রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন শান্তি পরিকল্পনার খসড়া ফাঁস হয়ে গেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বর্তমানে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন পূর্বাঞ্চল ছেড়ে দিতে হবে, সেনাবাহিনীর আকার উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট করতে হবে এবং ন্যাটোতে যোগদান না করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। খবর বিবিসির।
২৮ দফা পরিকল্পনা অনুযায়ী ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা হবে এবং ‘কেউ কারো বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালাবে না-এ বিষয়ে রাশিয়া, ইউক্রেন এবং ইউরোপের মধ্যে একটি চুক্তি হবে’, কিয়েভের জন্য শক্তিশালী বা নির্ভরযোগ্য ‘নিরাপত্তা গ্যারান্টি’ থাকবে।
যদি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে তবে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল এবং চুক্তি বাতিলের পাশাপাশি ‘পাল্টা শক্তিশালী সমন্বিত সামরিক অভিযানের’ প্রস্তাব রয়েছে।
তবে নিরাপত্তা গ্যারান্টির ক্ষেত্রে, কে তা প্রদান করবে এবং কতটা শক্তিশালী হতে পারে সে সম্পর্কে কোনো বিশদ বিবরণ পরিকল্পনায় নেই। এই পরিকল্পনার উল্লেখযোগ্য দিক হলো-
- ইউক্রেনের ভূখণ্ড হস্তান্তর এবং সশস্ত্র বাহিনী হ্রাস
সবচেয়ে বিতর্কিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনকে তার নিজস্ব ভূখণ্ড রাশিয়াকে হস্তান্তর করতে হবে এবং তার সশস্ত্র বাহিনীর আকার ছোট করতে হবে। ইউক্রেনকে অবশ্যই দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক থেকে নিজেদের সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নিতে হবে এবং এ দুই প্রদেশকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর আকার ছয় লাখে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের হিসেব অনুযায়ী দেশটির সেনাবাহিনীতে বর্তমানে সক্রিয় সেনাসদস্যের সংখ্যা ৮ লাখ ৮০ হাজার।
- ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ
খসড়া পরিকল্পনায় ইউক্রেনের কৌশলগত ভবিষ্যতের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব করা হয়েছে: ‘ইউক্রেন তার সংবিধানে ন্যাটোতে যোগদান না করার বিষয়ে সম্মত হবে এবং ন্যাটো তার আইনে এমন একটি বিধান অন্তর্ভুক্ত করবে যে ভবিষ্যতে ইউক্রেনকে সদস্য করা হবে না।’
এতে আরো বলা হয়েছে, ‘ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ লাভের যোগ্য এবং এই বিষয়টি মূল্যায়নের সময় ইউরোপীয় বাজারে স্বল্পমেয়াদী পছন্দের বাজার সুবিধা পাবে।’
এছাড়া ন্যাটো ইউক্রেনে সেনা মোতায়েন করবে না এবং ইউরোপীয় যুদ্ধবিমান পোল্যান্ডে মোতায়েন থাকবে। কিয়েভকে ‘অ-পারমাণবিক রাষ্ট্র’ হিসেবেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।
- রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল
খসড়া পরিকল্পনা অনযায়ী রাশিয়ার ওপর আরো করা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হবে। তবে রাশিয়া যদি শর্ত ভেঙে আবারো ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায়-তাহলে ফের কার্যকর করা হবে সেই নিষেধাজ্ঞাগুলো।
রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরায় একীভূত করা হবে এবং জি-৭ জোটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। রাশিয়া আগে এই জোটের সদস্যরাষ্ট্র ছিল এবং সে সময় এর নাম ছিল জি-৮। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল এবং তারপর সংযুক্ত করার পর রাশিয়াকে এই জোট থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এরফলে রাশিয়া একঘরে অবস্থা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিরেত পারবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পুতিন এবং অন্যান্য রুশ কর্মকর্তাদের ওপর যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল, সেগুলো প্রত্যাহার করে নেয়া হবে।
- রাশিয়ার জব্দ হওয়া সম্পদ:
খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, রাশিয়ার জব্দ হওয়া সম্পদ থেকে ১ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করা হবে ইউক্রেনের অবকাঠামোগত পুনর্গঠন ও উন্নয়নের কাজে। বাকি ১ হাজার কোটি ডলার ইউক্রেনের শিল্পখাতে বিনিয়োগ করা হবে। যার নেতৃত্বে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। বিনিয়োগের ফলে যে মুনাফা আসবে, তার অর্ধেক পাবে যুক্তরাষ্ট্র।
- পরমাণু বিদ্যুত:
ঝাপোরিজ্জিয়া পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র আর ইউক্রেনের একক মালিকানায় থাকবে না। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫০ শতাংশ মালিকানা থাকবে রাশিয়ার কাছে। ফলে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫০ শতাংশের মালিক হবে রাশিয়া।
আরএ


পরস্পরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প-মামদানি
হাসিনার মৃত্যুদণ্ড নিয়ে পাকিস্তান কী বলছে