Ad T1

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি শ্লথ

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২: ২৭

যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় তা তুলনামূলক কম। ২০২৪ সালে ভিয়েতনাম, ভারত ও কম্বোডিয়া উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ছিল অনেকটাই সীমিত।

২০২৪ সালে বিশ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক পোশাক আমদানি ১ দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়েছে, দেশটিতে পরিমাণগতভাবে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়েছে। তবে বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গড় একক দাম ৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ কমেছে। অব্যাহতভাবে দাম কমে যাওয়ায় রপ্তানিকারকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, এটি আগের বছরের তুলনায় শূন্য দশমিক ৭৩ শতাংশ বেড়েছে। পরিমাণগতভাবে ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ বাড়লেও একক দাম ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ কমেছে। ফলে রপ্তানিকারকরা আগের মতোই বেশি পণ্য রপ্তানি করেও কম মুনাফা করতে বাধ্য হচ্ছেন।

প্রতিযোগী দেশগুলোর অগ্রগতি

বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী দেশগুলো তুলনামূলক ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী ভিয়েতনামের রপ্তানি মূল্য ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়েছে, পোশাকের পরিমাণ ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ ভারতের রপ্তানি মূল্যও ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং পরিমাণ ১৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ বেড়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে কম্বোডিয়া, যেখানে রপ্তানি মূল্য ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং পরিমাণ ১৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়েছে।

অন্যদিকে, মেক্সিকো এবং কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। মেক্সিকোর রপ্তানি মূল্য ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ কমেছে এবং পরিমাণ ১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ কমেছে, কোরিয়ার ক্ষেত্রে এ হার যথাক্রমে ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ও ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমেছে।

বাংলাদেশের রপ্তানিতে পণ্যের বৈচিত্র্য ও নতুন প্রবণতা

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি সাধারণত টি-শার্ট, শার্ট, প্যান্ট, সোয়েটার ও ওভেন পোশাকের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে ফ্যাশনসচেতন ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সাসটেইনেবল (পরিবেশবান্ধব) পোশাক, স্পোর্টসওয়্যার ও উচ্চমূল্যের পোশাক তৈরির দিকে ঝুঁকছে। এ ছাড়া শ্রম খরচ বৃদ্ধির ফলে কম ব্যয়ে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা আরো বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের জন্য এখন ফাংশনাল পোশাক (যেমন : অ্যাথলেটিক ও আউটডোর পোশাক), প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদন এবং টেকসই ফ্যাশনের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। এর মাধ্যমে রপ্তানিকারকরা বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে পারবে।

ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উচ্চমূল্যের পোশাক উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে এবং বাজার বৈচিত্র্যকরণ করতে হবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাণিজ্য নীতি পরিবর্তন, ভোক্তাদের ব্যয়সংকোচন এবং চীনের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করছে, যা বাংলাদেশকে কাজে লাগাতে হবে।

তবে ডলারের বিনিময় হার ওঠানামা, শ্রম খরচ বৃদ্ধি ও কাঁচামালের ওপর আমদানিনির্ভরতা দেশের রপ্তানিকারকদের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, দক্ষ জনশক্তি উন্নয়ন এবং কার্যকর কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা সম্ভব।

বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ছে, তাই বাংলাদেশকে আরো উদ্ভাবনী কৌশল গ্রহণ করতে হবে, যাতে বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনার সুযোগ কাজে লাগানো যায়। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা গেলে, বাংলাদেশের পোশাক খাত যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক বাজারে আরো শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবে।

Ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত