আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

হাসিনার বিচার চান শহীদ তোফাজ্জুলের স্ত্রী শাহিনা

কামরুল হাসান, হবিগঞ্জ

হাসিনার বিচার চান শহীদ তোফাজ্জুলের স্ত্রী শাহিনা
শহীদ তোফাজ্জুল

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার তোফাজ্জুল হোসেনকে পুলিশ বীভৎসভাবে হত্যার পর লাশ গুমের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে । ছাত্র-জনতার তৎপরতায় লাশ গুম করতে পারেনি পুলিশ । ২২ বছর বয়সের টগবগে যুবক তোফাজ্জুল হোসেন, পেশায় ছিলেন ফার্নিচার রঙ মিস্ত্রি। তার বাড়ি হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা সদরের ৩ নম্বর দক্ষিণ পূর্ব ইউনিয়নের অন্তর্গত জাতুকর্ণ পাড়া গ্রামে। তার বাবা আব্দুর রউফ একজন দরিদ্র কৃষক। আব্দুর রউফ ও হেনা বেগমের চার ছেলে মেয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিল শহীদ তোফাজ্জুল। ছব্বিশের ৫ আগস্ট সকালে স্ত্রীকে লুঙ্গি কেনার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দেন। দুপুর ১২টায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে উত্থাল হয় বানিয়াচং।

বিজ্ঞাপন

এ সময় থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পুলিশ তাকে গুলি করেই ক্ষান্ত হয়নি! টেনেহিঁচড়ে থানার ভেতর নিয়ে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে বুট দিয়ে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। কিন্তু ছাত্র-জনতার তৎপরতায় লাশ গুম করতে পারেনি পুলিশ। তোফাজ্জুলের মা হেনা বেগমের ভাষ্যমতে, সপ্তম শ্রেণিতে লেখাপড়া শেষ করার আগেই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয় তোফাজ্জুল। হাতের কাজ শেখার জন্য স্থানীয় বাজারে ফার্নিচার দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করে। আস্তে আস্তে সে ফার্নিচারের রঙ মিস্ত্রি হয়। চার ছেলের মধ্যে তোফাজ্জুলই ছিল উপার্জনক্ষম। মাসে সে ৩০-৪০ হাজার টাকা উপার্জন করত।

তার মৃত্যুর পরে সংসারে টানাপোড়েন শুরু হয়। তাকে বিয়ে করিয়েছিলেন গ্রামেই। কিন্তু বিয়ের চল্লিশ দিনের মাথায় তোফাজ্জুল শহীদ হলো। তাকে নিষেধ করা সত্ত্বেও সে আন্দোলনে যেত। এলাকার বন্ধুর সঙ্গে সে প্রায় দিনই আন্দোলনে যেত, কাজ ফাঁকি দিয়ে আন্দোলনে যেত। আন্দোলনে যেতে বাধা দেওয়ায় সে বলত- আবু সাঈদ ও মুগ্ধ দেশের জন্য শহীদ হয়েছে! প্রয়োজনে আমিও শহীদ হবো! স্বৈরাচারী হাসিনাকে উৎখাত করতে হবে। দেশকে মুক্ত করতে হবে।

শহীদ তোফাজ্জুলের মা বললেন, আমি তো আমার বুকের ধন হারিয়েছি! কিন্তু দেশতো নতুন করে স্বাধীন হয়েছে! আমি আমার ছেলেকে নিয়ে গর্ব করি এবং দোয়া করি আল্লাহ তাকে শহীদি মর্যাদা দান করুক। শহীদ তোফাজ্জলের স্ত্রী শাহিনা আক্তারের দাবি হাসিনার মতো কোনো স্বৈরাচার যেন বাংলাদেশকে শাসন-শোষণ করতে না পারে। স্বামীর স্মৃতি আগলে রেখে বাকি জীবনটাও কাটিয়ে দিতে চান। হাসিনার বিচার চান তিনি। শাহিনা আক্তার জানান, কাজে যোগ না দিয়ে মাতৃভূমিকে স্বৈরশাসনের কবল থেকে রক্ষা করতে ছাত্র-জনতার সঙ্গে মিছিলে যোগ দেন। মিছিল করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। তার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে চান শাহিনা আক্তার।

পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শহীদ তোফাজ্জুলের মা হেনা বেগম বলেন, সরকারিভাবে ১০ লাখ টাকা ও জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ৫ লাখ টাকা পেয়েছি। উল্লেখিত টাকার ২৫% তোফাজ্জুলের স্ত্রী, আর বাকি টাকা আমরা পেয়েছি। যত টাকাই পাই না কেন তোফাজ্জুলকে তো আর পাইব না।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর

খুঁজুন