Ad T1

কম্পিউটারের ভবিষ্যৎ

নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিং

নাদিম নওশাদ
প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬: ০০

বিগত ৫০ বছরে কম্পিউটার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আধিপত্য বিস্তার করছে। কিন্তু তারপরও অ্যালন টুরিং ও জন ভন নিউম্যানের শুরুর দিকের কম্পিউটার-সম্পর্কিত মৌলিক ধারণার বাইরে সাড়াজাগানো তেমন কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি।

বর্তমানে কম্পিউটিং, স্টোরেজ ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় কম্পিউটারের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এ চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সিলিকন দিয়ে তৈরি প্রচলিত ডিজিটাল কম্পিউটারের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সামনে চলে আসছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস, বায়ো-ইনফরমেটিক্স, রোবোটিক্স ও স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমের মতো প্রযুক্তিগুলোয় প্রচলিত কম্পিউটার আশানুরূপ ফল দিতে পারছে না। এর ফলে বর্তমানে ব্যবহৃত ডিজিটাল কম্পিউটার অর্থনৈতিক ও নির্ভরযোগ্যতা-বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এসব সেক্টরে এখন প্রয়োজন আরও উচ্চ-কার্যক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার, যেগুলো খুব কম সময়ে অনেক বেশি কাজ সম্পন্ন করতে পারবে।

এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, টেক-প্রতিষ্ঠান, সরকারি এমনকি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো ত্রমাগতভাবে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে নতুন কম্পিউটিং প্রযুক্তি আবিষ্কারের জন্য। নতুন এই কম্পিউটিং প্রযুক্তিকে নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিং বলা হয়ে থাকে।

নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটারের কাজ

সিলিকননির্ভর প্রচলিত কম্পিউটিং ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিং বিকল্প কম্পিউটিং পদ্ধতির অনুসন্ধান করে। নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিংয়ের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে জটিল সমস্যাগুলোকে আরও দ্রুত সমাধান করা এবং কম্পিউটিং শক্তিকে আরও সুনিপূণভাবে ব্যবহার করা। যে কাজগুলো প্রচলিত কম্পিউটারের ক্ষমতার বাইরে, যেমন আণবিক পর্যায়ের সিমুলেশনের সমাধান করা।

নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটারের উদাহরণ

প্রতিটা নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিং প্রযুক্তির রয়েছে আলাদা বিশেষত্ব ও কার্যক্ষমতা। বর্তমানে নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটারের নাম আসতেই দুটি প্রযুক্তির কথা প্রথমেই সামনে চলে আসে। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও নিউরোমরফিক কম্পিউটিং।

কোয়ান্টাম কম্পিউটিং

কোয়ান্টাম কম্পিউটিং পদ্ধতিতে কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্সকে কাজে লাগানো হয় ডেটা প্রোসেসিং করতে। প্রচলিত কম্পিউটার যেখানে বাইনারি বিট (০ ও ১) ব্যবহার করে, সেখানে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে কোয়ান্টাম বিট নামের সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়, যাকে সংক্ষেপে কিউবিট বলে। কিউবিট পদ্ধতিতে প্যারালাল কম্পিউটিং (একই সঙ্গে ০ ও ১ উভয় বিটে কাজ করা) সম্ভব। ফলে বাইনারি বিটের তুলনায় কিউবিট ব্যবহার করে খুব কম সময়ে অনেক বেশি পরিমাণ ডেটা প্রসেসিং করা যায়। ক্রিপ্টোগ্রাফি, মেশিন লার্নিংয়ের মতো ক্ষেত্রগুলোয় কোয়ান্টাম কম্পিউটিং অনেক দ্রুত কার্যসম্পাদন করতে সক্ষম।

নিউরোমরফিক কম্পিউটিং

কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে যেখানে প্রাধান্য পায় দ্রুত কম্পিউটিং, সেখানে নিউরোমরফিক কম্পিউটিংয়ের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায় মানবমস্তিষ্ক। অর্থাৎ মানুষ যেমন নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে, তেমনই নিউরোমরফিক কম্পিউটিংয়ের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে এমন কম্পিউটিং সিস্টেম তৈরি করা, যা নিজে থেকেই কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম। মানুষের ব্রেইনের নিউরাল সিস্টেমের অনুকরণে এ ধরনের কম্পিউটিংয়ে নিউরাল নেউওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়। নিউরোমরফিক কম্পিউটিং সাধারণত ততক্ষণাৎ কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে (Real-time) সিদ্ধান্ত গ্রহণ, এজ কম্পিউটিং (Edge Computing) ও স্বয়ংক্রিয় মোটরযানের জন্য বেশি উপযোগী।

নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিংয়ের চ্যালেঞ্জ

শুধু প্রযুক্তিগত উন্নতিই নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিংয়ের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য যথেষ্ট নয়। নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিংয়ের প্রাথমিক পর্যায়েই নতুন করে সব হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার তৈরি করতে প্রয়োজন মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিয়োগ। এছাড়া নতুন এই প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা। এসব অগ্রিম ব্যয় অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য বাধার কারণ। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানের জন্য এই অর্থব্যয় বড় একটা চ্যালেঞ্জ। এছাড়া বর্তমানে ব্যবহৃত আইটি প্রযুক্তির সঙ্গে নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিংকে সামাঞ্জস্যপূর্ণ করাও অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। এর ফলে বাজারে এর চাহিদাও অনেক সীমিত।

এসব সমস্যা মোকাবিলার জন্য প্রযুক্তি সরবরাহকারী ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঠিক ও সতর্ক পরিকল্পনা এবং পারস্পারিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগ প্রয়োজন। এর ফলে বর্তমান প্রযুক্তি খাতে নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিংয়ের সংযুক্তি সহজতর হবে।

নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিংয়ের সম্ভাবনা

নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিং কেবল মানুষের কৌতূহল বাস্তবায়নের বিষয় নয়, এটির সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামাজিক, এমনকি ভূ-রাজনৈতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িত। এ কারণে নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিংয়ের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য এরই মধ্যে অনেক গবেষণা ও আলোচনা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন অধিবেশন আয়োজনের মাধ্যমে এই প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। শিল্প খাতের গবেষণায় এবং নিরাপদ যোগাযোগ প্রযুক্তি ও টেলিকমিউনিকেশন খাতে নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে অনেক গবেষক ধারণা করছেন।

ম্যাককিনসে অ্যান্ড কোম্পানির একটি প্রতিবেদন অনুসারে, আগামী দশকের শীর্ষ ১০টি প্রযুক্তির মধ্যে নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিং অন্যতম, যেখানে প্রযুক্তিবিদ ও বিনিয়োগকারীদের বিশেষ দৃষ্টি থাকবে। সেখানে আরও বলা হয়, নেক্সট জেনারেশন কম্পিউটিংয়ের বার্ষিক মূল্য ২০৩০ সালের মধ্যে দুই ট্রিলিয়ন ছাড়িয়ে যেতে পারে।

Ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত