মেহেদী হাসান
বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ মিয়ানমারে তাদের নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়া।
মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পর জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের জন্য কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আরাকান বা রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৯০ ভাগ এলাকা বর্তমানে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। ফলে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের সফলতা এখন অনেকটা নির্ভর করছে আরাকান আর্মির সঙ্গে বোঝাপড়ার ওপর।
তা ছাড়া ভবিষ্যতে আরাকান কি কোনো স্বাধীন দেশে রূপ নেয়, না মিয়ানমারে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত এলাকা হিসেবে বিরাজ করে, সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আরাকান স্বাধীন হচ্ছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হলেও আরাকান আর্মির প্রধান মেজর জেনারেল তোয়ান ম্রাত নাইং এখনো আরাকানের স্বাধীনতার বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেননি। তিনি আরাকানের স্বাধীনতা চান কি নাÑ এ বিষয়ে ২০২২ সালে এশিয়া টাইমসের পক্ষ থেকে তার কাছে স্পষ্ট করে জানতে চাইলে তিনি ‘সেলফ-ডিটারমিনেশন এবং সভরেনটি’র কথা জানান। ফেডারেল মিয়ানমারে অধীনে যদি আরাকানের রাজনৈতিক মর্যাদা না পাওয়া যায়, তাহলে তারা নিজেদের মতো করে আরাকানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশে পরিণত করবেন বলেও জানান তিনি।
আরাকান আর্মি প্রধান সরাসরি স্বাধীন আরাকানের কথা না বললেও বাস্তবে মিয়ানমার জান্তা সরকারের বর্তমানে যে শোচনীয় অবস্থা, তাতে আরাকান আর্মি যেকোনো সময় আরাকানকে সম্পূর্ণ মুক্ত করতে সক্ষম। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আগে ভবিষ্যতে আরাকানের অবস্থান কী হয়, সেটা যেমন নিশ্চিত হওয়া দরকার, তেমনি নিশ্চিত হতে হবে মিয়ানমারে মিয়ানমার জান্তার সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ বিষয়েও।
পুরো মিয়ানমার বর্তমানে সম্পূর্ণ দুভাগে বিভক্ত। একদিকে মিয়ানমারের পুরো জনগণ, অন্যদিকে মিয়ানমার আর্মি। মিয়ানমারের সব বিদ্রোহী বাহিনী এবং জনগণ পণ করেছে মিয়ানমারে হয় তারা থাকবে, না হয় মিয়ানমারের আর্মি থাকবে। মিয়ানমারের আর্মিকে ক্ষমতা থেকে না সরানো পর্যন্ত এবার আর তারা কোনো অবস্থাতেই ঘরে ফিরবে না। মিয়ানমারকে তারা চিরদিনের জন্য মিয়ানমার আর্মির শাসন থেকে মুক্ত করার জন্য অঙ্গীকার করে মরণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমার আর্মি কোনো অবস্থাতেই মিয়ানমারের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না বহু বছর ধরে।
বস্তুত চীন ও রাশিয়ার সমর্থনে কোনোমতে ক্ষমতায় টিকে আছে মিয়ানমার জান্তা সরকার। তাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে এখানে অন্যতম ফ্যাক্টর হলো চীন। মিয়ানমারে ভবিষ্যতে কি আর্মি ক্ষমতায় থাকবে, না কি যুদ্ধরত সব বিদ্রোহী বাহিনী মিলে মিয়ানমারে একটি নতুন ইউনিয়ন বা ফেডারেল সরকার গঠন করবে, সেটা বোঝাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য। আর এসব বিষয় পরিষ্কার হতে হলে বিবেচনায় রাখতে হবে মিয়ানমারে চীনের ভূমিকার বিষয়। কারণ মিয়ানমারে মিয়ানমার আর্মিকে যেমন সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে চীন, তেমনি আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধরত প্রায় সব বিদ্রোহী বাহিনীকেও সহায়তা করে চীন।
২০১৭ সালে আরাকানে রোহিঙ্গা নিধনের পেছনে যেমন ছিল রোহিঙ্গাদের প্রতি বর্মীদের ধর্মীয় ও জাতিগত দীর্ঘ বিদ্বেষ, তেমনি এর পেছনে ভূমিকা পালন করেছে আরাকান ঘিরে বিপুল তেল-গ্যাসের সন্ধান ও আরাকানের ভূকৌশলগত গুরুত্ব ঘিরে নানা বৈশ্বিক স্বার্থ।
রাখাইন থেকে তেল-গ্যাস চীনে নিয়ে যাওয়ার জন্য সিনো-মিয়ানমার তেল-গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণে ২০০৫ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করে চীন। ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি অনুযায়ী পাইপলাইনের মাধ্যমে সঞ্চালিত গ্যাসের ২০ ভাগ পাবে মিয়ানমার। বাকিটা যাবে চীনে। ২০১৩ সালের ২১ অক্টোবর চীনে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। রাখাইনের পাইপলাইন দিয়ে বছরে ১২ বিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস সঞ্চালিত হচ্ছে চীনে। আকিয়াব বন্দর থেকে কুনমিং পর্যন্ত তেল ও গ্যাস পাইপলাইন বসাতে চীনকে বিনিয়োগ করতে হয়েছে ২ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ডলার। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পরীক্ষামূলকভাবে তেল সরবরাহ শুরু হয় চীনে। দিনে ৪ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল তেল সঞ্চালনের ক্ষমতা রয়েছে এ পাইপলাইনের।
চীন রাখাইনে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ আরো অনেক প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগ চুক্তি করেছে মিয়ানমারের সঙ্গে।
২০২২ সালে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আরাকান আর্মি প্রধান তোয়ান ম্রাত নাইং বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেন। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান, তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়েও ইতিবাচক মত দেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান আরাকান আর্মি বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য। কিন্তু ভারতের প্রতি নতজানু ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার এ বিষয়ে কোনো সাড়া দেয়নি। কারণ আরাকান আর্মির ওই আহ্বান ছিল ভারতের স্বার্থের বিপরীত। উপরন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া কয়েক শ জান্তা সেনাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়ে কুখ্যাত জান্তা সরকারের পক্ষ নেয় হাসিনা সরকার।
মিয়ানমার জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত অং সান সু চির দলের নেতৃত্বে গঠিত বিদ্রোহী সরকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্মেন্টের (এনইউজি) পক্ষ থেকেও ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের ঘোষণায় বলা হয়, তারা জান্তা সরকারকে হটাতে পারলে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেবে।
কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আরাকান আর্মি ও এনইউজির সেই ঘোষণার পর পরিস্থিতি অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। সম্প্রতি মিয়ানমার আর্মি রাখাইনের রাজধানী আকিয়াবসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্দি শিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের অস্ত্রের মুখে জোর করে যুদ্ধে নামায় আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে। এর মাধ্যমে আরাকান আর্মিকে ক্ষেপিয়ে তোলা হয় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে। একপর্যায়ে আরাকান আর্মিও সম্প্রতি রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধন শুরু করে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় চালায় হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও, ধ্বংস এবং উচ্ছেদ অভিযান। যার ফলে সম্প্রতি কয়েক দফায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশে করেছে।
যেহেতু আরাকান আর মিয়ানমার আর্মির নিয়ন্ত্রণে নেই, তখন মিয়ানমার আর্মি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা খুব একটা গুরুত্ব বহন করে না। মিয়ানমার আর্মি এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে যেন কোনো ধরনের ধূর্ততার আশ্রয় নিতে না পারে এবং বাংলাদেশ সরকার ও রোহিঙ্গাদের নতুন করে আরাকান আর্মির মুখোমুখি দাঁড় করাতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে অগ্রসর হতে হবে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিনিময়ে মিয়ানমারের জান্তা সরকার যেন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সমর্থন বা অন্যায্য সুবিধা আদায় করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ রাখা অপরিহার্য।
শুধু আরাকান নয়, পুরো মিয়ানমারের ৬০ ভাগের বেশি এলাকা বর্তমানে বিভিন্ন বিদ্রোহী বাহিনীর দখলে। মিয়ানমারে এখন রয়েছে রাষ্ট্রের ভেতর অনেক রাষ্ট্র। সীমান্তবর্তী সব অঞ্চল বহু বছর ধরে নিয়ন্ত্রণ করছে বিদ্রোহীরা। সেখানে রয়েছে তাদের নিজস্ব শাসনব্যবস্থা। ধ্বংসাত্মক বিমান হামলা ছাড়া মিয়ানমার আর্মির কোনো এখতিয়ার নেই বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন এলাকায়। মিয়ানমার আর্মি বর্তমানে চরম দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। রোহিঙ্গাসহ যেকোনো বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে এসব বিষয়।
মিয়ানমার বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধকবলিত দেশ। মিয়ানমারে ১৪টি রাজ্য ও অঞ্চলে কমপক্ষে ২১টি শক্তিশালী বিদ্রোহী গ্রুপ রয়েছে। এদের অনেক গ্রুপ ৬৭ বছর ধরে যুদ্ধ করছে মিয়ানমার আর্মির বিরুদ্ধে। কারো দাবি পূর্ণ স্বাধীনতা, কারো দাবি পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন। ফলে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বস্তুত পুরো মিয়ানমারের ওপর কখনোই পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল না মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের। স্বাধীনতা লাভের আগে ১৯৪৭ সালে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহাসিক প্যাংলং সম্মেলনে। এ সম্মেলনে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয় মিয়ানমারের সব জাতিগোষ্ঠী নিয়ে গঠিত হবে একটি বার্মা ইউনিয়ন। ১০ বছর পর শানরাজ্য ইচ্ছা করলে পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হবে অথবা বার্মা ইউনিয়নে থাকবে। সীমান্তবর্তী সব রাজ্যকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দেওয়ারও চুক্তি হয় তখন।
কিন্তু মিয়ানমার আর্মি ১৯৫৮ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে এবং বাতিল করে ঐতিহাসিক প্যাংলং চুক্তি। মিয়ানমারের সব সীমান্তবর্তী অঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ বিদ্রোহ করে এবং শুরু করে সশস্ত্র যুদ্ধ। আজ পর্যন্ত চলছে সেই যুদ্ধ। অন্যদিকে ১৯৫৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মিয়ানমারে চলছে সেনাশাসন। মাঝে নামে মাত্র অং সান সু চি কিছুদিন ক্ষমতায় ছিলেন। ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে সু চির দল জয়ী হয় এবং ক্ষমতায় বসার আগেই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আবার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমার আর্মি। এরপর ওই বছরই সেপ্টেম্বর মাস থেকে মিয়ানমারের কয়েক দশক ধরে যুদ্ধরত সব বিদ্রোহী বাহিনী সু চির দলের নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহযুদ্ধ শুরু করে।
মিয়ানমার জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। মিয়ানমারের বর্তমান সেনাপ্রধান মিন অং লাইং ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ফেসবুকে নিজের সরকারি পেজে জানান, রোহিঙ্গা নামে কোনো জাতিগোষ্ঠী মিয়ানমারে ছিল না। রোহিঙ্গারা বাঙালি। অথচ তারা মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দাবি করছে। জাতীয় স্বার্থে তিনি সমগ্র মিয়ানমারবাসীকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
প্রায় শতাব্দীকাল ধরে অনবরত মিথ্যা প্রচার চালানো হয়েছে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নয়, তারা বাংলাদেশ থেকে এসেছে। মিয়ানমার শুধু বর্মী বৌদ্ধদের জন্য, অন্য কারো জায়গা হবে না এ দেশে। রোহিঙ্গারা ভয়ংকর সন্ত্রাসী। মুসলমানদের জনসংখ্যা খুব দ্রুত বাড়ছে রাখাইনসহ পুরো মিয়ানমারে। এখনই তাদের থামানো না গেলে এ দেশ একদিন তারা দখল করে নেবে। তাই তাদের দমন করতে হবে যেকোনোভাবেই হোক।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রথম বাতিল করা হয় ১৯৬২ সালের ২ মার্চ জেনারেল নে উইন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর। এরপর থেকে মিয়ানমার সরকার আরাকান থেকে রোহিঙ্গা জাতিকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার জন্য একের পর এক পরিচালনা করে গণহত্যাসহ জাতিগত নিধনের নৃশংসতম সব পথ।
মিয়ানমার সরকার ১৯৮২ সালে আইন করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করে। এরপর রোহিঙ্গাদের বাদ দেওয়া হয়েছে সব সরকারি চাকরি থেকে। এমনকি মিয়ানমারের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অধিকার নেই তাদের। নিজ গ্রামেরও বাইরে যেতে পারে না রোহিঙ্গারা। বিয়ে করতে পারে না সরকারি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া। ধর্মের ভিত্তিতে বিয়ে করলেও সন্তানের পরিচয় দিতে হয় অন্য কোনো দম্পতির নামে।
এমনকি দাদা দাদিকে বাবা-মা বলে পরিচয় দিতে হয় অনেক সন্তানকে। রোহিঙ্গা শিশুদের জন্মনিবন্ধন করা হয় না। দেওয়া হয় না কোনো পাসপোর্ট। বারবার নিষ্ঠুরতম গণহত্যা চালিয়ে একটি অসহায় নির্জীব জাতিতে পরিণত করা হয়েছে তাদের। রোহিঙ্গারা আজ বিশ্বে পরিচিত রাষ্ট্রহীন এক জনগোষ্ঠী হিসেবে।
বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ মিয়ানমারে তাদের নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়া।
মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পর জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের জন্য কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আরাকান বা রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৯০ ভাগ এলাকা বর্তমানে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। ফলে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের সফলতা এখন অনেকটা নির্ভর করছে আরাকান আর্মির সঙ্গে বোঝাপড়ার ওপর।
তা ছাড়া ভবিষ্যতে আরাকান কি কোনো স্বাধীন দেশে রূপ নেয়, না মিয়ানমারে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত এলাকা হিসেবে বিরাজ করে, সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আরাকান স্বাধীন হচ্ছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হলেও আরাকান আর্মির প্রধান মেজর জেনারেল তোয়ান ম্রাত নাইং এখনো আরাকানের স্বাধীনতার বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেননি। তিনি আরাকানের স্বাধীনতা চান কি নাÑ এ বিষয়ে ২০২২ সালে এশিয়া টাইমসের পক্ষ থেকে তার কাছে স্পষ্ট করে জানতে চাইলে তিনি ‘সেলফ-ডিটারমিনেশন এবং সভরেনটি’র কথা জানান। ফেডারেল মিয়ানমারে অধীনে যদি আরাকানের রাজনৈতিক মর্যাদা না পাওয়া যায়, তাহলে তারা নিজেদের মতো করে আরাকানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশে পরিণত করবেন বলেও জানান তিনি।
আরাকান আর্মি প্রধান সরাসরি স্বাধীন আরাকানের কথা না বললেও বাস্তবে মিয়ানমার জান্তা সরকারের বর্তমানে যে শোচনীয় অবস্থা, তাতে আরাকান আর্মি যেকোনো সময় আরাকানকে সম্পূর্ণ মুক্ত করতে সক্ষম। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আগে ভবিষ্যতে আরাকানের অবস্থান কী হয়, সেটা যেমন নিশ্চিত হওয়া দরকার, তেমনি নিশ্চিত হতে হবে মিয়ানমারে মিয়ানমার জান্তার সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ বিষয়েও।
পুরো মিয়ানমার বর্তমানে সম্পূর্ণ দুভাগে বিভক্ত। একদিকে মিয়ানমারের পুরো জনগণ, অন্যদিকে মিয়ানমার আর্মি। মিয়ানমারের সব বিদ্রোহী বাহিনী এবং জনগণ পণ করেছে মিয়ানমারে হয় তারা থাকবে, না হয় মিয়ানমারের আর্মি থাকবে। মিয়ানমারের আর্মিকে ক্ষমতা থেকে না সরানো পর্যন্ত এবার আর তারা কোনো অবস্থাতেই ঘরে ফিরবে না। মিয়ানমারকে তারা চিরদিনের জন্য মিয়ানমার আর্মির শাসন থেকে মুক্ত করার জন্য অঙ্গীকার করে মরণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমার আর্মি কোনো অবস্থাতেই মিয়ানমারের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না বহু বছর ধরে।
বস্তুত চীন ও রাশিয়ার সমর্থনে কোনোমতে ক্ষমতায় টিকে আছে মিয়ানমার জান্তা সরকার। তাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে এখানে অন্যতম ফ্যাক্টর হলো চীন। মিয়ানমারে ভবিষ্যতে কি আর্মি ক্ষমতায় থাকবে, না কি যুদ্ধরত সব বিদ্রোহী বাহিনী মিলে মিয়ানমারে একটি নতুন ইউনিয়ন বা ফেডারেল সরকার গঠন করবে, সেটা বোঝাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য। আর এসব বিষয় পরিষ্কার হতে হলে বিবেচনায় রাখতে হবে মিয়ানমারে চীনের ভূমিকার বিষয়। কারণ মিয়ানমারে মিয়ানমার আর্মিকে যেমন সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে চীন, তেমনি আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধরত প্রায় সব বিদ্রোহী বাহিনীকেও সহায়তা করে চীন।
২০১৭ সালে আরাকানে রোহিঙ্গা নিধনের পেছনে যেমন ছিল রোহিঙ্গাদের প্রতি বর্মীদের ধর্মীয় ও জাতিগত দীর্ঘ বিদ্বেষ, তেমনি এর পেছনে ভূমিকা পালন করেছে আরাকান ঘিরে বিপুল তেল-গ্যাসের সন্ধান ও আরাকানের ভূকৌশলগত গুরুত্ব ঘিরে নানা বৈশ্বিক স্বার্থ।
রাখাইন থেকে তেল-গ্যাস চীনে নিয়ে যাওয়ার জন্য সিনো-মিয়ানমার তেল-গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণে ২০০৫ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করে চীন। ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি অনুযায়ী পাইপলাইনের মাধ্যমে সঞ্চালিত গ্যাসের ২০ ভাগ পাবে মিয়ানমার। বাকিটা যাবে চীনে। ২০১৩ সালের ২১ অক্টোবর চীনে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। রাখাইনের পাইপলাইন দিয়ে বছরে ১২ বিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস সঞ্চালিত হচ্ছে চীনে। আকিয়াব বন্দর থেকে কুনমিং পর্যন্ত তেল ও গ্যাস পাইপলাইন বসাতে চীনকে বিনিয়োগ করতে হয়েছে ২ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ডলার। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পরীক্ষামূলকভাবে তেল সরবরাহ শুরু হয় চীনে। দিনে ৪ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল তেল সঞ্চালনের ক্ষমতা রয়েছে এ পাইপলাইনের।
চীন রাখাইনে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ আরো অনেক প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগ চুক্তি করেছে মিয়ানমারের সঙ্গে।
২০২২ সালে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আরাকান আর্মি প্রধান তোয়ান ম্রাত নাইং বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেন। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান, তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়েও ইতিবাচক মত দেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান আরাকান আর্মি বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য। কিন্তু ভারতের প্রতি নতজানু ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার এ বিষয়ে কোনো সাড়া দেয়নি। কারণ আরাকান আর্মির ওই আহ্বান ছিল ভারতের স্বার্থের বিপরীত। উপরন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া কয়েক শ জান্তা সেনাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়ে কুখ্যাত জান্তা সরকারের পক্ষ নেয় হাসিনা সরকার।
মিয়ানমার জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত অং সান সু চির দলের নেতৃত্বে গঠিত বিদ্রোহী সরকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্মেন্টের (এনইউজি) পক্ষ থেকেও ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের ঘোষণায় বলা হয়, তারা জান্তা সরকারকে হটাতে পারলে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেবে।
কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আরাকান আর্মি ও এনইউজির সেই ঘোষণার পর পরিস্থিতি অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। সম্প্রতি মিয়ানমার আর্মি রাখাইনের রাজধানী আকিয়াবসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্দি শিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের অস্ত্রের মুখে জোর করে যুদ্ধে নামায় আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে। এর মাধ্যমে আরাকান আর্মিকে ক্ষেপিয়ে তোলা হয় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে। একপর্যায়ে আরাকান আর্মিও সম্প্রতি রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধন শুরু করে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় চালায় হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও, ধ্বংস এবং উচ্ছেদ অভিযান। যার ফলে সম্প্রতি কয়েক দফায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশে করেছে।
যেহেতু আরাকান আর মিয়ানমার আর্মির নিয়ন্ত্রণে নেই, তখন মিয়ানমার আর্মি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা খুব একটা গুরুত্ব বহন করে না। মিয়ানমার আর্মি এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে যেন কোনো ধরনের ধূর্ততার আশ্রয় নিতে না পারে এবং বাংলাদেশ সরকার ও রোহিঙ্গাদের নতুন করে আরাকান আর্মির মুখোমুখি দাঁড় করাতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে অগ্রসর হতে হবে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিনিময়ে মিয়ানমারের জান্তা সরকার যেন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সমর্থন বা অন্যায্য সুবিধা আদায় করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ রাখা অপরিহার্য।
শুধু আরাকান নয়, পুরো মিয়ানমারের ৬০ ভাগের বেশি এলাকা বর্তমানে বিভিন্ন বিদ্রোহী বাহিনীর দখলে। মিয়ানমারে এখন রয়েছে রাষ্ট্রের ভেতর অনেক রাষ্ট্র। সীমান্তবর্তী সব অঞ্চল বহু বছর ধরে নিয়ন্ত্রণ করছে বিদ্রোহীরা। সেখানে রয়েছে তাদের নিজস্ব শাসনব্যবস্থা। ধ্বংসাত্মক বিমান হামলা ছাড়া মিয়ানমার আর্মির কোনো এখতিয়ার নেই বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন এলাকায়। মিয়ানমার আর্মি বর্তমানে চরম দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। রোহিঙ্গাসহ যেকোনো বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে এসব বিষয়।
মিয়ানমার বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধকবলিত দেশ। মিয়ানমারে ১৪টি রাজ্য ও অঞ্চলে কমপক্ষে ২১টি শক্তিশালী বিদ্রোহী গ্রুপ রয়েছে। এদের অনেক গ্রুপ ৬৭ বছর ধরে যুদ্ধ করছে মিয়ানমার আর্মির বিরুদ্ধে। কারো দাবি পূর্ণ স্বাধীনতা, কারো দাবি পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন। ফলে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বস্তুত পুরো মিয়ানমারের ওপর কখনোই পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল না মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের। স্বাধীনতা লাভের আগে ১৯৪৭ সালে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহাসিক প্যাংলং সম্মেলনে। এ সম্মেলনে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয় মিয়ানমারের সব জাতিগোষ্ঠী নিয়ে গঠিত হবে একটি বার্মা ইউনিয়ন। ১০ বছর পর শানরাজ্য ইচ্ছা করলে পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হবে অথবা বার্মা ইউনিয়নে থাকবে। সীমান্তবর্তী সব রাজ্যকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দেওয়ারও চুক্তি হয় তখন।
কিন্তু মিয়ানমার আর্মি ১৯৫৮ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে এবং বাতিল করে ঐতিহাসিক প্যাংলং চুক্তি। মিয়ানমারের সব সীমান্তবর্তী অঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ বিদ্রোহ করে এবং শুরু করে সশস্ত্র যুদ্ধ। আজ পর্যন্ত চলছে সেই যুদ্ধ। অন্যদিকে ১৯৫৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মিয়ানমারে চলছে সেনাশাসন। মাঝে নামে মাত্র অং সান সু চি কিছুদিন ক্ষমতায় ছিলেন। ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে সু চির দল জয়ী হয় এবং ক্ষমতায় বসার আগেই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আবার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমার আর্মি। এরপর ওই বছরই সেপ্টেম্বর মাস থেকে মিয়ানমারের কয়েক দশক ধরে যুদ্ধরত সব বিদ্রোহী বাহিনী সু চির দলের নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহযুদ্ধ শুরু করে।
মিয়ানমার জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। মিয়ানমারের বর্তমান সেনাপ্রধান মিন অং লাইং ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ফেসবুকে নিজের সরকারি পেজে জানান, রোহিঙ্গা নামে কোনো জাতিগোষ্ঠী মিয়ানমারে ছিল না। রোহিঙ্গারা বাঙালি। অথচ তারা মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দাবি করছে। জাতীয় স্বার্থে তিনি সমগ্র মিয়ানমারবাসীকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
প্রায় শতাব্দীকাল ধরে অনবরত মিথ্যা প্রচার চালানো হয়েছে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নয়, তারা বাংলাদেশ থেকে এসেছে। মিয়ানমার শুধু বর্মী বৌদ্ধদের জন্য, অন্য কারো জায়গা হবে না এ দেশে। রোহিঙ্গারা ভয়ংকর সন্ত্রাসী। মুসলমানদের জনসংখ্যা খুব দ্রুত বাড়ছে রাখাইনসহ পুরো মিয়ানমারে। এখনই তাদের থামানো না গেলে এ দেশ একদিন তারা দখল করে নেবে। তাই তাদের দমন করতে হবে যেকোনোভাবেই হোক।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রথম বাতিল করা হয় ১৯৬২ সালের ২ মার্চ জেনারেল নে উইন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর। এরপর থেকে মিয়ানমার সরকার আরাকান থেকে রোহিঙ্গা জাতিকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার জন্য একের পর এক পরিচালনা করে গণহত্যাসহ জাতিগত নিধনের নৃশংসতম সব পথ।
মিয়ানমার সরকার ১৯৮২ সালে আইন করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করে। এরপর রোহিঙ্গাদের বাদ দেওয়া হয়েছে সব সরকারি চাকরি থেকে। এমনকি মিয়ানমারের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অধিকার নেই তাদের। নিজ গ্রামেরও বাইরে যেতে পারে না রোহিঙ্গারা। বিয়ে করতে পারে না সরকারি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া। ধর্মের ভিত্তিতে বিয়ে করলেও সন্তানের পরিচয় দিতে হয় অন্য কোনো দম্পতির নামে।
এমনকি দাদা দাদিকে বাবা-মা বলে পরিচয় দিতে হয় অনেক সন্তানকে। রোহিঙ্গা শিশুদের জন্মনিবন্ধন করা হয় না। দেওয়া হয় না কোনো পাসপোর্ট। বারবার নিষ্ঠুরতম গণহত্যা চালিয়ে একটি অসহায় নির্জীব জাতিতে পরিণত করা হয়েছে তাদের। রোহিঙ্গারা আজ বিশ্বে পরিচিত রাষ্ট্রহীন এক জনগোষ্ঠী হিসেবে।
দেশের রাজনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটতে চলেছে। আওয়ামী লীগমুক্ত মাঠ রাজনীতির প্রধান দুই দল বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে নতুন করে বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলের আভাস মিলছে। মধ্যম ও পেছনের সারির রাজনৈতিক দলগুলো নতুন করে অবহেলা-অনাদরের শঙ্কা ও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
১০ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা অবশেষে নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছে – এমন একটা স্বস্তির আবহ যখন বাংলাদেশে বিরাজ করছে, তখন রোহিঙ্গারা এ নিয়ে কী ভাবছে? তারা কি আশ্বস্ত হয়েছে যে তারা নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছে? বিশেষ করে যারা মিয়ানমার সরকারের যোগ্যতার সূচকে দেশে ফেরার জন্য ‘যোগ্য’ বলে বিবেচিত হয়েছে
১০ ঘণ্টা আগেএকাত্তর-পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশে ৫০ বছরে আমরা একটি জনগোষ্ঠীকে জনগোষ্ঠী হয়ে উঠতে দিইনি। বরং বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে তাদের প্রতি অমানবিক আচরণ করেছে।
১২ ঘণ্টা আগেএযাবৎ দেশে যত এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের ৯৫ ভাগ নিজেদের স্ত্রী-সন্তানকে পরবর্তী এমপি বানাতে চেয়েছেন, অনেকেই এই প্রচেষ্টায় কামিয়াব হয়েছেন। দেশের ৯৮ ভাগ মন্ত্রী নিজেদের পোষ্যকে মন্ত্রী করার খায়েশ প্রকাশ করে গেছেন।
১ দিন আগে