Ad T1

জিম্বাবুয়ের কাছেও হারে এখন বাংলাদেশ!

স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৭: ০০

জিততে হলে চাই ১৭৪ রান। হাতে সময় দেড় দিন বাকি। টার্গেট তেমন কঠিন কিছু নয়। সেই রান তাড়ায় ওপেনিং জুটিতে যোগ হয়েছে ৯৫ রান। সহজ জয়ের পথেই ছিল জিম্বাবুয়ে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট যে রোমাঞ্চ পছন্দ করে! সিলেট টেস্ট শেষ পর্যন্ত জিম্বাবুয়েই জিতল সেই রোমাঞ্চের সুরভী ছড়িয়ে।

৩ উইকেটের এই জয় জিম্বাবুয়ের জন্য অনেক কিছু। আর বাংলাদেশের জন্য এই হার অনেক বড় এক ধাক্কা এবং শিক্ষা। ২০২১ সালের মার্চের পর টেস্ট ক্রিকেটে এটাই জিম্বাবুয়ের প্রথম জয়। বিদেশের মাটিতে সর্বশেষ তারা জিতেছিল ২০১৮ সালে। সেটাও আবার এই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। কাকতালীয় বিষয় হলো, সাত বছর আগে জয়ী সেই টেস্টও জিম্বাবুয়ে জিতেছিল এই সিলেটেই। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সেটাই ছিল প্রথম কোনো টেস্ট ম্যাচ। সিলেটের মাটিতে প্রথম টেস্টেও জয়ী জিম্বাবুয়ে। এখন পর্যন্ত শেষ টেস্টেও তা-ই! বাংলাদেশ সিরিজে সিলেটে টেস্ট খেলাকে এখন আবশ্যিক দাবি হিসেবে জানাতেই পারে জিম্বাবুয়ে!

বৃষ্টিবিঘ্নিত সিলেট টেস্টের যে উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটাররা খাবি খাচ্ছিলেন, সেই একই উইকেটে শেষ ইনিংসে রান তাড়ায় নেমে জিম্বাবুয়ের ওপেনিং জুটি সহজ জয়ের পথ তৈরি করে। তবে এই জুটি ৯৫ রানে ভাঙতেই বিপদের শুরু। বেন কারেন ফিরলেন ৪৪ রান তুলে। আরেক ওপেনার ব্রায়ান বেনেট হাফ সেঞ্চুরি শেষে আউট হলেন। রোমাঞ্চকর নাটকের শুরু মূলত শন আরভিনের আউটের পরই। আরভিন যখন ফিরলেন, তখন জিম্বাবুয়ের রান ৩ উইকেটে ১২৭। দলের স্কোরকার্ডে আরেক রান যোগ হতেই ৫৪ রান করা ওপেনার ব্রায়ান বেনেটও সাজঘরের পথ ধরলেন। বল হাতে মেহেদি মিরাজ তখন দুরন্ত। চটজলদি কয়েকটি উইকেট তুলে নিয়ে লো- স্কোরের ম্যাচে নাটকীয়তা নিয়ে এলেন তিনি। ১৪৫ রানে ৬ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে তখন ম্যাচে দিশাহারা।

জয় থেকে তখনো ২৯ রান দূরে দাঁড়িয়ে জিম্বাবুয়ে। ঠিক তখনই ব্যাট হাতে দলের রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়ান ওয়েসলি মাধেভেরে। মাত্র ৪ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা তার। কিন্তু পরিস্থিতির দাবি কীভাবে মেটাতে হয়, সেটা ঠিকই জানান দিল তার ব্যাট। এক পাশ আঁকড়ে ধরে লড়াই চালিয়ে যান। ৫৫ বলে অপরাজিত ১৯ রান করে জিম্বাবুয়েকে এনে দিলেন স্মরণীয় এক জয়। তিনটি বাউন্ডারি হাঁকান মাধেভেরে। জিম্বাবুয়ের এই জয়ে তার হার না মানা ১৯ রানের ছোট্ট কিন্তু অনেক অনেক কার্যকর ইনিংসের মূল্য সেঞ্চুরির চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। মেহেদি মিরাজের বলে রিভার্স সুইপে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জিম্বাবুয়ের জয়ের গল্পের শেষ লাইনটা লিখলেন এই মাধেভেরেই।

চতুর্থ দিনের সকালের সেশনে বৃষ্টির কারণে খেলা ঘণ্টাখানেক পর শুরু হয়। দিনের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই আগের দিনের হাফ সেঞ্চুরি নিয়ে খেলতে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের পতনের সেই শুরু। সেই ধস আর ঠেকানো যায়নি। মুশফিকুর রহিমের ব্যাট দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ। মেহেদি হাসান মিরাজও তা-ই। বাংলাদেশের স্কোর ২০০’র ওপর গেল; সেই কৃতিত্ব এককভাবে পেতে পারেন জাকের আলী অনিক। একপ্রান্ত থেকে তিনিই লড়ে যান। শেষ ব্যাটার হিসেবে জাকের আলী অনিক যখন আউট হলেন, তখন তার রান ৫৮। দলের স্কোর থামল ২৫৫ রানে। জিম্বাবুয়ে পেসার ব্লেসিং মুজারাবানির পেস দ্বিতীয় ইনিংসে সামাল দিতে পারেনি বাংলাদেশ। ৭২ রান খরচায় ৬ উইকেট শিকার করেন দীর্ঘদেহী এই পেসার। ম্যাচে তার শিকার সব মিলিয়ে ৯ উইকেট।

১৭৪ রানের জয়ের পথে জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার সফরকারীদের কাজটা সহজ করে দেন। মেহেদি মিরাজ ইনিংসে আরেকবার ৫ উইকেট শিকার করে কাঁটা বিছালেন ঠিকই; কিন্তু শেষ হাসিটা হাসল যে জিম্বাবুয়েই! ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েও মেহেদি মিরাজের মুখ মলিন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত