Ad T1

কাতার সফরের অভিজ্ঞতা জানালেন মেয়েরা

স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ২২: ৩০

ফুটবলার আফিদা খন্দকার ও শাহেদা আক্তার রিপা এবং ক্রিকেটার শারমিন সুলতানা ও সুমাইয়া আকতার- এই চার নারী ক্রীড়াবিদই ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলেন। এই প্রথমবার রাষ্ট্রপ্রধানের সফরসঙ্গী হয়েছেন তারা। কাতারে চার দিনব্যাপী আর্থনা সম্মেলনে গিয়ে ব্যতিক্রম অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরেছেন এই খেলোয়াড়রা। গতকাল বেইলি রোডের ফরেন একাডেমিতে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কাতার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন তারা। এ উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সফরে গিয়ে কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও শেখ হিন্দ বিনতে হামাদ আল থানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশের চার নারী ক্রীড়াবিদ। এ সময় নিজেদের নানা বিষয় তুলে ধরেন মেয়েরা। শারমিন আক্তার বলেন, ‘এই প্রথম আমরা সরকারপ্রধানের সঙ্গে কাতার সফরে গিয়েছি সফরসঙ্গী হিসেবে। আমরা ওখানে গিয়ে আমাদের অনেক অভিজ্ঞতা হয়। আমরা প্রথম দিনই সাক্ষাৎ করেছি শেখ হিন্দের সঙ্গে। তিনি কাতার ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার। কাতার ফাউন্ডেশন কাজ করে ওমেন্স স্পোর্টস নিয়ে। মেয়েরা কীভাবে খেলাধুলায় উন্নতি করতে পারে, এ বিষয়ে তারা কাজ করে থাকে। আমরা ওখানে গিয়ে দুটি স্টেডিয়াম পরিদর্শন করেছি। এডুকেশন স্টেডিয়ামে ফুটবল বিশ্বকাপ হয়েছে। বিশ্বকাপের পর তারা তাদের নারী ফুটবলারদের জন্য স্টেডিয়ামটি বরাদ্দ দিয়েছে। অ্যাসপায়ার একাডেমিতে গিয়েছি আমরা। একটা ইনডোর পরিদর্শন করেছি। ওখানে অনেক গেমের ফ্যাসিলিটি ছিল। এরপর আমরা লুসাইল স্টেডিয়ামে গিয়েছি। যেখানে বিশ্বকাপের ফাইনাল হয়েছি। বিশেষ করে আমরা যখন শেখ হিন্দের সঙ্গে দেখা করেছি, তখন আমাদের খেলাধুলা নিয়ে কথা বলেছি, কীভাবে উন্নতি করতে হবে। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু জানার চেষ্টা করেছি।’ নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে ক্রিকেটার সুমাইয়া বলেন, ‘যখন জানতে পারছি, যে আমরা প্রধান উপদেষ্টা স্যারের সঙ্গে কাতার যাচ্ছি, সবাই আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছে। সাধারণত আমরা জানি, কাতার হচ্ছে ফুটবল প্রিয়। ক্রিকেটের ওই রকম কাঠামো নেই বলতে গেলে। দু-একজন লিজেন্ডের ছবি আছে, যেটা আমরা স্টুডিওতে গিয়েছিলাম, সেখানে দেখেছি শচিন টেন্ডুলকার ও বিরাট কোহলিকে দেখেছি। যখন আমরা শেখ হিন্দের সঙ্গে কথা বলছিলাম, তখন আসার সময় একটা কথা বলে এসেছি যে, আমাদের দেশে এসে দেখুন আমাদের ক্রিকেটাররা কীসের ভেতরে আছি, কী গাইডলাইনের মধ্যে আছি। তিনি বলেছেন যে, কখনো যদি সুযোগ হয় তাহলে আসবেন। মূলত ওই দেশের ক্রিকেটকে কীভাবে সচল করা যায়, এ নিয়ে আমরা কথা বলেছি। স্কুল লিগে মেয়েদের ক্রিকেট খেলার কথা বলেছিলেন তিনি, কিন্তু ক্রিকেট বোর্ড কঠোর হয়, সেজন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে কথা দিয়েছেন যে, তিনি এটা চালু করবেন।’ সুমাইয়ার কাছে নতুনত্ব লেগেছে, একটি ইনডোরে গিয়েছিলেন, সেখানে ফুটবল টার্ফ ছিল। সেটি উঠিয়ে ফেলার পর সুইমিংয়ের যে খেলাগুলো হয়, সেখানেই হচ্ছে। কাতার অনেক এগিয়ে গেছে। অন্যদিকে, ফুটবলার শাহেদা আক্তার রিপার জানান, ‘কাতার ফাউন্ডেশনের সিওর সঙ্গে দেখা করে আমরা আমাদের সব কথা খুলে বলেছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে, আমাদের কিছু ফ্যাসিলিটিজ দেবে। বিশেষ করে আমরা যখন ইনজুরিতে পড়ি, তখন বাংলাদেশের তেমন একটা ফ্যাসিলিটিজ থাকে না। তারা বলেছেন যে, ওখানে নেইমার, রোনালদোদের ইনজুরির বিষয় নিয়ে তারা কাজ করেন। যখন ইনজুরিতে পড়েন তারা, তখন এখানে এসে রিকভারি করেন। ইনজুরি নিয়ে যেহেতু আমাদের এতে বেশি ফ্যাসিলিটিজ নেই, তিনি বলেছেন যে, চেষ্টা করবেন সহায়তা করার।’ শুধু তাই নয়, কাতার ফাউন্ডেশনের সিওর সামনে মাঠ সমস্যাসহ নানা বিষয় তুলে ধরেছেন মেয়েরা। রিপা বলেন, ‘পিএসজির একটি একাডেমি রয়েছে সেখানে। আমরা সেটি ঘুরে দেখেছি, ১০ মিনিটের মতো খেলেছিও। লুসাইল স্টেডিয়াম গিয়ে অনেক বেশি ভালো লেগেছে। সেখানে বিশ্বকাপ ফাইনালে মেসিরা ড্রেসিংরুম শেয়ার করেছেন। অনেক কিছুই পরিদর্শন করেছি। রয়্যাল ফ্যামিলির সদস্যরা যেখানে বসে খেলা দেখেন, সেটিও আমাদের ঘুরে দেখানো হয়।’ ফুটবল দলের অধিনায়ক আফিদা খন্দকার বলেন, ‘ফুটবল ও ক্রিকেট ছাড়া তো আমাদের অন্য খেলাগুলোর অবস্থা তারা জানেন না। আমরা সব খেলার কথাই বলেছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে, আমাদের বিষয়গুলো দেখবেন।’ আফিদা খন্দকার আরো জানান, লুসাইল স্টেডিয়ামে নিজেকে স্বপ্নের মতো মনে হয়েছিল। কেননা এই মাঠে খেলেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। চার ক্রীড়াবিদের কাতার সফর প্রসঙ্গে আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, ‘এটা আমাদের চমৎকার একটা শুরু। আমাদের চারজন ক্রীড়াবিদ ওখানে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আলাদা একটা মাত্রা পেয়েছে। সাধারণ এই ধরনের সরকারি সফরে এই রকম হয় না। কাতারের সঙ্গে আমাদের অনেক সহযোগিতামূলক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের ক্রীড়াবিদরা যদি না যেতেন, তাহলে স্পোর্টসটা সেভাবে আলোচনায় আসত না। ক্রীড়াবিদরা এই সফরে যাওয়াতে তাদের নিয়ে আলাদা একটা আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। আলোচনাগুলো তাদের নিয়ে শুরু হয়েছে। আমরা মনে করি যে, এটা একটা শুরু। প্রধান উপদেষ্টা সরাসরি কথা বলেছেন কাতারের স্পোর্টস কর্মকর্তাদের সঙ্গে। আপনারা জানেন যে, কাতার ফাউন্ডেশন স্পোর্টসের জন্য কত বড় ফ্যাক্টর বিশ্বব্যাপী। তারা সারা বিশ্বে ক্রীড়াঙ্গনে অনেক ক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগ আছে। আমরা বিশ্বাস করি যে, এই সফরের মধ্য দিয়ে যে যোগাযোগটা স্থাপিত হবে, সেই যোগাযোগের ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে তাদের কাছ থেকে ক্রীড়াবিদরা অন্তত গুরুত্বপূর্ণ কিছু সহযোগিতা পাবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘তারা বলেছেন, যেগুলো হয়তো নির্দিষ্ট করে নয়, তারা বলেছেন যে, মেয়েদের খেলাধুলার জন্য একটা ডরমিটরি যদি করে দেওয়া যায়, ক্রীড়াঙ্গনে মেয়েদের যে আবাসিক সমস্যা, সেই সমস্যাটির যাতে সমাধান হয়। মেয়েদের জন্য কিছু জিমনেশিয়াম তৈরি করে দেওয়া যায় কি না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সহযোগিতার কী কী ক্ষেত্র রয়েছে, এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনাগুলো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলে অর্থবহ হবে বলে মনে করি।’ কাতার ফাউন্ডেশনের সিইওর সঙ্গে আলোচনার সময় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটি হলো- ইনজুরি রিহ্যাব। আজাদ মজুমদার বলেন, ‘আমাদের দেশে সুযোগ-সুবিধা কম। জিমনেশিয়ামের কথা বলা হয়েছে, মেয়েদের ট্রেনিং ফ্যাসিলিটিজ অন্তর্ভুক্ত করা খুবই প্রয়োজন। আমাদের দেশে মেয়েদের খেলাধুলায় ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে মেয়েরা অনেক সাফল্য এনে দিয়েছে। আমরা সৌভাগ্যবান বলতে পারি। কারণ আমাদের মেয়েদের সেভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যায়নি। তারপরও তারা বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের সাফল্য এনে দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি যে, আমরা যদি পেশাগতভাবে তাদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে তাদের সাফল্যটা আরো বাড়বে। এজন্য ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে স্টেডিয়াম হলো একটা। স্টেডিয়ামের পাশাপাশি দেশের দূর-দূরান্ত থেকে মেয়েরা ঢাকায় খেলতে আসে, বাইরেও যখন খেলাধুলা হয়, তারা ঢাকা থেকে খেলতে যায়। ডরমেটরি ফ্যাসিলিটিজটা খুবই প্রয়োজন মেয়েদের জন্য। এজন্য বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছে। জিমনেশিয়াম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইনজুরির রিহ্যাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই তিনটি বিষয়কে বিশেষভাবে ফোকাস দেওয়া হয়।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত