আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

থার্ড টার্মিনালের নকশায় ত্রুটি, নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক

কবিতা

থার্ড টার্মিনালের নকশায় ত্রুটি, নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নতুনভাবে তৈরি থার্ড টার্মিনালের ভেতরে নেই কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক কাভারেজ। নকশার ত্রুটির কারণে বড় ধরনের এই গলদ হয়েছে বলে জানা গেছে। তাই এখন জরুরিভিত্তিতে নেটওয়ার্ক অবকাঠামো স্থাপন নিয়ে চলছে তোড়জোড়। ফলে পিছিয়ে যাচ্ছে থার্ড টার্মিনালের উদ্বোধন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নকশার ত্রুটি সংশোধনের কাজ শুরু হওয়ার পর আরো ছয় থেকে সাত মাস সময় লাগবে কাজ শেষ হওয়ার জন্য।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের প্রস্তুতি ছিল প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই অবস্থায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নজরে আসে নেটওয়ার্ক না থাকার বিষয়টি। এখন জরুরিভিত্তিতে টার্মিনালের নান্দনিক সিলিং খুলে নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপন করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত মাসে এ নিয়ে বেবিচক বোর্ডের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে টার্মিনালের অভ্যন্তরে নেটওয়ার্ক অবকাঠামো স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিলিংয়ের ভেতর ক্যাবল নিতে হবে, যা আগে পরিকল্পনায় না থাকায় এখন খেসারত দিতে হচ্ছে বেবিচককে। এতে কোটি টাকার গচ্চা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বেবিচক সূত্র জানায়, মূল নকশায় (ডিজাইন) মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এখন সিলিং খুলে নতুন করে নেটওয়ার্ক অবকাঠামো স্থাপন করতে হবে। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় বেবিচক বোর্ড নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় সভাপতি ও সদস্যরা জানান, টার্মিনাল নির্মাণের ৯৯টি ধাপ শেষ হলেও টার্মিনালের অভ্যন্তরে নির্ভরযোগ্য মোবাইল নেটওয়ার্ক সুবিধা স্থাপন শুরু করা যায়নি। নকশাগত ত্রুটির কারণে এখন জরুরি ভিত্তিতে সংশোধন এনে সিলিংয়ের ভেতরে নতুন অবকাঠামো স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।

সভায় সদস্য (পরিকল্পনা ও পরিদর্শন) বলেন, মূল নকশায় মোবাইল নেটওয়ার্কের ‘ইন-বিল্ডিং সলিউশন’ অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ফলে টার্মিনাল চালুর জন্য প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক কাভারেজ নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। যাত্রীসেবা উন্নয়ন, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা এবং অপারেশনের স্বার্থে দ্রুত মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপন জরুরি। এ কারণে বিটিআরসি, মোবাইল অপারেটর, টাওয়ার কোম্পানি এবং ইন্টিগ্রেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে মোবাইল অপারেটরগুলোকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। তবে গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক শুধু জায়গা ভাড়া দিতে রাজি হলেও কোনো রাজস্ব শেয়ার বা সমন্বিত প্রস্তাব দেয়নি। একমাত্র কার্যকর প্রস্তাব দিয়েছে টেলিটক। সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপন করে প্রকল্পটি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে। অন্য অপারেটরদেরও যুক্ত করবে এবং প্রাপ্ত আয়ের একটি অংশ নিয়মিত বেবিচককে প্রদান করবে।

বৈঠকে জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে ৫ বছরের জন্য চুক্তি করা হবে। প্রতি দুবছর পর পর চুক্তি পর্যালোচনা করে সন্তোষজনক বিবেচিত হলে তা নবায়ন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। নবায়নের ক্ষেত্রে বার্ষিক ভাড়া ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেনÑ বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. হুমায়রা সুলতানা, বেবিচক সদস্য (প্রশাসন) এসএম লাবলুর রহমান, এয়ার কমডোর আবু সাঈদ মেহবুব খান, এয়ার কমডোর আসিফ ইকবাল, এয়ার কমডোর মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম, এয়ার কমডোর নূর-ই-আলম, এয়ার কমডোর মো. মুকিত-উল-আলম মিঞা, মোহাম্মদ নাজমুল হক, প্রধান প্রকৌশলী জাকারিয়া হোসেন প্রমুখ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, থার্ড টার্মিনালটি এত সুন্দরভাবে করা হয়েছে যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরকেও হার মানাবে। কিন্তু কয়েকটি স্থানে ভুল আছে। এত বড় টার্মিনালে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকাটা বড় ত্রুটি। ক্যাবলগুলো সিলিংয়ের ভেতর দিয়ে নিতে হবে, ফলে ভাঙা ছাড়া বিকল্প নেই। তবুও চেষ্টা করছি সিলিং না ভেঙে সংযোগ স্থাপন করা যায় কি না। আর সিলিং ভাঙলে আমাদের অন্তত কোটি টাকা গচ্চা যাবে।

তিনি আরো বলেন, ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের। টার্মিনালে আরো কিছু ত্রুটি আছে, সেগুলোও আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।

বেবিচক সূত্র জানায়, যাত্রীদের জন্য টার্মিনালটি খুলে দেওয়ার আগেই নির্মাণকাজ ঘিরে অনিয়ম, দুর্নীতি ও পরিকল্পনার ত্রুটির অভিযোগ উঠেছে। নির্মাণকাজ প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পরও এটি চালুতে বিলম্বের বড় কারণ অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা ও নান্দনিক নকশায় ত্রুটি। সিলিং বা ছাদের অভ্যন্তরীণ সজ্জাতেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন সিদ্ধান্তের ফলে এখন ডিজাইন সংশোধন করে সিলিংয়ের ভেতর প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন কাজ শুরু হবে। টার্মিনালের ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ হলেও মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপনের বিলম্ব বিশ্বমানের বিমানবন্দর পরিচালনায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। টেলিটকের সঙ্গে চুক্তির সিদ্ধান্তে নেটওয়ার্ক স্থাপনের জটিলতা কাটবে এবং দ্রুত যাত্রীসেবায় নতুন সুবিধা যুক্ত হবে বলে বেবিচক আশা করছে। তবে নেটওর্য়াকের কাজ শুরু হওয়ার পর ছয় থেকে সাত মাস সময় লাগবে কাজ শেষ হতে।

২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর একনেক শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়। টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৩৯৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অর্থায়ন করে জাইকা। নকশা করেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন-সিপিজি করপোরেশন প্রাইভেট লিমিটেডের আন্তর্জাতিক মানের স্থপতি। নির্মাণ করছে জাপানের সিমুজি ও কোরিয়ার স্যামসাংয়ের যৌথ উদ্যোগ এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি)।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের জনসংযোগ কর্মকর্তা কাওছার মাহমুদ আমার দেশকে বলেন, মোবাইল নেটওয়ার্কের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। যাতে দ্রুততম সময়ে টার্মিনালটি যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া সম্ভব হয়।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন