অবিস্ফোরিত ইসরাইলি বোমায় প্রাণহানির শঙ্কায় ফিলিস্তিনিরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৩৩
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৪১
ছবি: আল জাজিরা

অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় যুদ্ধবিরতির দুই সপ্তাহের বেশি সময় পার হয়েছে। আমেরিকা, মিসর, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় এ যুদ্ধবিরতির আওতায় ইসরাইলের ব্যাপক আগ্রাসন বন্ধ হয়েছে। যুদ্ধবিরতির পরপরই বিধ্বস্ত ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছেন স্থানীয়রা।

কিন্তু এর মধ্যেই গাজাবাসীকে লক্ষ্য করে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি সেনারা। কথিত ‘হলুদ সীমারেখা’ (ইয়েলো লাইন) পার হওয়ার অজুহাতে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলিবর্ষণ করে যুদ্ধবিরতির শর্ত ভাঙছে তারা। এছাড়া গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর ফেলা অবিস্ফোরিত বোমায়ও প্রাণহানির শঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা।

বিজ্ঞাপন

ব্রিটেনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হ্যালো ট্রাস্টের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক পরিচালক নিকোলাস টরবেট আলজাজিরাকে বলেন, গাজার প্রতিটি অংশেই বোমা হামলা চালানো হয়েছে। তবে কিছু কিছু বোমা অবিস্ফোরিত অবস্থায় রয়ে গেছে। এগুলো যেকোনো সময় বিস্ফোরিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, এ ধরনের অবিস্ফোরিত বোমা ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারের কাজকে ধীরগতি করছে। তার দল গাজায় অবিস্ফোরিত বোমা নিরাপদে অপসারণের লক্ষ্যে সরাসরি কাজের পরিকল্পনায় রয়েছে।

টরবেট বলেন, গাজায় বোমা অপসারণে খুবই সাধারণ সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো ছোট ছোট যানে বা হাতে করেই সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

আলজাজিরাকে ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, পুরো দুবছরে অন্তত দুই লাখ টন বোমা পুরো উপত্যকায় ফেলেছে ইসরাইল। এর মধ্যে কম করে ৭০ হাজার টন বোমা অবিস্ফোরিত রয়েছে।

অবিস্ফোরিত বোমায় বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে শিশুরা। গাজার সাংবাদিকরা জানান, অবিস্ফোরিত বোমাকে খেলনা মনে করে খেলতে গিয়ে তারা নিজেদের হুমকির মুখে ফেলছে। আলজাজিরার প্রতিনিধি ইবরাহিম আল-খলিল জানান, সম্প্রতি গাজা শহরে সাত বছরের ইয়াহিয়া শোরবাসি ও তার বোন নাবিলা এমনই এক বোমা নিয়ে খেলতে গিয়ে বিস্ফোরণে আহত হয়। ইয়াহিয়ার ডান হাত কেটে ফেলতে হয়েছে আর নাবিলা এখনো হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে রয়েছে।

এর মধ্যেও গাজায় ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করে পুনর্নির্মাণ কাজের জন্য ভারী সরঞ্জাম প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ইসরাইল। রোববার গাজা শহরের মেয়র ইয়াহিয়া আল-সাররাজ জানান, নগরীর ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার ও পুনর্নির্মাণ কাজের জন্য অন্তত ২৫০ ভারী বাহন ও এক হাজার টন সিমেন্ট প্রয়োজন। কিন্তু ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ এ সরঞ্জাম প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।

এছাড়া তেলআবিব গাজায় ত্রাণ সরবরাহ কার্যক্রম পরিচালনায় জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা ইউএনআরডব্লিউকে বাধা দিচ্ছে। রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে সংস্থাটি জানায়, ইসরাইল গাজায় সংস্থাটির কর্মী ও এর ত্রাণবহরকে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে।

বর্তমানে গাজার স্থানীয় ১২ হাজার কর্মী যুদ্ধবিধ্বস্ত দুর্গত অঞ্চলটির মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, মানসিক সমর্থন ও শিক্ষা সহায়তা দিয়ে আসছে বলে পোস্টে জানানো হয়।

ইউএনআরডব্লিউএর পোস্টে বলা হয়, ‘খাদ্য, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম, তাঁবু ও অন্যান্য সরবরাহ জরুরিভাবে প্রয়োজন। শুধু যুদ্ধবিরতিই যথেষ্ট নয়।’

এদিকে সোমবার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আগের ৪৮ ঘণ্টায় ধ্বংসস্তূপ থেকে আটজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরো ১৩ ফিলিস্তিনি। সব মিলিয়ে দুবছরের ইসরাইলি আগ্রাসনে সর্বমোট ৬৮ হাজার ৫২৭ জন নিহত এবং এক লাখ ৭০ হাজার ৩৯৫ জন আহত হয়েছেন।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত