ফৌজিয়া আজিজ
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে। পরে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন মহল থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি উঠেছিল। কিন্তু সেই সংস্কার কীভাবে হবে, কারা করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতেই অন্তর্বর্তী সরকার কয়েকটি ধাপে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনমুখী প্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যেই গঠিত হয়েছে এই সংস্কার কমিশন। এর চূড়ান্ত লক্ষ্য জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস গড়ে তোলা, যা জনগণের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করবে।
কিন্তু বর্তমানে প্রশাসনে ক্যাডারভিত্তিক যে বৈষম্য রয়েছে, তার অবসান না হলে কীভাবে সম্ভব জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস গড়ে তোলা? একই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন ক্যাডারে কর্মকর্তারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে থাকলেও পরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত পদগুলো দখল করে রেখেছেন মূলত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এ যেন উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো। শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা অধিদপ্তর পরিচালনা করতে পারলে মন্ত্রণালয় চালাতে পারবেন না কেন?
এ ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে-ধরুন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব বা যুগ্মসচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা কৃষি বিষয়ে দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করার পর তিনি বদলি হয়ে গেলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। এ ক্ষেত্রে তার কৃষি বিষয়ের অভিজ্ঞতাটি উনি কোথায় কাজে লাগাবেন? আর ওই কর্মকর্তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এসেই কি এই সেক্টরের সব সমস্যা বুঝে যাবেন? তিনি এই সেক্টরের সমস্যা বোঝে এবং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে যখন অভিজ্ঞ হবেন, সে সময় আবার বদলি হয়ে যাবেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এভাবে অপেশাদার এবং অনভিজ্ঞ কর্মকর্তারা যদি বসে থাকেন নীতিনির্ধারণের জায়গায়, তাহলে কীভাবে সম্ভব জনকল্যাণমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণ?
একজন ক্যাডার কর্মকর্তার যতই দক্ষতা থাকুক কেন, তিনি সব বিষয়ে দক্ষ হতে পারেন না। এর বিপরীতে নিজ নিজ পেশাদার এবং অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা নিজ নিজ মন্ত্রণালয় পরিচালনা করলে তা হবে অধিক জনকল্যাণমুখী। কারণ তারা জনগণমুখী সঠিক নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশীজন হিসেবে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারবেন এবং এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
আন্তঃক্যাডার বৈষম্যের আরেকটি বড় উদাহরণ শিক্ষা ক্যাডারে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় গ্রেড নেই। একজন অধ্যাপক পদমর্যাদার কর্মকর্তা সর্বোচ্চ চতুর্থ গ্রেড পর্যন্ত যেতে পারেন। একই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে এই বৈষম্য কেন? এ ক্ষেত্রে প্রথম গ্রেডপ্রাপ্তির জন্য উচ্চতর ডিগ্রির (এমফিল/পিএইচডি) শর্ত থাকতে পারে। কিন্তু গ্রেডপ্রাপ্তির কোনো সুযোগই থাকবে না কেন? এ ছাড়া রয়েছে পদোন্নতির সমস্যা। একই পদে ১০-১২ বছর থাকার পরও মিলে না পদোন্নতি। ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে নেই কোনো অবস্থান।
এর বিপরীতে আমরা দেখি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের যথাসময়ে পদোন্নতি, গ্রেডপ্রাপ্তি, ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে অবস্থান-সবই আছে তাদের জন্য। প্রকৃতপক্ষে সব ক্যাডারের পদোন্নতি দেওয়ার একচ্ছত্র ক্ষমতা একমাত্র প্রশাসন ক্যাডারের হাতে ন্যস্ত থাকার কারণে এই বিশেষ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি যথাসময়ে হলেও অন্যান্য ক্যাডারের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। এত বৈষম্য থাকলে শিক্ষা ক্যাডারে মেধাবীরা কেন আসবেন? শুধু শিক্ষা ক্যাডার নয়, একমাত্র প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া বাকি ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা কমবেশি এই বৈষম্যের শিকার।
সম্প্রতি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এক ব্রিফিংয়ে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশের কোটা সুপারিশ করা হবে বলে উল্লেখ করেন। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) যোগ দেওয়ার পর প্রতিটি ক্যাডার সদস্য যে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন, তা একই সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত বিধায় শুধু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা কেন, এ পদের জন্য অধিক গুরুত্ব পাবেন তা প্রশ্নসাপেক্ষ। বরং সব ক্যাডারের জন্য একটি উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা যাচাই করে সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় পদায়ন করা অধিক যুক্তিযুক্ত। এটি প্রয়োজন দেশের ও জনগণের স্বার্থে। কারণ উপসচিব থেকে সচিব পর্যায়ের পদগুলো থেকেই মূলত দেশের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়ে থাকে। কাজেই বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সব ক্যাডারের দক্ষ, যোগ্য এবং অভিজ্ঞ মেধাবী কর্মকর্তারা এই পদগুলোয় আসীন থাকলে তা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। কোটা আরোপ করে একটি বিশেষ ক্যাডারকে সুবিধা প্রদান না করে দেশের জনকল্যাণে পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে যোগ্য, মেধাবী কর্মকর্তাদের এই পদগুলোয় পদায়ন নিশ্চিত করা জরুরি।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ব্রিফিংয়ে বিসিএস (সাধারণ লিক্ষা) ক্যাডার এবং বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারকে ক্যাডারবহির্ভূত রাখার বিষয়টি উল্লেখ করেন। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ একটি দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে কারা যান? অবশ্যই দেশের নিম্ন আয়ের সাধারণ জনগণ। ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও অনেক মেধাবী শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ক্যাডারে আসেন মর্যাদার কারণে। কাজেই শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারবহির্ভূত হলে মেধাবীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি হাসপাতালের সেবা দেওয়া গুণগত মানের অবনতি ঘটবে। ভোগান্তিতে পড়বেন নিম্ন আয়ের সাধারণ জনগণ।
প্রকৃতপক্ষে সব মন্ত্রণালয়ের শীর্ষপদগুলো (উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত) বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (প্রশাসন) ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে অন্য ক্যাডার কর্মকর্তারা নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। দেশের কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা বা যেকোনো খাতের সমস্যাগুলো নিজ নিজ ক্যাডারের বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারাই ভালো জানবেন। ফলে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এই বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দিলে তা হবে অধিক জনকল্যাণমুখী। আর তাই জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস বিনির্মাণে পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এ ছাড়া আন্তঃক্যাডারভিত্তিক যে বৈষম্য রয়েছে, যেমন-পদোন্নতিতে বৈষম্য, উচ্চতর শিক্ষা সুযোগের বৈষম্য, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণের বৈষম্য, প্রেষণ-লিয়েন সুবিধা ও বেতন-ভাতাপ্রাপ্তিতে বৈষম্য, প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগে বৈষম্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে ব্যাপক বৈষম্য আছে, তা নিরসনের লক্ষ্যেও পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় গড়ে তোলা প্রয়োজন।
বর্তমান উপনিবেশবাদী আমলাতন্ত্র গড়ে উঠেছিল ব্রিটিশ আমলে, যার মূল লক্ষ্য ছিল এ অঞ্চলের মানুষের প্রশাসনে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ তৈরি করা এবং এমন একটি আমলাতন্ত্র গঠন করা, যা ব্রিটিশ শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে। জনগণের কল্যাণ তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল না। পরে বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও নানা সমস্যার কারণে সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি ব্যাহত হয়। ফলে সংস্কার কার্যক্রমের কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসেনি কখনো। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী উদাহরণ। এ সরকার মূলত রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই জনগণের প্রত্যাশা, যথোপযুক্ত সংস্কার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দেশে একটি বৈষম্যহীন জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস গড়ে উঠবে, যা সাধারণ জনগণের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, মুরারিচাঁদ কলেজ, সিলেট
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে। পরে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন মহল থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি উঠেছিল। কিন্তু সেই সংস্কার কীভাবে হবে, কারা করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতেই অন্তর্বর্তী সরকার কয়েকটি ধাপে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনমুখী প্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যেই গঠিত হয়েছে এই সংস্কার কমিশন। এর চূড়ান্ত লক্ষ্য জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস গড়ে তোলা, যা জনগণের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করবে।
কিন্তু বর্তমানে প্রশাসনে ক্যাডারভিত্তিক যে বৈষম্য রয়েছে, তার অবসান না হলে কীভাবে সম্ভব জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস গড়ে তোলা? একই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন ক্যাডারে কর্মকর্তারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে থাকলেও পরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত পদগুলো দখল করে রেখেছেন মূলত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এ যেন উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো। শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা অধিদপ্তর পরিচালনা করতে পারলে মন্ত্রণালয় চালাতে পারবেন না কেন?
এ ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে-ধরুন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব বা যুগ্মসচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা কৃষি বিষয়ে দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করার পর তিনি বদলি হয়ে গেলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। এ ক্ষেত্রে তার কৃষি বিষয়ের অভিজ্ঞতাটি উনি কোথায় কাজে লাগাবেন? আর ওই কর্মকর্তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এসেই কি এই সেক্টরের সব সমস্যা বুঝে যাবেন? তিনি এই সেক্টরের সমস্যা বোঝে এবং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে যখন অভিজ্ঞ হবেন, সে সময় আবার বদলি হয়ে যাবেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এভাবে অপেশাদার এবং অনভিজ্ঞ কর্মকর্তারা যদি বসে থাকেন নীতিনির্ধারণের জায়গায়, তাহলে কীভাবে সম্ভব জনকল্যাণমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণ?
একজন ক্যাডার কর্মকর্তার যতই দক্ষতা থাকুক কেন, তিনি সব বিষয়ে দক্ষ হতে পারেন না। এর বিপরীতে নিজ নিজ পেশাদার এবং অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা নিজ নিজ মন্ত্রণালয় পরিচালনা করলে তা হবে অধিক জনকল্যাণমুখী। কারণ তারা জনগণমুখী সঠিক নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশীজন হিসেবে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারবেন এবং এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
আন্তঃক্যাডার বৈষম্যের আরেকটি বড় উদাহরণ শিক্ষা ক্যাডারে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় গ্রেড নেই। একজন অধ্যাপক পদমর্যাদার কর্মকর্তা সর্বোচ্চ চতুর্থ গ্রেড পর্যন্ত যেতে পারেন। একই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে এই বৈষম্য কেন? এ ক্ষেত্রে প্রথম গ্রেডপ্রাপ্তির জন্য উচ্চতর ডিগ্রির (এমফিল/পিএইচডি) শর্ত থাকতে পারে। কিন্তু গ্রেডপ্রাপ্তির কোনো সুযোগই থাকবে না কেন? এ ছাড়া রয়েছে পদোন্নতির সমস্যা। একই পদে ১০-১২ বছর থাকার পরও মিলে না পদোন্নতি। ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে নেই কোনো অবস্থান।
এর বিপরীতে আমরা দেখি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের যথাসময়ে পদোন্নতি, গ্রেডপ্রাপ্তি, ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে অবস্থান-সবই আছে তাদের জন্য। প্রকৃতপক্ষে সব ক্যাডারের পদোন্নতি দেওয়ার একচ্ছত্র ক্ষমতা একমাত্র প্রশাসন ক্যাডারের হাতে ন্যস্ত থাকার কারণে এই বিশেষ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি যথাসময়ে হলেও অন্যান্য ক্যাডারের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। এত বৈষম্য থাকলে শিক্ষা ক্যাডারে মেধাবীরা কেন আসবেন? শুধু শিক্ষা ক্যাডার নয়, একমাত্র প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া বাকি ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা কমবেশি এই বৈষম্যের শিকার।
সম্প্রতি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এক ব্রিফিংয়ে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশের কোটা সুপারিশ করা হবে বলে উল্লেখ করেন। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) যোগ দেওয়ার পর প্রতিটি ক্যাডার সদস্য যে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন, তা একই সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত বিধায় শুধু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা কেন, এ পদের জন্য অধিক গুরুত্ব পাবেন তা প্রশ্নসাপেক্ষ। বরং সব ক্যাডারের জন্য একটি উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা যাচাই করে সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় পদায়ন করা অধিক যুক্তিযুক্ত। এটি প্রয়োজন দেশের ও জনগণের স্বার্থে। কারণ উপসচিব থেকে সচিব পর্যায়ের পদগুলো থেকেই মূলত দেশের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়ে থাকে। কাজেই বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সব ক্যাডারের দক্ষ, যোগ্য এবং অভিজ্ঞ মেধাবী কর্মকর্তারা এই পদগুলোয় আসীন থাকলে তা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। কোটা আরোপ করে একটি বিশেষ ক্যাডারকে সুবিধা প্রদান না করে দেশের জনকল্যাণে পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে যোগ্য, মেধাবী কর্মকর্তাদের এই পদগুলোয় পদায়ন নিশ্চিত করা জরুরি।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ব্রিফিংয়ে বিসিএস (সাধারণ লিক্ষা) ক্যাডার এবং বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারকে ক্যাডারবহির্ভূত রাখার বিষয়টি উল্লেখ করেন। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ একটি দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে কারা যান? অবশ্যই দেশের নিম্ন আয়ের সাধারণ জনগণ। ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও অনেক মেধাবী শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ক্যাডারে আসেন মর্যাদার কারণে। কাজেই শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারবহির্ভূত হলে মেধাবীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি হাসপাতালের সেবা দেওয়া গুণগত মানের অবনতি ঘটবে। ভোগান্তিতে পড়বেন নিম্ন আয়ের সাধারণ জনগণ।
প্রকৃতপক্ষে সব মন্ত্রণালয়ের শীর্ষপদগুলো (উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত) বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (প্রশাসন) ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে অন্য ক্যাডার কর্মকর্তারা নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। দেশের কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা বা যেকোনো খাতের সমস্যাগুলো নিজ নিজ ক্যাডারের বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারাই ভালো জানবেন। ফলে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এই বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দিলে তা হবে অধিক জনকল্যাণমুখী। আর তাই জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস বিনির্মাণে পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এ ছাড়া আন্তঃক্যাডারভিত্তিক যে বৈষম্য রয়েছে, যেমন-পদোন্নতিতে বৈষম্য, উচ্চতর শিক্ষা সুযোগের বৈষম্য, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণের বৈষম্য, প্রেষণ-লিয়েন সুবিধা ও বেতন-ভাতাপ্রাপ্তিতে বৈষম্য, প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগে বৈষম্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে ব্যাপক বৈষম্য আছে, তা নিরসনের লক্ষ্যেও পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় গড়ে তোলা প্রয়োজন।
বর্তমান উপনিবেশবাদী আমলাতন্ত্র গড়ে উঠেছিল ব্রিটিশ আমলে, যার মূল লক্ষ্য ছিল এ অঞ্চলের মানুষের প্রশাসনে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ তৈরি করা এবং এমন একটি আমলাতন্ত্র গঠন করা, যা ব্রিটিশ শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে। জনগণের কল্যাণ তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল না। পরে বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও নানা সমস্যার কারণে সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি ব্যাহত হয়। ফলে সংস্কার কার্যক্রমের কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসেনি কখনো। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী উদাহরণ। এ সরকার মূলত রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই জনগণের প্রত্যাশা, যথোপযুক্ত সংস্কার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দেশে একটি বৈষম্যহীন জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস গড়ে উঠবে, যা সাধারণ জনগণের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, মুরারিচাঁদ কলেজ, সিলেট
নির্বিচারে মানুষ হত্যা, হতাহতের ঘটনায় জনগণের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। যেমন জুলাই আগস্ট গণহত্যায় যারা নিহত বা আহত হয়েছেন তাদের পরিবার স্বাভাবিকভাবেই মানুষিক ট্রমায় আক্রান্ত। এছাড়া যারা স্বচক্ষে বীভৎস হত্যাকাণ্ড দেখেছে তারাও মানুষিক ট্রমায় আক্রান্ত।
১ ঘণ্টা আগেবিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ছাড়াও অন্যান্য ছত্রসংগঠন ইফতারি বিতরণ করছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের ব্যাপক ইফতারি বিতরণ সর্বমহলের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে। এটা এ কারণেই যে, শিবির অতীতে এই ক্যাম্পাসে এ রকম মুক্ত পরিবেশ আর কখনো পায়নি।
১ ঘণ্টা আগেজুলহাস যা তৈরি করেছেন, তা মূলত একটি বড় আকারের খেলনা। জুলহাসের এই প্রতিভাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে আমরা ভাবতে পারি। কিন্তু তাকে নিয়ে আমরা অনেকেই যে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি, তা রীতিমতো ভয়ংকর!
২ ঘণ্টা আগেএকটি দেশের গণমাধ্যম তার চেতনার দর্পণ, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু যখন সেই দর্পণে প্রতিবিম্বিত হয় অন্য রাষ্ট্রের স্বার্থ, তখন গণমাধ্যম আর স্বাধীন থাকে না, হয়ে ওঠে এক অভিনব উপনিবেশ। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা কতটা ছিল, সেটাই প্রশ্নবিদ্ধ।
১ দিন আগে