ইমুর ত্রাসে কাঁপছে জবির ছাত্রী হল

প্রতিনিধি, জবি
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫০
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৩

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র ছাত্রী হল নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলে ক্যান্টিনের খাবারে পোকা পাওয়া নিয়ে প্রতিবাদ করার জেরে একজন শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও হল ডিবেটিং সোসাইটির নেত্রী ফাতেমা তুজ জোহরা ইমুর বিরুদ্ধে। ইমু হলের ডিবেটিং সোসাইটির নেত্রী হলেও, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ—তিনি গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে জোরপূর্বক সেই পদ দখল করেছেন এবং সেই পদকে ব্যবহার করে হলে দীর্ঘদীন ধরেই প্রভাব বজায় রাখছেন। হলটির প্রভোস্টের বিভাগের ছাত্রী হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে তিনি হলে এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ ও ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, ৩ নভেম্বর রাতে ক্যান্টিনে পরিবেশিত বরবটি-আলু ভাজিতে পোকা পাওয়া যায়। বিষয়টি সমাজকর্ম বিভাগের ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী উম্মে মাবুদা তাঁর ফেসবুকে প্রমাণসহ পোস্ট করেন। পোস্টটি ভাইরাল হলে বহু শিক্ষার্থী এতে সহমত প্রকাশ করেন। কিন্তু এই ঘটনাই ইমুর ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পোস্টের পরপরই ইমু মাবুদাকে একাধিকবার পোস্ট ডিলিট করতে চাপ দেন। প্রভোস্টের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বারবার তাগাদা দেন। মাবুদা ইন্টার্নশিপে থাকা অবস্থায় নির্ধারিত সময়ে দেখা করতে না পারায়, ৬ নভেম্বর সকালে ইমু সরাসরি তাঁর কক্ষে গিয়ে অপমানজনক ভাষায় কথা বলেন।

মাবুদা বলেন, “তিনি রুমে এসে চিৎকার করে বলেন—‘পোস্টটা কেন দিলি? ভোটের প্রসঙ্গ কেন আনলি? এখনই গিয়ে পোস্ট ডিলিট কর, নতুন করে ক্ষমা চেয়ে পোস্ট দিবি।’ তিনি আমাকে ভয় দেখিয়েছেন যে আমার পোস্টে তাঁর ভোট নষ্ট হবে।”

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তিনি বর্তমান প্রভোস্টের বিভাগের ছাত্রী হওয়ায় হল ডিবেটিং সোসাইটির নেতৃত্ব দখলের পর থেকেই হলের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে নিজের প্রভাব খাটিয়ে আসছেন। ক্যান্টিনের খাবারের মান, রুম বণ্টন, এমনকি অভিযোগের বিষয়েও তাঁর ‘শেষ কথা’ চলে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি ছাত্রী হলের সবকিছুই প্রায় নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন হল প্রভোস্টের প্রশ্রয়ে। এমনকি অবৈধভাবে হলে ছাত্রী তুলে আসন ভাগাভাগিরও অভিযোগ উঠেছে ইমুর বিরুদ্ধে।

এদিকে, হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা আরও উদ্বেগজনক। তাঁদের দাবি, “ইমু দীর্ঘদিন ধরে হলে ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাঁকে ডেকে অপমান করা হয়।” একজন শিক্ষার্থী বলেন, “তিনি প্রভোস্ট ম্যাডামের বিভাগের ছাত্রী। এ কারণে যা খুশি করেন। অনেকে মুখ খুলতে পারে না।”

আরেকজন বলেন, “ডিবেটিং সোসাইটিতে তাঁর নেতৃত্বই অবৈধ। নির্বাচন হয়নি, গঠনতন্ত্র মানা হয়নি। তিনি নিজেই দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন এবং সেই ক্ষমতা দেখিয়েই বাকি সব নিয়ন্ত্রণ করেন।”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফাতেমাতুজ জোহরা ইমু বলেন, “হলের খাবারে মাঝে মাঝে পোকা পাওয়া যায়, এটা সত্যি। তবে ওই শিক্ষার্থী দুই জায়গায় দুই কথা বলেছে এবং ভোটের প্রসঙ্গ টেনেছে। আমি শুধু জানতে চেয়েছি কেন এমন পোস্ট দিল।” তিনি আরও দাবি করেন, “আমাকেও সে হুমকি দিয়েছে।”

তবে মাবুদার বক্তব্য ভিন্ন। তিনি বলেন, “আমার পোস্টে কোনো ব্যক্তির নাম ছিল না। শুধু খাবারের মান নিয়ে বলেছি। ইমু আপু সেটাকে রাজনৈতিক ইস্যু বানালেন। এখন যদি ভোটের আগে এমন আচরণ হয়, ভোটে জিতে গেলে কী হবে—তা সহজেই বোঝা যায়।”

মাবুদার পোস্টে সহমত প্রকাশ করে অনেক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেছেন যে বিষয়টি ‘বাজে রাজনীতি’ এবং ইমুর আচরণের কারণে হলের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সন্ধী লেখেন, “পুরো প্রসঙ্গটাই খাবার নয়, ভোট। কেউ ভালো কিছু বলতে গেলেই তাকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। এটা খুব নোংরা প্রবণতা।”

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রভোস্ট এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আঞ্জুমান আরা বলেন, “নির্বাচন সামনে রেখে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। যদি ইমু সত্যিই তাকে (মাবুদা) ক্ষমা চাইতে বলতে গিয়ে চাপ সৃষ্টি করে থাকে, তাহলে তাকেও ক্ষমা চাইতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ এসেছে, বরবটি-কলমিশাক নিষিদ্ধ করা ছিল—তবুও কেন আনা হলো সেটিও তদন্ত করা হবে। রোববার বৈঠক ডাকা হয়েছে।”

প্রভোস্ট আরও স্বীকার করেন, “আমি শুনেছি ইমু মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। এ বিষয়ে হলে কয়েকটি অভিযোগ এসেছে। প্রয়োজন হলে কঠোর ব্যবস্থা নেব।”

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত