চাকসু নির্বাচনে যারা আলোচনায়

আতিকুর রহমান, চবি
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯: ২২
ফাইল ছবি

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসে চলছে উৎসবের আমেজ। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষের ঘটনায় সেই উৎসবে কিছুটা ভাটা পড়েছিল, তবুও ক্লাস-পরীক্ষা চালু হওয়ার পরপরই শিক্ষার্থীরা মেতে উঠেছেন চাকসুর তর্ক-বিতর্কে। চাকসু নির্বাচনকে ঘিরে তৎপর আছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরাও। যথাসময়ে নির্বাচন দিতেও বদ্ধপরিকর তারা।

বিজ্ঞাপন

এবারের সপ্তম চাকসু নির্বাচনে একাধিক একক, স্বতন্ত্র ও সমন্বিত প্যানেলে অংশগ্রহণ করতে পারেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন শিক্ষার্থী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এ নিয়ে অঙ্ক কষতে ব্যস্ত। এছাড়া নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সাধারণ শিক্ষার্থী স্বতন্ত্রভাবে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলোচনায়ে এসেছেন বিভিন্ন সংগঠনের বেশ কয়েকজন প্রার্থী। তাদের মধ্যে বেশি সরব ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতারা। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ইব্রাহিম হোসেন রনি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখার সাহিত্য সম্পাদক সাঈদ বিন হাবিব, প্রচার সম্পাদক ইসহাক ভূঁঞা, শিক্ষা সম্পাদক মোনায়েম শরীফ জনপ্রিয়তায় এগিয়ে আছেন বলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান। চট্টগ্রামে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখ সারিতে থেকে এসব নেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তবে কে কোন পদে লড়বেন, সেটা এখনো চূড়ান্ত করেনি সংগঠনটি।

চাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবির অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গড়তে চাচ্ছে বলে জানা গেছে। এই প্যানেলে পাঁচজন নারী শিক্ষার্থী, জুলাই আহত, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও উপজাতি শিক্ষার্থীও থাকতে পারেন।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের চবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়, সাবেক অর্থ সম্পাদক হাসান আহমেদ, সাবেক মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক জালাল সিদ্দিকী, নুজহাত জাহান, শ্রুতি রাজ চৌধুরী আলোচনা আছেন। তাদের মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন আবদুল্লাহ আল নোমান। তবে চাকসু নির্বাচনে কে কোন পদে লড়বেন, তা ঠিক করেনি সংগঠনটি। শিগগির তালিকা প্রকাশের কথা জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) চবি শাখার আহ্বায়ক মুনতাসির মাহমুদ চাকসুর ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। তবে এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া সংগঠনের সদস্য সচিব আল-মাসনুন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সুলতানুল আরেফিন, যুগ্ম আহ্বায়ক পদে শাহরিয়ার নাফিজ আলোচনায় আছেন।

চাকসু নির্বাচনে এককভাবে নির্বাচন করবে ছাত্র অধিকার পরিষদের চবি শাখা। প্যানেলের নাম ‘চাকসু ফর রেপিড চ্যাঞ্জ’ অথবা ‘চাকসু ফর রেডিক্যাল চ্যাঞ্জ’ হতে পারে। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন ফরম কিনবেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। ভিপি, জিএস পদে কে লড়বেন, সেটা এখনো চূড়ান্ত না হলেও শাখার আহ্বায়ক তামজিদ উদ্দিন, সচিব রোমান রহমান, যুগ্ম সদস্য সচিব মো. সবুজ এসব পদে আলোচনায় আছেন।

এককভাবে নির্বাচনের পরিকল্পনা থাকলেও প্রয়োজনে জোটবদ্ধ হতে পারে সংগঠনটি। সেক্ষেত্রে ভিপি, জিএস পদে ছাড় দিতেও রাজি আছেন তারা।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ‘সচেতনতা শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা আছে। সংগঠনের চবি শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহমান রবিন ভিপি, বর্তমান সভাপতি আবদুর রহমান জিএস, সেক্রেটারি রাকিবুল ইসলাম সমাজসেবা ও সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন দপ্তর সম্পাদক পদে নির্বাচন করবেন।

এবারের চাকসু নির্বাচনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জোটবদ্ধ নির্বাচন করবে। আজ রোববার প্যানেল ঘোষণা করবে এই দুই সংগঠন। এই প্যানেলে ভিপি পদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ঋজু লক্ষী অবরোধ, জিএস পদে শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইফাজ উদ্দিন আহমেদ, এজিএস পদে ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক শেখ জুনায়েদ কবির নির্বাচন করবেন।

স্বতন্ত্র প্যানেল

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণের পর ক্যাম্পাসে সেই চেতনা ধারণ করে যারা রাজনীতি করেছেন, তাদের একটি অংশ এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অ্যাক্টিভিস্টের একটি অংশের সমন্বয়ে স্বতন্ত্র প্যানেল গঠিত হবে। এতে ভিপি পদে মাহফুজুর রহমান, জিএস পদে রশিদ দিনার নির্বাচন করতে পারেন। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর প্যানেল ঘোষণা করা হবে। এই প্যানেলে আট নারী শিক্ষার্থীসহ চমক থাকবে বলে জানা গেছে।

এছাড়া চবি সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আজহার, সাবেক সহসভাপতি আহমেদ জুনায়েদ চাকসু নির্বাচনের অংশগ্রহণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে তারা যথাক্রমে ভিপি-জিএস পদে লড়বেন।

খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ

গত ২ সেপ্টেম্বর চাকসু নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন কমিশন। এতে মোট ভোটার হয়েছেন ২৫ হাজার ৮৬৬ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫ হাজার ২৫ জন এবং নারী ১০ হাজার ৮৪১ জন।

চাকসু নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের সময় মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। তবে সর্বোচ্চ পাঁচজন সমর্থক নিয়ে আসা যাবে। নির্বাচনে প্রার্থীর ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পজিটিভ আসলে প্রার্থিতা বাতিল বলে গণ্য হবে।

প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার দিন থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দিনের ২৪ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণা করতে পারবে। প্রতিদিন প্রচারের সময় সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে সন্ধ্যার পরে ক্যাম্পাস এলাকায় কোনো প্রচার কাজে মাইক ব্যবহার করা যাবে না।

কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে সভা, সমাবেশ বা শোভাযাত্রা করতে চাইলে চিফ রিটার্নিং অফিসার থেকে ২৪ ঘণ্টা আগে অনুমতি নিতে হবে। একজন প্রার্থী বা একটি প্যানেল প্রতিটি হলে একটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি প্রজেকশন মিটিং করতে পারবে।

নির্বাচনি প্রচারণায় শুধু সাদা-কালো পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ব্যবহার করা যাবে। এক্ষেত্রে পোস্টারের আকার অনধিক ৬০ সেন্টিমিটার × ৪৫ সেন্টিমিটার হতে হবে। কোনো প্রার্থীর পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ক্ষতিসাধন করা যাবে না।

কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কেউ নির্বাচনের দিন ১০০ মিটারের মধ্যে ভোটার স্লিপ দিতে পারবে না। কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কেউ নির্বাচনি আচরণ বিধি ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার অথবা রাষ্ট্রীয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী অন্য যে কোনো দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

চাকসুর ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আজ রোববার মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হবে। মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হবে ১৫ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। যাচাই-বাছাই হবে ১৮ সেপ্টেম্বর। প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে ২১ সেপ্টেম্বর এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৫ সেপ্টেম্বর। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত