Ad T1

চীনা ক্ষেপণাস্ত্রেই ভারতকে কুপোকাত করেছে পাকিস্তান

সাদ হাসান
প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৫, ১১: ৪৪

পারমাণবিক শক্তিধর দুদেশের মধ্যে গত বুধবারের আন্তঃসীমান্ত সংঘাতের সময় ফ্রান্সের তৈরি অত্যাধুনিক রাফালেসহ ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান। ভারত সরকারিভাবে তাদের যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার কথা স্বীকার করেনি। তবে স্থানীয় কর্মকর্তাদের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতের কয়েকটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এ ঘটনায় পাকিস্তানের জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানের প্রসঙ্গটি সামনে চলে আসছে, যেটি সম্প্রতি চীনের আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য দূরপাল্লার অত্যাধুনিক পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে কিছুদিন ধরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার মধ্যেই গত সপ্তাহে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী (পিএএফ) তাদের জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানের একটি ফুটেজ প্রকাশ করে, যেগুলো চীনের তৈরি পিএল-১৭ ক্ষেপণাস্ত্র বহন করছে। চীন তার পঞ্চম প্রজন্মের জে-১০ স্টেলথ যুদ্ধবিমানে ব্যবহারের জন্য তৈরি করেছে এই ক্ষেপণাস্ত্রটি।

পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সাবেক এয়ার কমডোর ও যুদ্ধবিমানের পাইলট খালিদ চিশতি এ সম্পর্কে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে বলেন, ভারতের যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার জন্য পাকিস্তান যদি পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে থাকে, তাহলে সরাসরি যুদ্ধে দূরপাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রের এটাই হবে প্রথম ব্যবহার। তিনি আরো বলেন, ‘একটি ডকুমেন্টারি করার জন্য সম্প্রতি আমি পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একটি ঘাঁটিতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমি পাইলটদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম চীনের এই ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ কত। তারা আমাকে জানিয়েছিল, এটার রেঞ্জ ২০০ কিলোমিটার।’

পাকিস্তান বিমানবাহিনী পিএল-১৫-এর যে ভার্সনটির ছবি গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছে, সেগুলো চীন বারবার সশস্ত্র বাহিনীর নিজস্ব ব্যবহারের জন্য তৈরি করেছে, কোনো দেশে রপ্তানির জন্য নয়। রপ্তানির জন্য তৈরি করা ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ আরো কম অর্থাৎ স্বল্পপাল্লার। এগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে পিএলই-১৫ এবং এগুলোর রেঞ্জ সর্বোচ্চ ১৪৫ কিলোমিটার। খালিত চিশতি বলেন, ‘ভারতের রাফালে যুদ্ধবিমানে সংযুক্ত মেটেওর ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় চীনের এই ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ বেশি।’

পাকিস্তানের জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানে অ্যাকটিভ ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যান্ড অ্যারে বা এইএসএ নামের অত্যাধুনিক রাডার ব্যবস্থাও রয়েছে, যা ক্ষেপণাস্ত্রকে নিখুঁত ও কার্যকরভাবে ব্যবহারে সহায়তা করে এই যুদ্ধবিমানকে। খালিদ চিশতি বলেন, ‘মানব চোখে কয়েক কিলোমিটার দূরের বস্তু দেখা যায়, অবশিষ্ট দূরের বস্তু শনাক্ত করতে সহায়তা করে রাডার, ক্ষেপণাস্ত্র নয়। কাজেই রাডারকে পথ দেখানোর কাজটি আপনাকে করতে হবে এবং তা করে দেবে একটি সক্ষম রাডার।

পাকিস্তানের কাছে রাফালে যুদ্ধবিমান হারানো ভারত সরকারের জন্য মারাত্মক এক বিপর্যয়। ফরাসি ডাসাল্ট অ্যাভিয়েশনের তৈরি বহুমুখী ভূমিকা পালন করা এই যুদ্ধবিমান দিয়ে নিজেদের বিমানবাহিনী সাজাতে শত শত বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে ভারত সরকার।

খালিদ চিশতি বলেন, ‘ভারত যে ভুল করেছে, তার মাশুল তারা দিয়েছে। তাদের এখন পিছু হটতে হবে। রাফালেসহ পাঁচটি যুদ্ধবিমান হারানো ভারতের জন্য বিশাল ক্ষতি। শান্তিপূর্ণ সময়ে ভারত যে মিশনে নেমেছিল, সেটার জন্য তারা কয়েক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়েছে, রিহার্সেল দিয়েছে, অনেক হিসাবনিকাশ করে তারপর অভিযান শুরু করেছে।’

পেহেলগাম হামলা সাজানো নাটক বলে পাকিস্তান যে দাবি করেছে, তা যদি সত্য হয়, তাহলে যুদ্ধে পাকিস্তানের কাছে এই বিপর্যয়ের পর নরেন্দ্র মোদির সরকারকে সারাদেশে তাদের উগ্র হিন্দুত্ববাদী ভোটারদের সান্ত্বনা দিতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পুলওয়ামা হামলার ঘটনা নিয়েও একই ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল মোদি সরকারকে। সে সময়ও পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ভারতের একটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত ও এর পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে বন্দি করেছিল।

ভারতও পাল্টা দাবি করেছিল, তারা পাকিস্তানের একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। কিন্তু সে সময় মার্কিন কর্মকর্তারা এটা নিশ্চিত করেছিলেন, পাকিস্তানের কাছে বিক্রি করা সবগুলো এফ-১৬ যুদ্ধবিমানই অক্ষত আছে, একটিও খোয়া যায়নি। ফলে, ভারতের দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হয়।

এ সম্পর্কে খালিদ চিশতি বলেন, ‘২০১৯ সালে ভারতের দাবি যে মিথ্যা তা প্রমাণ করার জন্য আমরা মার্কিন কর্মকর্তাদের পাকিস্তানে এসে এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলো গুনে দেখার আমন্ত্রণ জানাই। তারা এসে গুনে দেখে জানান, তাদের সরবরাহ করা সবগুলো বিমান অক্ষত আছে। এখন রাফালে কোম্পানিরও উচিত ভারতে এসে তাদের সরবরাহ করা যুদ্ধবিমানগুলো গুনে দেখা। নৈতিকভাবেই তাদের এটা করা উচিত।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত