Ad T1

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৩ বছরের পক্ষে তরুণরা: জরিপ

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮: ১২
আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮: ২০

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোতে নানা বক্তব্য রয়েছে। তবে যাদের হাত ধরে অভ্যুত্থান হয়েছে, সেই তরুণদের অধিকাংশ বলছেন, বর্তমান অস্থায়ী সরকারের মেয়াদ এক থেকে তিন বছর হওয়া উত্তম।

সমসাময়িক বাংলাদেশে যুব সমাজের অবস্থান, ভাবনা ও প্রত্যাশা জানার জন্য সরাসরি ও অনলাইলে এই জরিপ করেছে বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি)। ‘ইয়ুথ ম্যাটার্স সার্ভে’ শীর্ষক এই জরিপের ফলাফল সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে প্রকাশ করা হয়। ফলাফল তুলে ধরেন বিওয়াইএলসি’র রিসার্চ, মনিটরিং এন্ড ইভাল্যুয়েশন ম্যানেজার আবুল খায়ের সজীব।

দেশের ২৩টি জেলায় সরাসরি ১ হাজার ৫৭৫ জন তরুণ-তরুণী জরিপে সরাসরি অংশ নেন। এছাড়া অনলাইনে অংশ নেন ১ হাজার ৬৬৩ জন।

বিওয়াইএলসি প্রতি পাঁচ বছর অন্তর বিশেষত জাতীয় নির্বাচনের আগে এই জরিপ পরিচালনা করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে। কিন্তু জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে যে পরিবর্তিত পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে তাতে তরুণরা আগামীর বাংলাদেশ গঠনে কোন কোন বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে তা তুলে ধরাই এই বছরের জরিপের মুল উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।

গত বছরের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসজুড়ে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে তরুণদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবিকা, জলবায়ু পরিবর্তন, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও সুশাসন, তথ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভিপ্রয়াণ বিষয়ে তাদের মতামত জানতে চাওয়া হয়।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, পতিত আওয়ামী লীগ আমলের চেয়ে বর্তমানে পাবলিক প্ল্যাটফর্মে নিজেদের মতামত প্রকাশে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বেশিরভাগ তরুণ-তরুণী। শতকরায় যায় ৭৮ শতাংশ। ৪৬ দশমিক ১৫ শতাংশ তরুণ-তরুণী মনে করেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ১ থেকে ৩ বছর হওয়া উচিত। এর মধ্যে সরাসরি জরিপে এই মত দেন ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ ও অনলাইনে একই মত দেন ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ।

এতে আরও বলা হয়, সরাসরি জরিপে অংশ নেয়া ২১ শতাংশ ও অনলাইনে অংশ নেওয়া ৫৪ শতাংশ তরুণ নিশ্চিত নন যে বাংলাদেশে শান্তি শৃঙ্কলা বিরাজ করছে কিনা। অপরদিকে, সরাসরি জরিপে ২৫ শতাংশ তরুণ নারীরা নিরাপদ নয় বললেও অনলাইনে এই হার ৭০ শতাংশ মনে করে যে বর্তমান বাংলাদেশে মেয়ে ও নারীরা নিরাপদ বোধ করতে পারছে না।

জীবিকার মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশি তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হবার মানসিকতা দিন দিন বাড়ছে। উভয় মাধ্যমে ৫২ শতাংশ তরুণ ভবিষ্যৎ পেশা হিসেবে উদ্যোক্তা হতে চেয়েছেন।

নজর দিয়েছেন শিক্ষার মান উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে তরুণেরা। ৭৯ শতাংশই ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার অবাধ পরিবেশ বজায় রাখার অন্তরায় বলে মনে করেন। এছাড়া, সরাসরি জরিপে ৭৭ শতাংশ তরুণ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা প্রদান করে মনে করলেও অনলাইন জরিপের ক্ষেত্রে ৭৯ দশমিক তরুণ তা মনে করে না।

বেড়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। সরাসরি জরিপে ৮৬ শতাংশ ও অনলাইনে ৩৯ শতাংশ তরুণ মনে করে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি বজায় আছে। এছাড়াও সরাসরি জরিপে প্রায় ৬৯ শতাংশ ও অনলাইনে অংশ নেওয়া ৮৫ শতাংশ তরুণ মনে করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারিবাহিনীর কোন নির্দিষ্ট দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ প্রদর্শন করা উচিত নয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিওয়াইএলসি’র নির্বাহী পরিচালক তাহসিনাহ আহমেদ বলেন ‘যুব সমাজের প্রত্যাশা অনুযায়ী আগামীর রুপরেখা তৈরীর জন্য ইয়ুথ ম্যাটারস সার্ভে একটি প্রমাণভিত্তিক দলিল। এই সমীক্ষা আমাদের দেখিয়েছে যে, দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে যুব সমাজ সবার আগে সংস্কার চায়। তারা চায় দেশে দুর্নীতি বন্ধ হোক, স্বজনপ্রীতি দূর হোক, নাগরিকদের, বিশেষ করে নারীদের অধিকার, নিরাপাত্তা ও সম্মান নিশ্চত থাকুক। তারা নির্ভয়ে কথা বলার পরিবেশ চায়। তারা দেশের উন্নয়ন ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ চায়। তারা বলেছে যে এইসব সংস্কার কার্যকর করার জন্য সরকারকে সময় দিতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সরকারের সাথে একতাবদ্ধ হয়ে তারা কাজ করতে চায়। কিছু সংখ্যক নতুন রাজনৈতিক দল আসুক তা চাইলেও বেশিরভাগ তরুণ তরুণী চায় যে পুরানো দলগুলোর সংস্কার হোক, রাজনীতিতে ভাল মানুষ প্রার্থী হিসেবে আসুক। তাদের আকাঙ্খা সমূহ বাস্তবায়ন করা আমাদের সবার দায়িত্ব।”

বিওয়াইএলসি’র স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের ডেপুটি ম্যানেজার মুনিরা সুলতানা বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের জন্য যথাযথভাবে প্রস্তুত করতে পারছে না। এ সমস্যার সমাধানে বিওয়াইএলসি তাদের প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে সমস্যা সমাধান, সংঘাত নিরসন, এবং জনসমক্ষে কথা বলার মতো গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতাগুলো অন্তর্ভুক্ত করছে, যাতে শিক্ষার্থীরা শ্রম বাজারের চাহিদার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।’

বিওয়াইএলসি’র অফিস অব প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট’র ডেপুটি ম্যানেজার আহসান হাবিব বলেন, ‘সার্ভে দেখিয়েছে যে যুব সমাজ রাজনৈতিক দলে সংস্কার দাবি করছে, প্রচলিত পদ্ধতিগুলো প্রত্যাখ্যান করছে এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অর্থবহ পরিবর্তন চাইছে। তারা শুধু পরিবর্তন চায় না, তারা পরিবর্তনের অংশ হতে চায়, এবং বিওয়াইএলসি সবসময় তাদের মূল্যবোধ, দক্ষতা, এবং মানসিকতায় উন্নত করতে পাশে থাকবে।’

Ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত