একইভাবে দেশটির বিমান ও নৌবাহিনীও যেকোনো সংকটে তাদের সক্ষমতা ও সদা প্রস্তুতির চিত্র তুলে ধরেছে। তিন বাহিনীর এই সক্ষমতা ও সমন্বিত প্রস্তুতি পাকিস্তানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী একটি সামরিক শক্তিধর দেশ হিসেবে তুলে ধরেছে।
সামরিক শক্তির ভারসাম্যের সঙ্গে সংগতি রেখে পাকিস্তান কৌশলগতভাবে তার রাজনৈতিক পরিবেশকেও তৈরি করছে। দেশটির চার পাশের যেকোনো পরিবর্তিত পরিস্থিতির মোকাবিলায় নিজেদের অবস্থানেও পরিবর্তন আসার সক্ষমতা তৈরি করাই এ কৌশলের লক্ষ্য। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও দেশের সামরিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত গতিশীলতার সঙ্গে সংগতি রেখে নিজেদের কৌশলগত সক্ষমতা তৈরি করছে।
কয়েকটি ক্ষেত্রে পাকিস্তানের কৌশলগত নজর বৃদ্ধি প্রয়োজন। প্রথমত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আরো বাড়ানোর জন্য পাকিস্তানকে তার পররাষ্ট্রনীতির আচরণ ও কৌশলের বহুমুখীকরণ করতে হবে। পররাষ্ট্রবিষয়ক নীতি নয়, বরং ‘কৌশল’ হতে হবে পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠানগুলো, বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক অগ্রাধিকার। আমি একাধিকবার বিশেষ জোর দিয়ে বলেছি, সাধারণত পররাষ্ট্রনীতির কৌশলের সঙ্গে অর্থ বা আর্থিক সম্পদের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং বিষয়গুলো সম্পর্কে আইডিয়া ও কৌশলগত আন্ডারস্ট্যান্ডিং গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো দেশ, সংগঠন বা ব্যবসা কৌশল ও সুস্পষ্ট ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছাড়া চলতে পারে না। পাকিস্তানের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। পাকিস্তানেরও কৌশল ও সুস্পষ্ট ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থাকতে হবে, এটা প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত. যেকোনো সময় যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানকে তার অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও শক্তিকে অবশ্যই বহুমুখী করার পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থনৈতিক শক্তিকে কোনোভাবেই উপেক্ষা বা অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখা যাবে না, বিশেষ করে বিশ্ব যখন বহু মেরুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। পাকিস্তানকে অবশ্যই এ অঞ্চলের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মিল রেখে তার অবস্থান ও নীতি পরিবর্তন এবং সমন্বয় করতে হবে। একই সঙ্গে অর্থনীতিকে বহুমুখী ও চাঙা করার জন্য সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে।
শেষ কথা হচ্ছে, প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতা, আমলাতান্ত্রিক কাঠামো ও সদিচ্ছার অভাব একটি দক্ষ রাষ্ট্রের যেকোনো পরিকল্পনা ও সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিতে পারে। কাজেই পাকিস্তানের প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি দক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যেখানে সব সুযোগকে দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে। একই সঙ্গে লাগবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমেই পাকিস্তান আরো শক্তিশালী ও দক্ষ একটি রাষ্ট্র হয়ে উঠবে। এই মুহূর্তে পাকিস্তানের এটাই প্রয়োজন। তাহলেই পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতাদের স্বপ্নপূরণ হবে।
লেখক : যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশ্লেষক
জিও নিউজ থেকে অনুবাদ : মোতালেব জামালী
ভারতে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির উত্থান ইসরাইলের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক গভীর করে তোলে। ইসরাইলের মতো সম্প্রসারণবাদী ও বর্ণবাদী নীতি এখন ভারতের নিরাপত্তা কৌশলের অংশ হয়ে উঠেছে।
১ দিন আগে২০১১ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং গুরুশরণ কাউরসহ সর্বমোট ১৩৬ সফরসঙ্গীসহ ঢাকা সফরে আসেন। তার সঙ্গে আসেন প্রতিবেশী রাজ্য মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা, আসামের তরুণ গগৈ, ত্রিপুরার মানিক সরকার ও মিজোরামের লাল খান হাওলা।
১ দিন আগেদেশবাসী এতদিনে ড. ইউনূস সরকারের মধ্যে অতিমাত্রায় গরম এক শিশুপীরকে খুঁজে পেয়েছে। কিছুদিন আগে ঘটা করে ২০২৪-এর আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে তাকে ঘোষণা করা হয়েছিল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেহাত নাবালক এই শিশুটির মধ্যে এমন কোনো প্রতিভা এযাবৎ পরিলক্ষিত হয়নি।
২ দিন আগেগাজায় জায়নিস্ট ইসরাইলের বর্বর সেনাবাহিনীর চলমান গণহত্যা নিয়ে গত সপ্তাহে মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছিলাম। তখন জানতাম না, বিশ্বশান্তির জন্য ক্রমেই হুমকি হয়ে ওঠা আরেকটি দেশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াকে এক ভয়ংকর পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কার দিকে ঠেলে দিতে যাচ্ছে।
২ দিন আগে