Ad T1

১৯ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাকে এমডি নিয়োগের তোড়জোড়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২: ১১
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২: ১৬

নাজুক অবস্থায় পড়া ব্যাংকগুলোর অন্যতম বেসরকারি খাতের প্রথম প্রজন্মের ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে মামুন মাহমুদ শাহকে নিয়োগের তোড়জোড় চলছে। পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনের পর এখন অনাপত্তির জন্য পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।

তবে নিয়োগ পেতে যাওয়া এই মামুন মাহমুদ দেশের ১৯ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণগ্রহীতা। সময়মতো ঋণ পরিশোধ না করায় এরই মধ্যে কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। এ রকম ব্যক্তিকে এমডি নিয়োগের উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মামুন মাহমুদ শাহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও এনআরবি ব্যাংকের এমডি ছিলেন। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংক দুটির বিভিন্ন সূচকের ব্যাপক অবনতি ঘটে। এছাড়া তিনি এনআরবি ব্যাংকে এমডি থাকাকালীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমার বাইরে গিয়ে শেয়ার কেনেন। আইন ভঙ্গ করার কারণে এনআরবি ব্যাংককে ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, মামুন মাহমুদের নামে ব্যাংকে ঋণ রয়েছে প্রায় ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা। এর মধ্যে আটটি ব্যাংকে ৬ কোটি ৮০ লাখ ৬৯ হাজার ২৭৪ টাকার ঋণ রয়েছে। আর ১৭টি ক্রেডিট কার্ডে ঋণের পরিমাণ ২৮ লাখ ৮৩ হাজার ৪৬৫ টাকা। তার মোট ঋণের মধ্যে ৫০ লাখ ১৯ হাজার ৮৩৯ টাকা মেয়াদোত্তীর্ণ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাংক লুটপাটের অংশ হিসেবে ন্যাশনাল ব্যাংকে নানা জালিয়াতি হয়েছে। বিপুল অংকের অর্থ ব্যাংক থেকে বেরিয়ে গেছে। তবে ব্যাংকটির অনেক সম্পদ রয়েছে। আবার প্রথম প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে ন্যাশনাল ব্যাংকের ইমেজও ভালো। ফলে ভালো নেতৃত্ব পেলে এই ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে কর্মকর্তারা চেষ্টা করছেন কীভাবে ব্যাংকটিকে ভালো অবস্থানে নেওয়া যায়। কিন্তু এমন একজন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিলে এই ব্যাংকের বিষয়ে আমানতকারী ও গ্রাহকদের মধ্যে একটা খারাপ বার্তা যাবে।’

সম্প্রতি এনআরবি ব্যাংকের কর্মকর্তারাও তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, মামুন মাহমুদ শাহ ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকার হোম লোন নিয়েছেন। এই ঋণটি ফ্ল্যাট কেনার জন্য নেওয়া হলেও তিনি টাকা কানাডায় তার পরিবারের কাছে পাঠিয়েছেন, যা সরাসরি তহবিল পাচার ও অর্থ পাচারের শামিল। তার পরিবার কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পেয়েছে। তাই যে কোনো অপরাধের পর তিনি দ্রুত দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন।

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, মামুন মাহমুদ এনআরবি ব্যাংকে থাকাকালীন ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান মাহতাবুর রহমানের সঙ্গে মিলে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ অযোগ্য গ্রাহকদের দেওয়া হয়েছিল, যেসব ঋণ এখন খেলাপি হয়ে গেছে। তাই এমন একজন ব্যক্তিকে ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ঋণ ও অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মামুন মাহমুদ শাহ আমার দেশকে বলেন, ‘আমার ঋণের বিষয় ব্যাংক বুঝবে। কে অভিযোগ করল কিছু যায় আসে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সব তথ্য রয়েছে।’

এমডি নিয়োগের বিষয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুকে ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভি করেননি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক শারিয়ার সিদ্দিকী আমার দেশকে বলেন, ‘এমডি নিয়োগ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুসারেই হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ সবকিছু বিবেচনা নিয়েই অনুমোদন দেবে।’

বিষয়:

ব্যাংক
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত