
আমার দেশ অনলাইন


ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বা আইডিএফ জানিয়েছে যে ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর ইসরাইলে সাইরেন বাজছে।
আইডিএফ’র বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, কিছুক্ষণ আগে ইরানের ভূখণ্ডের দিক থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার বিষয়টি শনাক্ত করেছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং এটি প্রতিহত করতে কাজ করছে তারা।
মঙ্গলবার বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কতা পাওয়ার পর ইসরাইলের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।
এর আগে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি জানিয়েছিলেন, ইরানের সামরিক অভিযান তেহরান সময় ভোর ৪টা পর্যন্ত চলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইসরাইল ও ইরান একটি ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক’ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। নিজের মালিকানাধীন সামাজিকমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প এ তথ্য জানান বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
ট্রাম্প বলেন, আগামী ‘প্রায় ছয় ঘণ্টার মধ্যে’ এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, যখন উভয় দেশ তাদের চলমান সামরিক অভিযান ধীরে ধীরে গুটিয়ে নেবে। তিনি আরও জানান, প্রথম ১২ ঘণ্টা ইরান যুদ্ধবিরতি পালন করবে এবং পরবর্তী ১২ ঘণ্টা তা অনুসরণ করবে ইসরাইল।
২৪ ঘণ্টা পূর্ণ হলে এই ১২ দিনের যুদ্ধকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সমাপ্ত’ ঘোষণা করা হবে বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
তিনি এই সংঘাতকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বলে আখ্যা দেন এবং লেখেন, ‘এটি এমন একটি যুদ্ধ যা বছরের পর বছর ধরে চলতে পারত এবং গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংস করে দিতে পারত, কিন্তু তা হয়নি—আর কখনো হবে না।’
ট্রাম্প পোস্টে বলেন, ‘আমি ইসরাইল ও ইরান—উভয় দেশের ধৈর্য, সাহস ও বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করছি, যাদের দৃঢ় সিদ্ধান্ত এই যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছে। ’
যদিও ট্রাম্পের ঘোষণায় উত্তেজনা প্রশমনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তবে এখনও পর্যন্ত ইসরাইল বা ইরান—কোনো পক্ষই যুদ্ধবিরতির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি।
ট্রাম্পের ঘোষণার কিছু সময় আগে ইসরাইল তেহরানের ঘনবসতিপূর্ণ সেভেনথ ডিস্ট্রিক্ট এলাকার বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার জন্য সতর্ক করে। এরপর ওই এলাকায় বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে।
জবাবে ইরানও মঙ্গলবার সকালে ইসরাইলের কিছু এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘোষণা দেয় এবং বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানায়।

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, আইএইএ-কে হুমকি দিয়েছে ইরান। সেই সাথে তেহরানের প্রতিনিধি বলেছেন, ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ দুই বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, জাতিসংঘে ইরানের প্রতিনিধিদল সোমবার একটি বিবৃতি জারি করে বেশ কয়েকটি দেশকে হুমকি দিয়েছে। সেই সাথে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসিকেও সতর্ক করেছে তেহরান।
‘নিঃসন্দেহে, ইরানে নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের মৃত্যু এবং গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংসের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইসরাইলি সরকার এবং আইএইএ-র মহাপরিচালক সম্পূর্ণ দায় বহন করবেন,’ ইরানি প্রতিনিধির বার্তায় বলা হয়েছে।
ইরানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, দেশটি ইসরাইলের সাথে ক্রমাগত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত, দেশটির অনুমান এই যুদ্ধ দুই বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

কাতারের আল উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ইরান। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এ হামলা চালানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)। এদিন ইরানের হামলার ভয়ে কাতারে অবস্থানরত মার্কিনিদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছিল ওয়াশিংটন। এ সতর্কতার পর কাতার নিজের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। এরপর ইরানের পক্ষ থেকে এ হামলা চালানো হয়।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় তিনটি পরমাণু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর গতকাল ইসরাইলে ভয়াবহ হামলা চালায় ইরান। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিশোধও নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল তেহরানের পক্ষ থেকে। পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইসরাইলও। দেশটি ফোরদো পরমাণু স্থাপনাসহ ইরানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হামলা চালিয়েছে। সূত্র: তাসনিম নিউজ এজেন্সি, বিবিসি ও আলজাজিরা।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থসংশ্লিষ্ট স্থাপনায় হামলা হতে পারেÑএমন শঙ্কার মধ্যেই গতকাল রাতে কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান। আইআরজিসি জানায়, সোমবার সন্ধ্যায় ‘বিজয়ের প্রতিশ্রুতি’ নামক একটি অভিযানে কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে বিধ্বংসী এবং শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এই ঘাঁটিটি মার্কিন বিমান বাহিনীর সদর দপ্তর এবং পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে মার্কিন সন্ত্রাসী বাহিনীর বৃহত্তম কৌশলগত সম্পদ।
এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে কাতার। বলছে, এ হামলা দেশটির সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেন, এ হামলা কাতারের সার্বভৌমত্ব, আকাশসীমা এবং জাতিসংঘ সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কাতার রাষ্ট্র হিসেবে, এ প্রকাশ্য আগ্রাসনের জবাবে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় সরাসরি জবাব দেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে। কাতারের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইরানের এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ব্যর্থ করে দিয়েছে। এই হামলা সফলভাবে মোকাবিলা করেছে।
তবে ইরান বলছে, এ হামলা ভ্রাতৃপ্রতিম কাতারের বিরুদ্ধে নয়। দেশটির সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল বিবৃতিতে বলেছে, ইরান কাতারে মার্কিন বিমানঘাঁটিতে হামলা করেছে। এ আক্রমণ কোনোভাবেই কাতার বা তার জনগণের জন্য কোনো বিপদ ডেকে আনেনি। কাতারের সঙ্গে উষ্ণ ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইরান। ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যবহৃত বোমার সংখ্যার সমানসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে এই হামলায়।
যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, তারা ১৪টি বোমা দিয়ে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে।
কাতারে মার্কিনঘাঁটি আক্রান্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন জানিয়েছে, কাতারের আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে ইরান স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে।
একজন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিকের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি এখনো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
ইরানের এ হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কুয়েত সাময়িকভাবে তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। সিরিয়ায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি কাসরাককে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে আর বাহরাইনজুড়ে সাইরেন বাজানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশজুড়ে সাইরেন বাজানো হয়েছে এবং বাসিন্দাদের নিকটস্থ নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গতকাল সকালে ইসরাইলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় ইরান। এর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ স্থাপনাও। ইসরাইল জানিয়েছে, মধ্য, দক্ষিণ এবং উত্তর ইসরাইল লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। হামলায় দক্ষিণাঞ্চলে একটি জ্বালানি কোম্পানির স্থাপনার কাছে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফলে এই অঞ্চলের প্রায় আট হাজার মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ইসরাইলি পুলিশ জানিয়েছে, দক্ষিণ ইসরাইলের খোলা জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার খবর আমরা পেয়েছি। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
আইআরজিসি জানিয়েছে, তারা ইহুদিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে সর্বশেষ প্রতিশোধমূলক হামলায় সোমবার প্রথমবারের মতো বহুমুখী খাইবার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।
অন্যদিকে ইরানের ছয়টি বিমানবন্দরে হামলা চালিয়ে ১৫টি যুদ্ধবিমান ধ্বংসের দাবি করেছে ইসরাইল। দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরানের ছয়টি বিমানবন্দরে হামলা চালিয়ে ১৫টি বিমান ধ্বংস করেছে। পাশাপাশি এই হামলায় রানওয়ে ও ভূগর্ভস্থ বাংকারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) বলেছে, পশ্চিম, পূর্ব ও মধ্য ইরানে অবস্থিত এসব বিমানবন্দরে তারা ড্রোন হামলা চালায়।
তাদের দাবি অনুযায়ী, ধ্বংস হওয়া বিমানগুলোর মধ্যে রয়েছে এফ-১৫ এবং এফ-৫ যুদ্ধবিমান, একটি রিফুয়েলিং প্লেন এবং একটি এএইচ-১ কোবরা অ্যাটাক হেলিকপ্টার।
তেহরানের এভিন কারাগার ও বাসিজ মিলিশিয়া সদর দপ্তরেও হামলা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইল। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ জানান, তাদের টার্গেটে বাসিজের সদর দপ্তর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এভিন কারাগারকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইরসাইলি হামলার কারণে বিদ্যুৎবিভ্রাটের মুখোমুখি হন উত্তর তেহরানের বাসিন্দারা। পরবর্তী সময়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সঞ্চালন লাইন মেরামত করে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।
এ ছাড়া ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে তেল আবিব। আইডিএফ জানায়, ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালানো হয়েছে। ওই স্থাপনায় প্রবেশের পথগুলো বাধাগ্রস্ত করার জন্য এটি করা হয়েছে।
হামলার মধ্যে গতকাল সোমবার একটি ইসরাইলি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইরান। হার্মিস-৯০০ ড্রোনটি ভূপাতিত করার ফুটেজও প্রকাশ করেছে ইরানের গণমাধ্যম। আইআরজিসি জানায়, সোমবার ওই ড্রোন ভূপাতিত করা হয়।
এদিন ইরানের শিক্ষা ও গবেষণাবিষয়ক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খাতিবজাদে বলেছিলেন, পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে, সে সিদ্ধান্ত ইরান নিজের মতো করেই নেবে। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোতে ইরানের হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কখন, কীভাবে এবং কোনো মাত্রায় আমেরিকানদের জবাব দেওয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত ইরান নেবে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইসরাইলকে হুমকি দিয়ে বলেন, জায়নিস্ট শত্রু (ইহুদি শত্রু) একটি বড় ভুল করেছে, একটি বড় অপরাধ করেছে। তাকে শাস্তি পেতে হবে। শাস্তি পাচ্ছে, এখনই তাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলার পর বিশ্বজুড়ে মার্কিন নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করে বলে, বিদেশে মার্কিন নাগরিক ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বিশ্বের যেখানেই থাকুন না কেন, মার্কিন নাগরিকদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এরপর কাতারে অবস্থানরত মার্কিনিদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দেয় ওয়াশিংটন। দোহায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বিবৃতিতে বলে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। এই সতর্কতার পর নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় কাতার। দোহা বলেছে, সাম্প্রতিক ঘটনাবলির আলোকে এ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
হামলা সামলানোর মধ্যেই মোসাদ সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। ইরানের বিচার বিভাগবিষয়ক সংবাদ সংস্থা মিজান জানিয়েছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আমিন মাহদাভি শায়েস্তে। তিনি ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের অধীন একটি সাইবার টিমের প্রধান। যিনি সজ্ঞানে ইহুদি রাষ্ট্রের সন্ত্রাসী-গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন।

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে আকাশপথ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। সোমবার সন্ধ্যায় কাতার সরকার আকাশপথ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়।
দেশটির সিভিল এভিয়েশনের এক সার্কুলারে আকাশপথ বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
কাতারের আকাশসীমা বন্ধের এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ইরান তাদের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার পর পাল্টা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তাদের কাতারে অবস্থানরত নাগরিকদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদে বাসায় আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেয়।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান চায় ইসরাইল ও মার্কিন হামলার বিরুদ্ধে আরো কিছু করুন পুতিন। যদিও খামেনি কেমন সহায়তার কথা জানিয়েছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি সূত্র।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর গত শনিবারের মার্কিন হামলাই ছিল দেশটির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরাইল প্রকাশ্যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যা এবং সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনার কথা বলেছেন—যা রাশিয়ার দৃষ্টিতে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা আরো নাজুক করতে পারে।
ইসরাইলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইউরোপীয় এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ইরানি কর্তৃপক্ষ। ইরানি টেলিভিশনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইরানের বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে একজন ইউরোপীয় নাগরিককে গ্রেপ্তারের খবর জানিয়েছে।
ইরানি গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ওই ইউরোপীয় নাগরিক ‘পর্যটক’ হিসেবে ইরানে প্রবেশ করেছিলেন। তার লক্ষ্য ছিল নেটওয়ার্ক স্থাপন করা, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা এবং ইরানি আক্রমণাত্মক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় করা।

মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলোকে নিশানা করে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন ইরানি কর্মকর্তারা।
ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর নতুন প্রধান আবদোল রহিম মোসাভি এক বিবৃতিতে বলেছেন, অপরাধী যুক্তরাষ্ট্রের জানা উচিত যে, ইসরাইলের নামের অবৈধ ও আগ্রাসী সন্তানের শাস্তির পাশাপাশি ইসলামের যোদ্ধাদের হাত এখন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যেকোনও পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মুক্ত। এ বিষয়ে আমরা কখনই পিছপা হব না।

হরমুজ প্রণালী থেকে তিনটি তেলবাহী ট্যাংকার সরে গিয়ে গতিপথ পরিবর্তন করেছে।
মেরিন ট্রাফিক ডাটা রিপোর্টের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
খালি তেল ও রাসায়নিক ট্যাংকারগুলোর মধ্যে রয়েছে ম্যারি সি এবং রেড রুবি। ট্যাংকারগুলো এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপকূলে নোঙর ফেলেছে।
হরমুজ প্রণালী হল বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম তেল পরিবহন লেন। ধারণা করা হচ্ছে হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ইরান এই প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে।

নেটো মহাসচিব মার্ক রুট বলেছেন, ইরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে সে বিষয়ে একমত হয়েছে জোট। হেগে সামিট চলার সময়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছেন তিনি।
রুট বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে নেটোর অবস্থানের কথা বলতে গেলে বলতে হয়, ইরান অবশ্যই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না, এই বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই একমত হয়েছে জোটের সদস্যরা।
“ পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির অধীনে তাদের বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য মিত্ররা বারবার ইরানকে আহ্বান করেছে।”
ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইরান সেখানে গুরুতরভাবে জড়িত। ইরান এমন ড্রোন সরবরাহ করেছে যা রাশিয়া ইউক্রেনিয়ান বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করতে ব্যবহার করছে।

আজ সোমবার ইরান ও ইসরাইলের হামলার এগারতম দিনেও একে অপরকে লক্ষ্য করে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরাইলের শহর আশদদের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে হামলা করেছে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র। এর ফলে ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটতে দেখা গেছে।
তবে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ।
রোববার ইসলামাবাদ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে। একইসাথে “ইরানের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আগ্রাসন” বলে অভিহিত করেছে দেশটি।
শেহবাজ শরীফ ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেকশিয়ানের সাথে ফোনে কথা বলেন এবং পাকিস্তানের সংহতি প্রকাশ করেন।

দ্রুত যুদ্ধ শেষ করার পরিকল্পনা করছে ইসরাইল। এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার আরব মিত্রদের মাধ্যমে ইরানের কাছে ইসরাইলের বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। সোমবার ইসরাইলি গণমাধ্যম টাইমস অফ ইসরাইল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ‘অপারেশন রাইজিং লায়নের’ মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি নির্মূল করে নিজেদের সামরিক লক্ষ্য খুব দ্রুত অর্জন করতে পারবে বলে প্রত্যাশা ইসরাইলের।
আরবের কর্মকর্তারা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেছেন, ইসরাইল এই অভিযান শিগগিরই শেষ করতে চায় বলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের আরব মিত্রদের মাধ্যমে ইরানকে বার্তা দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাব দেওয়া ছাড়া ইরান এখনই অভিযান শেষ করতে চায় না।

সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি হামলার শিকার হয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা মেহের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কাসরুক অঞ্চলে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে হঠাৎ করে হামলা চালানো হয়। হামলার ধরন বা এতে কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে—সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, ঘাঁটিতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং এলাকাজুড়ে সাময়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার পর মার্কিন সেনারা পুরো ঘাঁটির চারপাশ ঘিরে ফেলে এবং ওই এলাকায় ব্যাপক নজরদারি শুরু করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এলাকাজুড়ে ড্রোন ও সামরিক হেলিকপ্টারের গতিবিধি লক্ষ্য করা গেছে।

সোমবার সকাল থেকেই ইরান ও ইসরাইল পাল্টাপাল্টি বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরাইলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইরান। এর ফলে দেশটির দক্ষিণে প্রায় আট হাজার মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ইসরাইলের একটি প্রধান জ্বালানি কোম্পানি তাদের একটি স্থাপনার কাছে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন হতাহতের কথা জানায়নি ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ।
ইসরাইল ইরানের ওপর তাদের হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ সেখানে ‘নজিরবিহীন শক্তি’ দিয়ে হামলার কথা জানিয়েছেন।
কাৎজ আরো বলেন, তেহরানে যেসব লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে সেগুলো ওই “শাসনামলের প্রতীক”।
সপ্তাহ শেষে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা এবং ইরানিয়ান “শাসনামলের পরিবর্তন” এর বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের পর ইরানিয়ান সামরিক নেতারা “ চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া” দেয়ার হুমকি দিয়েছেন।
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি রপ্তানির জন্য জাহাজ চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ পথ হরমুজ প্রণালী ইরান বন্ধ করে দিতে পারে বলেও উদ্বেগ রয়েছে।

জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেছেন, ইরানি পারমাণবিক কেন্দ্র ফোর্দোতে খুবই উল্লেখযোগ্য ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইরানের ৬০ ভাগ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ স্থান ফোর্দো।
ভিয়েনাতে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সাথে কথা বলার সময় গ্রোসি বলেছেন, পাহাড়ের গভীরে যে ধরনের গর্ত দেখা যায় সেরকম গর্ত ফোর্দো সাইটে দেখা যাচ্ছে।
কিন্তু কেউই এখন এই ভূ-গর্ভস্থ ক্ষতির পরিমাণ সম্পূর্ণভাবে নিরূপণ করতে পারবে না বলে জানান তিনি।
যে পরিমাণ বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে এবং ইউরেনিয়াম সেন্ট্রিফিউজের সংবেদনশীলতা বিবেচনা করে সেখানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
ইরানি এই পারমাণবিক কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার পরিদর্শকরা যাতে প্রবেশ করতে পারে সেজন্য যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান তিনি।
গ্রোসি বলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম হতে পারবে না এবং বিশ্বব্যাপী পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধ ব্যবস্থার অব্যাহত কার্যকারিতা অর্জনের জন্য আমাদের আলোচনায় ফিরে আসতে হবে।
ইসরাইলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত কয়েক ঘণ্টায় ইসরাইলের বিভিন্ন জায়গায় ৮টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ কোম্পানির কৌশলগত স্থাপনার কাছে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানায় ওই এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। খবর আল জাজিরার।
ইসরাইল ইলেকট্রিক করপোরেশন বলছে, বিদ্যুৎব্যবস্থা স্বাভাবিক করার কাজ চলছে।
এদিকে সোমবার ইরানের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় আবার হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। আধা সরকারি তাসনিম সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন, দেশটির কোম প্রদেশের সংকটকালীন ব্যবস্থাপনা বিভাগের সদর দপ্তরের মুখপাত্র মোর্তজা হায়দারি।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের বিমান বাহিনী ইরানের তেহরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আরেক দফা হামলা চালিয়েছে।
‘ধারাবাহিক’ হামলায় ইরানের রাজধানীতে বিস্ফোরণ এবং ওই শহরের আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়ছে, এরকম একটি ভিডিও সে দেশের গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশের পরই ইসরাইলের বিমান বাহিনী এই বিবৃতি দিয়েছে।
এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির হুমকির পর ইসরাইলে হামলা চালিয়েছে ইরান। দেশটি থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এই খবর ঘোষণার সাথে সাথে ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে অ্যালার্ম বেজে ওঠে। কয়েক ঘণ্টা আগে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর মধ্য ইসরায়েলে সাইরেন বেজে ওঠে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স এ ইসরায়েলকে হুমকি দিয়ে একটি পোস্ট দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই ইসরায়েলে নতুন করে হামলা শুরু করে ইরান।
আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, ‘জায়নিস্ট শত্রু (ইহুদি শত্রু) একটি বড় ভুল করেছে, একটি বড় অপরাধ করেছে। এবং তাকে শাস্তি পেতে হবে। শাস্তি পাচ্ছে, এখনই তাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।’

ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
সোমবার বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংগঠনটির মুখপাত্র ইব্রাহিম জোলফাঘারি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধ শুরু করেছে এবং ইরানের ‘পবিত্র মাটিতে’ আঘাত করেছে।
তিনি জানান, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ভয়াবহ, অনুশোচনা করার মতো, অপ্রত্যাশিত পরিণতি’ ভোগ করতে হবে, যা হবে ‘শক্তিশালী ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক অভিযান’-এর মাধ্যমে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে জোলফাঘারি বলেন, ‘ট্রাম্প, জুয়ারি! আপনি এই যুদ্ধ শুরু করতে পারেন, কিন্তু শেষ করবো আমরা!’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। ক্রেমলিনের বৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য বর্তমানে মস্কোতে রয়েছেন আব্বাস আরাগচি। বৈঠকে ‘অভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও হুমকির’ বিষয় উঠে আসতে পারে।
রাশিয়া ইতোমধ্যে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দা করেছে। জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘বিপদের দ্বার খুলে দিয়েছে’। যদি আজকের মধ্যে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন, তাহলে তিনি ক্রেমলিনের নেতাদের কাছ থেকে তাদের জোরালো সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মস্কোর পক্ষ থেকে সরাসরি সামরিক সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
সবচেয়ে বড় কথা হলো—এই মুহূর্তে রাশিয়ার অগ্রাধিকার হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধ। যদিও রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি আছে, তবে সেটা কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তি নয়, এবং সেটা মস্কোকে তেহরানের জন্য সামরিক সহায়তা দিতে বাধ্য করে না।
গত সপ্তাহে পুতিন দাবি করেছিলেন, ইরান এখনো রাশিয়ার কাছে সামরিক সহায়তা চায়নি। তার মন্তব্য থেকেই বোঝা যায়, রাশিয়া এখনই কোনো সহায়তা দিতে প্রস্তুত নয়। ক্রেমলিন ইরান ও ইসরায়েল উভয়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও একটি ভালো কাজের সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়।

ইসরাইলকে ‘গোয়েন্দা সহযোগিতা’ দেয়ার অভিযোগে ইরান সরকার একজন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। ইরানের বিচার বিভাগ বিষয়ক সংবাদ সংস্থা মিজান জানিয়েছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আমিন মাহদাভি শায়েস্তে। তিনি ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদের অধীন একটি সাইবার টিমের প্রধান’ বলে দাবি করা হয়েছে, যিনি ইহুদি রাষ্ট্রের সন্ত্রাসী-গোয়েন্দা সংস্থাকে সহযোগিতা করেছেন।
বিচার বিভাগ আরো দাবি করেছে, মাহদাভি শায়েস্তে ছিলেন ‘ইরান ইন্টারন্যাশনাল’-এর ভার্চুয়াল সহযোগী।
এর আগের দিন, আরেকজন ব্যক্তি মজিদ মোসাইবিকে ইসফাহান আদালতে ‘বিদেশি শত্রু রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা ও গুপ্তচরবৃত্তির মাধ্যমে যুদ্ধ ও বিশ্বে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির’ অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় তার দেশ পুরোপুরি পাশে আছে, এবং তিনি সব পক্ষকে আবারো আলোচনা টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। খবর বিবিসির।
ক্যানবেরায় এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোনো উত্তেজনা বা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ চাই না, এসময় তার পাশে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং।
‘আমরা সবসময় আলোচনা এবং কূটনীতির পক্ষে আছি, বলেন আলবানিজ, এবং তিনি ইরানকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা যেন ‘এমন কোনো পদক্ষেপ না নেয়, যা এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে’।

১৮ ঘণ্টার টানা ফ্লাইট। মাঝপথে একাধিকবার জ্বালানি নেয়া, আর ধারাবাহিক বিভ্রান্তিকর মহড়া। এভাবেই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় বোমা হামলার অভিযান সম্পন্ন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদে থাকা ফোর-স্টার জেনারেল ড্যান কেইন এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ-এর চেয়ারম্যান।
যুক্তরাষ্ট্র এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’, যার পূর্ণ ফলাফল এখনো স্পষ্ট নয়। তবে কীভাবে জটিল এই অভিযানটি সম্পন্ন হয়েছে, তার একটি টাইমলাইন গতকাল রোববার সকালে পেন্টাগনের এক ব্রিফিংয়ে তুলে ধরা হয়, হামলার ঠিক কয়েক ঘণ্টা পরপরই।
সবকিছু শুরু হয় মধ্যরাতের কিছু পরে, যখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, এবং পেন্টাগনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে যোগ দেন। তারা সেখান থেকে সব দেখছিলেন, যখন একটি বিমান বহর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির এক প্রত্যন্ত বিমানঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে। রাতের আধারে হোয়াইটম্যান এয়ার ফোর্স বেস থেকে স্টেলথ প্রযুক্তির বিটু বোমারু বিমানগুলো উড়ে যায়, পেন্টাগন জানায়। তাদের চূড়ান্ত টার্গেট ছিল, ইরানের সবচেয়ে সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলো।

যুক্তরাষ্ট্র ‘একটি বানোয়াট ও অযৌক্তিক অজুহাতে’ ইরানের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ চাপিয়েছে’ বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ইরানের প্রতিনিধি আমির সাঈদ ইরাভানি।
তিনি বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্পষ্ট আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার রাখে। সেই সঙ্গে তিনি জানান, ইরানের পক্ষ থেকে ‘যথাযথ জবাব কখন, কীভাবে এবং কতটা দেওয়া হবে’ তা দেশটির সশস্ত্র বাহিনী ঠিক করবে।
এক দীর্ঘ বক্তব্যে ইরাভানি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে দোষারোপ করে বলেন, নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রকে ‘আরেকটি ব্যয়বহুল ও ভিত্তিহীন যুদ্ধে’ টেনে এনেছেন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’।
ইরাভানি আরও বলেন, ইসরাইল এক ‘মিথ্যা ও প্রতারণামূলক গল্প’ ছড়িয়েছে যে, ইরান ‘পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের দ্বারপ্রান্তে’।
ইরাভানি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও কিছু পশ্চিমা দেশ যেমন ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের নীরবতা, দ্বিচারিতা ও সহযোগিতা সমানভাবে নিন্দনীয়।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ যেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকে সম্পূর্ণভাবে জবাবদিহির আওতায় আনে এই আহ্বানের মাধ্যমে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।

ইরানের প্রতিনিধির বক্তব্যের পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইসরাইলের প্রতিনিধি ড্যানি ড্যানন বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিশ্ববাসীর ধন্যবাদ জানানো উচিত। ড্যানি ড্যানন বলেন, আজ এখানে পুরো বিশ্বের ‘অন রেকর্ডে’ বলা উচিত আপনাকে ধন্যবাদ। যখন অনেকেই দ্বিধায় ছিলেন, তখন তিনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
তিনি অভিযোগ করেন, জাতিসংঘে অনেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের নিন্দা করেছেন, কিন্তু আপনি কোথায় ছিলেন যখন ইরান বেসামরিক ব্যবহারের চেয়েও অনেক বেশি পরিমাণে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছিল? যখন তারা আমাদেরকে ধ্বংস করার প্রস্তুতি নিতে পাহাড়ের নিচে একটি দুর্গ তৈরি করেছিল, তখন আপনি কোথায় ছিলেন?
তিনি আরো বলেন, কূটনৈতিক পথ তৈরির যে চেষ্টা করা হয়েছিল সেটা অস্বীকার করা যাবে না।
কিন্তু ইরান সেই ‘আলোচনাকে নাটকে পরিণত করেছে’ এবং সেটাকে ‘ছদ্মবেশ’ হিসেবে ব্যবহার করেছে যাতে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সময় পাওয়া যায়।
ড্যানন আরো বলেন, ইরান এমন সব চুক্তি করেছিল, যেগুলো তারা কখনো মেনে চলার ইচ্ছাই রাখেনি। মুক্ত বিশ্ব ইরানকে সব সুযোগ দিয়েছিল এবং কোনো কিছু না করলে মূল্য হতো ‘মৃত্যুদণ্ড’।

গত শনিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর বিভিন্ন দেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহুবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। বিভিন্ন শহরে সাধারণ মানুষ রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।
ফ্রান্স, গ্রীস, জাপান, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন্সসহ বিভিন্ন দেশের এসব বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে যুদ্ধাপরাধী বলে বর্ণনা করা হয়।
প্রতিবাদকারীরা এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধে বড় ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
সূত্র: বিবিসি