কক্সবাজারের টেকনাফের সর্বশেষ সীমান্ত এলাকা শাহপরীর দ্বীপের বাতাসে এখন কান্নার শব্দ। স্ত্রীর চোখে অশ্রু, তার স্বামী সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে বাড়ি ফিরেনি এখনও। খবর এসেছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির অপহরণের শিকার হয়ে ‘মগ রাজ্যে’ বন্দি তার স্বামী।
শুধু একজন দুজন নয়, গুনে গুনে ৫৬ জন স্বামী-সন্তান-বাবাকে নাফ নদী থেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি। এসব পরিবারের লোকজনের এখন কেবল নাফ নদীর পাড়ে বসে অশ্রুভেজা চোখে তাকিয়ে থাকা, যদি আরাকান আর্মি তাদের স্বজনদের ছেড়ে দেয়! তবে সেই অপেক্ষার শেষ হচ্ছে না।
শাহপরীর দ্বীপের উপকূলজুড়ে ঘরে ঘরে এমন আর্তনাদের গল্প তৈরি হয়েছে। গত ২২ দিনে অন্তত ১৯টি মাছ ধরার নৌকাসহ ৫৬ জন বাংলাদেশি জেলে আরাকান আর্মির অপহরণের শিকার হয়েছেন। বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদীর পানিসীমা, যেখানে শত শত বছর ধরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন এই অঞ্চলের মানুষ, এখন সেটাই পরিণত হয়েছে ভয় আর আতঙ্কের নদীতে।
স্থানীয় জেলে সংগঠনের নেতাদের মতে, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি এখন প্রতিনিয়তই বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বন্দুকের মুখে তুলে নিয়ে গিয়ে পরে মুক্তিপণের দাবি জানায়। তবে টাকা দিলেও বেশিরভাগ সময় মুক্তি মেলে না তাদের।
শাহপরীর দ্বীপের ট্রলার মালিক শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, নৌকা নিয়ে সমুদ্রে নামলেই বুক কাঁপে। প্রতিটি ঢেউ মনে হয় শেষ ঢেউ। কিন্তু ঘরে পরিবার আছে, তাদের খাওয়াতে হবে। তাই জীবন বাজি রেখেই যাত্রা করতে হয় জেলেদের। পরিবারের তাগিদেই এই মাছ ধরতে যাওয়া।
স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, নিখোঁজ জেলেদের বাড়িগুলোতে এখন নিস্তব্ধ কান্নার সুর। অন্তত ১২টি পরিবার-স্বজন হারিয়ে দিশেহারা। অনেক শিশু স্কুলে যেতে চাইছে না। কারো কারো চুলায় আগুন জ্বলছে না।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে (আরাকান) চলমান সংঘাতের কারণে আরাকান আর্মি সীমান্তবর্তী সমুদ্রকে অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্র বানিয়েছে। তাদের সহজ শিকার বাংলাদেশি জেলেরা। কারণ তাদের ধরে নিয়ে গেলে মুক্তিপণ আদায় করা যায়, আবার আন্তর্জাতিক চাপ থেকেও সহজে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বলছে, তারা সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং কূটনৈতিক পর্যায়েও আলোচনা চালানো হচ্ছে। তবে জেলেদের পরিবারগুলোর দাবি—শুধু আশ্বাস নয়, তাদের স্বজনরা যেন জীবিত ফিরে আসেন। অন্যদিকে প্রতিটি ট্রলার/নৌকা হারিয়ে লাখ লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন ট্রলার মালিকরা। অনেক ট্রলার মালিক ঋণের চাপে জর্জরিত হয়ে আছেন। আরাকান আর্মি মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে যাওয়ায় জীবিকার পথও কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে তাদের।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহেছান উদ্দিন জানিয়েছেন, আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের উদ্ধারে সব ধরনের প্রক্রিয়া চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নিজেদের মতো করে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করছে। কূটনৈতিক প্রক্রিয়াও অব্যাহত আছে।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নাফ নদীর নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্ট থেকেই বারবার বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাই জেলেদের ওই এলাকায় মাছ শিকার থেকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
তিনি আশা করছেন, ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের শিগগিরই ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।


হাসিনার বিচার চান শহীদ তোফাজ্জুলের স্ত্রী শাহিনা