Ad T1

সাইবার বুলিংয়ের অদৃশ্য আঘাত

আরিফ বিন নজরুল
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৭: ৪৮
সাইবার বুলিং হলো ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান করা। হয়রানি করা বা হুমকি দেওয়া। এটি সাধারণত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মেসেজিং অ্যাপ, গেমিং প্ল্যাটফর্ম এবং ই-মেইলের মাধ্যমে ঘটে থাকে। কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্করাও এর শিকার হতে পারে। বর্তমানে ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাইবার বুলিং-এর হারও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সাইবার বুলিংয়ের ধরন ও কৌশল
সাইবার বুলিং সাধারণত বিভিন্ন উপায়ে সংঘটিত হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো হুমকি ও অপমানমূলক বার্তা পাঠানো। ই-মেইল, মেসেজিং অ্যাপ বা সোশ্যাল মিডিয়ায় কাউকে হুমকি দেওয়া বা অপমান করা হয়। যাতে ভুক্তভোগী মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ///এছাড়া, ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করা সাইবার বুলিংয়ের আরেকটি কৌশল। যেখানে কারও নাম বা ছবি ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়। একইসঙ্গে, ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি বা ভিডিও অনুমতি ছাড়া অনলাইনে প্রকাশ করাও সাইবার বুলিং-এর অংশ। এ ধরনের কাজ সাধারণত অন্যের সম্মানহানি বা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে করা হয়। অনেক সময় অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্ম বা সোশ্যাল মিডিয়ায় অবাঞ্ছিত মন্তব্য করাও সাইবার বুলিং-এর অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও, ইম্পারসনেশন (Impersonation) পদ্ধতিতে কারও আইডেন্টিটি নকল করে অপকর্ম করা হয়। যা ব্যবহারকারীর নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে বিপন্ন করে।
সাইবার বুলিং-এর প্রভাব
সাইবার বুলিং-এর শিকার হওয়া ব্যক্তিরা মানসিকভাবে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এই ধরনের আক্রমণ মানসিক চাপ ও হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে অনেকেই বিষণ্ণতা বা আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভোগেন। এমনকি, মানসিক যন্ত্রণার কারণে আত্মহত্যার প্রবণতাও তৈরি হতে পারে। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সাইবার বুলিং-এর শিকার ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ হারাতে পারে। কর্মজীবীদের ক্ষেত্রেও কাজের দক্ষতা কমে যেতে পারে। অনলাইনে অব্যাহত হয়রানির কারণে অনেকেই ইন্টারনেট ব্যবহারের ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেন। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, দীর্ঘমেয়াদে সাইবার বুলিং-এর কারণে ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস কমে যায়। এবং তারা নিজেদের অযোগ্য মনে করতে শুরু করেন।
প্রতিরোধের উপায়
সাইবার বুলিং প্রতিরোধের জন্য কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রথমত, প্রাইভেসি সেটিংস ব্যবহার করা উচিত। যাতে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, অপরিচিতদের সাথে তথ্য শেয়ার না করা। সন্দেহজনক লিংক বা মেসেজ এড়িয়ে চলার অভ্যাস গড়ে তোলা । তৃতীয়ত, যদি কেউ সাইবার বুলিং-এর শিকার হন। তাহলে সংশ্লিষ্ট প্রোফাইল বা মেসেজ ব্লক ও রিপোর্ট করা দরকার। চতুর্থত, খোলামেলা আলোচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাইবার বুলিং-এর বিষয়ে পরিবারের সদস্য, শিক্ষক বা বন্ধুদের সাথে আলোচনা করলে মানসিক চাপ কমানো যায়। পঞ্চমত, ডিজিটাল লিটারেসি বৃদ্ধি করা জরুরি। ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো। নিরাপদ ব্রাউজিংয়ের কৌশল শেখা সাইবার বুলিং প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
আইনগত সুরক্ষা ও পদক্ষেপ
সাইবার বুলিং প্রতিরোধে আইনগত সুরক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশসহ অনেক দেশে সাইবার বুলিং-এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন, বাংলাদেশে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৮-এর অধীনে সাইবার বুলিং-এর শিকার হওয়া ব্যক্তি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হলো অভিযোগ দায়ের করা। সাইবার ট্রাইবুনালে অভিযোগ দায়েরের মাধ্যমে ভুক্তভোগী ন্যায়বিচারের জন্য আবেদন করতে পারেন। এছাড়া, আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে সঠিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করাও অত্যন্ত জরুরি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সাইবার অপরাধ দমন ও প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি, ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার জন্য কড়া আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। সাইবার বুলিং-এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও গুরুত্বপূর্ণ। বৈশ্বিক উদ্যোগ ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হতে পারে।
ভবিষ্যৎ করণীয়
সাইবার বুলিং প্রতিরোধে প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা বাড়াতে ক্লাউড-ভিত্তিক প্রযুক্তি। উন্নত মনিটরিং সিস্টেম এবং AI নির্ভর সুরক্ষা পদ্ধতির বিকাশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে সাইবার বুলিং সম্পর্কে শিক্ষাদান ও সচেতনতা সৃষ্টির কার্যক্রম বাড়ানো দরকার। সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সাইবার বুলিং-এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সাইবার বুলিং প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
Ad

একটি শ্রেণি রাষ্ট্রের কোষাগারকে নিজেদের সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করছে

ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ২ কোটি শিখ পাকিস্তানের পক্ষে: পান্নুন

ভারত-পাকিস্তান চাইলে মধ্যস্থতা করবে বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রাবিসাসের নতুন সভাপতি ইরফান, সম্পাদক সাজিদ

বেড়ীবাঁধ পুনর্বাসন ঢাল অরক্ষিত, জলোচ্ছ্বাস ঝুঁকিতে সন্দ্বীপবাসী

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত