জোটসঙ্গী থেকে এখন প্রধান প্রতিপক্ষ

এমরান এস হোসাইন ও রকীবুল হক
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ৩৫

জোটসঙ্গী হিসেবে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে একসঙ্গে পথ চলেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি তারা সম্মিলিতভাবে সরকারও চালিয়েছে। তবে জুলাই বিপ্লবের পর থেকেই দল দুটি একে অপরের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে।

রাজনীতির মাঠে পরস্পরে জড়াচ্ছে কঠোর সমালোচনায়। একদল অন্য দলের কথার পিঠে কথা বলছে। অভ্যন্তরীণ দোষ খুঁজে একজন আরেকজনকে ঘায়েল করার চেষ্টাও করছে। সংস্কার ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতেও বিপরীত অবস্থান নিয়েছে দেশের প্রধান দল দুটি।

বিজ্ঞাপন

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুই দলের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠার প্রধান কারণ ক্ষমতার প্রশ্ন। উভয় দলই আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হতে চাচ্ছে। এজন্য একে অপরের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠবে, নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবেÑএটাই স্বাভাবিক। তবে এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা সুস্থ ধারায় হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষমতা ও রাজপথের আন্দোলনের দীর্ঘদিনের বন্ধু হলেও বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সম্পর্কের বড় ধরনের অবনতি ঘটেছে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে পরস্পরের ভিন্ন অবস্থানের কারণেই সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এ সময় দল দুটির নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে নানাভাবে বিষোদ্গার করতে থাকেন। বিভিন্ন বিষয়ে বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতির পাশাপাশি প্রকাশ্যে একে অপরের সমালোচনা শুরু করেন। বিএনপির পক্ষ থেকে জামায়াতকে আওয়ামী স্টাইলে ‘স্বাধীনতাবিরোধী দল’ হিসেবে আখ্যায়িত করার চেষ্টা চলছে। অপরদিকে জামায়াতের পক্ষ থেকেও বিএনপিকে চাঁদাবাজসহ আওয়ামী চরিত্রের সঙ্গে তুলনা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, এক চাঁদাবাজ দল পালিয়েছে, আরেক দল চাঁদাবাজিতে লেগে গেছে। জবাব দিতে গিয়ে অপর এক অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জামায়াতের প্রতি উদারতা দেখিয়ে উপহার হিসেবে মুনাফেকি পেয়েছে বিএনপি।

গত ১৯ জুলাই অনুষ্ঠিত জামায়াতের জাতীয় সমাবেশে জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত প্রায় সব দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও দাওয়াত দেওয়া হয়নি বিএনপিকে। এর কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল-তাদের আয়োজনটি পিআর পদ্ধতির পক্ষে। এজন্য পিআরের প‌ক্ষে থাকা দলগুলোকে সমাবেশে আমন্ত্রণ করেছিল। আর বিএনপি পিআরের বিপক্ষে।

এর আগে গত বছরের ১৪ নভেম্বর বিএনপি তাদের ৩১ দফা নিয়ে যে সেমিনার আয়োজন করেছিল, সেখানে জামায়াতকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ওই সেমিনারে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বক্তব্যও দেন।

বিভিন্ন ইস্যুতে গত এক বছরের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের ধারাবাহিকতায় পিআর পদ্ধতি, নির্বাচনের আগে নাকি পরে গণভোটÑএ প্রশ্নে বিবাদে জড়িয়েছে বিএনপি-জামায়াত। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে দল দুটির মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ তৈরি হয়েছে। এছাড়া গত এক বছরে সংসদ নির্বাচনের সময়কাল, স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতকে পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিতে দেখা গেছে।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সুসম্পর্কের সূচনা নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। ১৯৯১ সালে নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের আসন সমঝোতা হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি আসন পেলেও সরকার গঠনে তা যথেষ্ট ছিল না। পরে জামায়াত বিএনপিকে সমর্থন দিলে দলটি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জামায়াত পেয়েছিল ১৮টি আসন। বিএনপিকে সমর্থন দিলেও তখন দলটি ক্ষমতার অংশীদার হয়নি। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের টানাপোড়েন শুরু হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একজোট হয়ে জামায়াতও সংসদ থেকে পদত্যাগ করে। আওয়ামী লীগের মতো ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে জামায়াত। এরপর কিছুটা ভাটা পড়ে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কে। ওই বছরের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে অংশ নিয়ে মাত্র তিনটি আসন পায় তারা।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর আবার এক কাতারে আসে বিএনপি ও জামায়াত। পরে ১৯৯৯ সালে আবার বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়। ওই সময় বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট গঠিত হয়। ওই জোটে জামায়াত ছাড়াও জাতীয় পার্টি (নাজিউর) এবং ইসলামী ঐক্যজোট। ওই জোট ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ১৭টি আসন লাভের পাশাপাশি জামায়াতের শীর্ষ দুই নেতা মন্ত্রিসভায় যুক্ত হন।

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়। তবে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা জোটবদ্ধভাবেই অংশ নেয়। ওই নির্বাচনে ৪ দলের ভরাডুবি হয়। এরপর থেকে নিজেদের মধ্যে কিছুটা টানাপোড়েন তৈরি হলেও জোটের সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ থাকে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট আরো সম্প্রসারিত হয়। ২০১২ সালে প্রথমে ১৮ দলীয় ও পরে আরো দুটি দল যুক্ত হয়ে ২০ দলীয় জোট গঠন করে। আওয়ামী লীগের বাতিল করে দেওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন অব্যাহত রাখে তারা।

বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ থেকে জামায়াতও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে। জোটবদ্ধ থাকাকালে বিএনপি ও জামায়াত জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও নিজেদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে অংশ নিয়েছে। দেশের সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এই সমঝোতার ছাপ পড়ে।

এদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কে উত্থান-পতন হয়। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে ‘মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে’ আওয়ামী লীগ সরকার বিচার শুরু করলেও বিএনপির অনেক নেতাসহ ২০ দলীয় জোটের নেতারা নিশ্চুপ ছিলেন। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ওই বিচারকে ‘প্রহসন’ আখ্যায়িত করে তার কঠোর সমালোচনা করেন।

খালেদা জিয়া একাধিক জনসভায় বক্তব্য দিয়ে জামায়াত নেতাদের মুক্তি দাবি করেন। এজন্য সংসদে বিএনপি প্রধানের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনারও দাবি ওঠে। জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার বিচারের রায় ঘোষণার পরও খালেদা জিয়া তার নিন্দা জানান। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ গঠন করে লাগাতার আন্দোলন শুরু হলে বিএনপি প্রথম দিকে চুপ থাকলেও সপ্তাহখানেক পরে বিবৃতি দিয়ে তারুণ্যের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। তবে তারা শাহবাগের আন্দোলনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ওঠায় সন্দেহ প্রকাশ করে। বিবৃতিতে তারা বলেন, আমরা সব সময় বলে আসছি, বিএনপি যুদ্ধাপরাধের বিচার চায়। তবে সেই বিচার হতে হবে স্বচ্ছ।

এর মাসখানেক পরে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসন শাহবাগের আন্দোলনের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, শাহবাগ থেকে সবার ফাঁসির দাবির প্রতি প্রধানমন্ত্রী একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাইব্যুনালের পক্ষে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার করা সম্ভব নয়। এই ট্রাইব্যুনালের যে কোনো রায়ই এখন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা যায় ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে। ওই নির্বাচনের আগে বাম-ডান মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে বিএনপি। এর নেতৃত্বে ছিলেন ড. কামাল হোসেন। ওই জোটে বিএনপি ২০ দলীয় জোটের শরিকদের অন্তর্ভুক্ত করলেও জামায়াতকে বাইরে রাখা হয়।

জানা যায়, ড. কামাল হোসেনসহ বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তিতে জামায়াতকে যুক্ত করা হয়নি। তবে, জামায়াতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক রাখে বিএনপি। ওই সময় জামায়াতের ২২ নেতা বিএনপির মনোনয়নে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে। এছাড়া দলটির কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের রাতের ভোটের ম্যাকানিজমে ওই নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবি হয়। ওই নির্বাচনের পর ঐক্যফ্রন্ট অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের মধ্যেও শীতল সম্পর্ক তৈরি হয়।

এমনকি এ সময় একে অপরের ইফতার মাহফিলসহ সামাজিক কর্মসূচিতেও অংশ নিতে দেখা যায়নি। দুই দলের এই শীতল সম্পর্ক বেশ কিছুদিন চাপা থাকলেও অনেকটা প্রকাশ্যে চলে আসে ২০২২ সালের শেষভাগে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের এক বক্তব্যের জের ধরে। তিনি ঘরোয়া একটি অনুষ্ঠানে জোট নিয়ে কথা বলেন। যার ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে তিনি বলার চেষ্টা করেন, আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা আন্দোলনের দিন থেকেই সম্পর্কের অবনতি হয়।

ওই বছর সেপ্টেম্বরে ঘরোয়া কর্মসূচিতে তিনি বলেন, আমরা এতদিন একটা জোটের সঙ্গে ছিলাম। ছিলাম বলে আপনারা হয়তো ভাবছেন কিছু হয়ে গেছে নাকি? ২০০৬ সাল পর্যন্ত এটি একটি জোট ছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর জোট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। সেদিন বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল। সেটা আর ফিরে আসেনি। বছরের পর বছর এই ধরনের অকার্যকর জোট চলতে পারে না।

বৈঠকে তিনি আরো বলেন, জোট কার্যকর করার কোনো উদ্যোগ বিএনপির নেই। জামায়াতের শীর্ষ নেতার ওই বক্তব্যের পর বিএনপি আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও দলের কয়েক নেতা তার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান অনানুষ্ঠানিক সভায় শরিকদের ডেকে জানিয়ে দেন, এখন থেকে কেউ যেন ২০ দলীয় জোটের নাম ব্যবহার না করে। এর উদ্দেশ্য, দলগুলো যাতে যার যার অবস্থান থেকে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত হয়।

এর কয়েক মাস পরে ২০২৩ সালে দুই দলের মধ্যে দূরত্ব কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। তবে, ওই সময় সরকার পতনে একই দিনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কর্মসূচি পালনের বিষয়ে একমত হয়। এর অংশ হিসেবে সরকার পতনের ডাক দিয়ে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। একই দিনে জামায়াত আরামবাগ এলাকায় সমাবেশ করে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক লাঠিপেটায় বিএনপির ওই কর্মসূচি ব্যর্থ হওয়ার পর দুই দল আবারো ব্যাকফুটে চলে যায়। এদিকে গত বছরের ছাত্র আন্দোলনের সময় দুই দল যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করে বলে জানা যায়।

এর আগে গত দুই দশক ধরে বিএনপি-জামায়াতের জোটে ভাঙন ধরানোর জন্য নানা চেষ্টা হলেও তখন তারা সফল হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকেও ব্যবহার করে মাঝেমধ্যে সম্পর্কে কিছুটা দূরত্ব তৈরি করতে সক্ষম হলেও জোট ভাঙতে পরেনি।

জানা গেছে, জামায়াত নেতাদের প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ইতিবাচক ও বিশ্বস্ত সম্পর্কের কারণে ওই সময় ষড়যন্ত্রকারীরা সুবিধা করতে পারেনি। সর্বশেষ গত এপ্রিলে লন্ডনে তারেক রহমানের বাসায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমির সাক্ষাৎ করেন। ওই সময় তারেক রহমানও উপস্থিত ছিলেন। এর আগে খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালে ২০২৩ সালে দলটির একটি প্রতিনিধি দেখতে গিয়েছিল।

বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে কেন দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। আমার দেশকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, নির্বাচন বা অন্য প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে যদি দেশের প্রসঙ্গ আসে তাহলে বলব জাতীয় নিরাপত্তার জন্য পরস্পরের বিরোধ প্রত্যাশিত নয়।

তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে যারা সমর্থন দিয়েছে এবং অংশগ্রহণ করেছে, তাদের সবারই একটি ন্যূনতম কমন গ্রাউন্ডে ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিত ছিল। কিন্তু এখন দেখছি ঐক্যের পরিবর্তে বিভেদ তৈরি হচ্ছে। এটা দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে খুবই উদ্বেগজনক। এটা না হওয়াই শ্রেয় ছিল। কিন্তু দৃশ্যত যেটা হচ্ছে একে অপরের কথার পিঠে কথা বলছেন। তীব্র সমালোচনা করছেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে এটা কাম্য নয়।

সাম্প্রতিক ঘটনাবলির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে, এখানে সেখানে অগ্নিসংযোগ হচ্ছে, নাশকতা ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের কাছে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যই কাম্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান আমার দেশকে বলেন, রাজনীতিতে তারা এখন একে অপরের প্রতিপক্ষ, এটাই এখন স্বাভাবিক। কারণ, রাজনীতির প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতা। দুই দলের কমন শত্রুর অনুপস্থিতিতে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তারা একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এবং এটাই রাজনৈতিক দলের চরিত্র।

এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, সুস্থ রাজনৈতিক ধারা বজায় রেখে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে কোনো অসুবিধা নেই। তিনি আরো বলেন, ফ্যাসিবাদ পুরোপুরি নির্মূল হয়ে গেছে এমনটি আমরা বলতে পারছি না। এ কারণে উচিত হবে জুলাই আন্দোলনের পক্ষের সব শক্তির নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে পথচলা। সবাই অসুস্থ রাজনৈতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে সুস্থ রাজনৈতিক ধারায় চলতে পারলে তা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত