ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের করা পৃথক তিন মামলার রায় আগামীকাল ঘোষণা করা হবে।
এর মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে এই প্রথম কোনো মামলার রায় ঘোষণা হতে চলেছে।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনের আদালত এ রায় ঘোষণা করবেন।
এর আগে গত ২৩ নভেম্বর এসব মামলায় রায় ঘোষণার জন্য ওই দিন ধার্য করেন আদালত। তবে এসব মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২২ আসামির পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়নি। একই সাথে আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজের নির্দোষ দাবি করতে পারেননি তারা।
এ বিষয়ে দুদকের কৌঁসুলি খান মো. মাইনুল হাসান (লিপন) বলেন, শেখ হাসিনাসহ ২৩ আসামির সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন প্রত্যাশা করছি আমরা। আশা করছি, আদালত থেকে সর্বোচ্চ সাজাই আসবে।
তবে তিন মামলায় কারাগারে থাকা একমাত্র আসামি রাজউক কর্মকর্তা খুরশীদ আলমের আইনজীবী মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, এসব প্লট বরাদ্দে ওই সময় খুরশীদ আলমের কিছুই করার ছিল না। তিনি এসব কাজের জন্য কোনো পদোন্নতি বা বেনিফিট নেননি বা কোনো সুযোগ-সুবিধাও গ্রহণ করেননি। তাই এসব মামলায় তিনি কোনোভাবেই অভিযুক্ত নন। আশা করছি ন্যায়বিচার পেলে খালাস পাবেন তিনি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পৃথক ৬টি মামলা করে দুদক। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং বোন শেখ রেহানা, তার মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ান সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও অপর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকসহ আরো অনেককে আসামি করা হয়।
শেখ পরিবার ছাড়া ছয় মামলায় অন্য আসামিরা হলেন জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।
গত ৩১ জুলাই ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন তিন মামলায় শেখ হাসিনাসহ সব আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এসব মামলায় বিচার চলাকালে চার মাসে সাক্ষ্য দেন ৯১ জন। তবে সাক্ষগ্রহণের শেষ পর্যায়ে এসে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন রাজউক কর্মকর্তা খুরশিদ আলম।
এরপর তিন মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া সব সাক্ষীকে রিকল করে জেরা করেন তার আইনজীবী মো. শাহিনুর ইসলাম। এরপর গত ২৩ নভেম্বর তারিখে আত্মপক্ষ সমর্থনে খুরশীদ আলম নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও পলাতাক থাকায় এ সুযোগ পাননি হাসিনা-জয়-পুতুলসহ ২৩ আসামি। এরপর ২৩ নভেম্বর দুদক ও আসামিপক্ষের আইনজীবীর যুক্তিতর্ক শেষে ২৭ নভেম্বর রায়ে দিন ধার্য করেন বিচারক।
প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির বাকি ৩ মামলায় ঢাকার চার নম্বর বিশেষ জজ মো. রবিউল আলমের আদালতে বিচারকাজ চলছে। একই অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা এবং তার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকসহ ১৭ আসামির বিরুদ্ধ ১ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে। এছাড়া প্লট দুর্নীতির অভিযোগে রেহানার দুই সন্তান রাদওয়ান ও আজমিনার বিরুদ্ধ দুই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের শুনানি চলমান রয়েছে।


রোগ-শোক-সংকটেও দেশকে ছেড়ে যাননি খালেদা জিয়া
খেলাপি ঋণ ছাড়াল ৬ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা