ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ওসমান হাদির ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের অফিসগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ প্রেক্ষাপটে ইসি সচিবালয়সহ সারা দেশের মাঠ কার্যালয়গুলোর নিরাপত্তা জোরদারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
ইসির ওই চিঠিতে দুটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑইসির নিজস্ব তিনজন রিটার্নিং কর্মকর্তার ব্যক্তিগত ও অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচন অফিসগুলোর নিরাপত্তা বৃদ্ধি।
এদিকে, শনিবার নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা (আরইও) নিজ নিজ এলাকায় এসপি ও সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের কাছে পৃথক চিঠি দিয়ে মাঠ অফিসগুলোর নিরাপত্তা জোরদারের অনুরোধ জানান।
এর পাশাপাশি ইসি সচিবালয় ও মাঠ কার্যালয়গুলোর অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গতকাল শনিবার বিকেলে আরইওদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় শাখা থেকে সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রয়োজনীয় চিঠি পাঠানো হয়। ইসির নির্ভরযোগ্য সূত্র আমার দেশকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছে, গত শুক্রবার ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হাদির উপরে সন্ত্রাসী হামলা হয়। তফসিল ঘোষণার পরদিনের এমন ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে সবার আগে নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইসির নির্বাচন কার্যালয়ের নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে চলে আসে।
সূত্র জানায়, কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা না থাকলেও শুক্রবার রাতেই ইসির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অনলাইন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বৈঠক করে নিজেদের নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই শনিবার সকালে ১০টি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের পক্ষ থেকে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে এসপি ও ওসিদের কাছে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একাধিক আঞ্চলিক কর্মকর্তা আমার দেশকে জানান, রাতে বসে সিদ্ধান্ত নিলাম শনিবার সকালে এসপি ও ওসিকে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য চিঠি পাঠানোর। কিন্তু, চিঠি দেওয়ার আগেই লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন অফিসে পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। শনিবার ভোরে সংঘটিত ওই ঘটনায় অফিসের নিচতলায় গুদামে সংরক্ষিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে যায়। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুর রশিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দ্রুত আগুন শনাক্ত হওয়ায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন নির্বাচনি সামগ্রী জেলা ও থানা নির্বাচন অফিসগুলোতে সংরক্ষিত রয়েছে। ফলে নির্বাচন ভণ্ডুল করতে আগ্রহী দুর্বৃত্তদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে এসব অফিস।
ইসি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সম্ভাব্য এক প্রার্থীর ওপর হামলার পর কমিশনের তৎপরতা বেড়েছে। ভোটের সময় ঘনিয়ে এলে পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে—এমন আশঙ্কায় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে। কমিশনারদের পক্ষে সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করছেন। নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের দিক থেকেও কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় বলেও উভয় পক্ষের সূত্রগুলো আমার দেশকে নিশ্চিত করেন।
ইসি সূত্র জানায়, শনিবার বিকেলে সব আরইওর সঙ্গে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে তিনজন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও তাদের অফিসের পাশাপাশি সব মাঠ অফিসের সার্বিক নিরাপত্তা নজরদারি জোরদারের অনুরোধ জানানো হয়েছে। এর আগেও নিরাপত্তা ইস্যুতে ইসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল।
ইসি সচিবালয়ের দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশন বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে নির্বাচন পরিচালনা করছে। ফলে নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খুব সহজেই পাচার হয়ে যাচ্ছে। বিগত বিতর্কিত তিনটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সেই সময় দায়িত্ব পালন করা পুলিশ কর্মকর্তারা বরখাস্ত ও বদলি হলেও নির্বাচন ব্যবস্থাপনার মূল কারিগর হিসেবে যারা ছিলেন সেই ইসি কর্মকর্তারা বহাল তবিয়তে বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা বিরাজ করছে। গণমাধ্যমে এ বিষয়ে ফলাও করে সংবাদ প্রচার হলেও ইসি অনেকটাই নির্বিকার বলে জানা গেছে।
এদিকে, আজ রোববার থেকে আগাম নির্বাচনের প্রচারসামগ্রী সরাতে অভিযান শুরুর জন্য কমিশন থেকে সব রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারণ তফসিল-পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা শেষ হয়েছে। কিন্তু রাজধানীসহ বেশিরভাগ সংসদীয় আসনে এখনো পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ড রয়ে গেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীর পক্ষে আগাম প্রচারের জন্য এগুলো লাগানো হয়েছিল। এগুলো অপসারণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি আগাম প্রচারে জড়িত থাকলে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে জরিমানা ও কারাদণ্ডসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইসি।

