ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে নতুন বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে শনিবার। উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় গুঁড়িয়ে দেওয়া ঐতিহাসিক মোগল স্থাপনা বাবরি মসজিদের নামে নামকরণ করা নতুন এ মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৃণমূল কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য (এমএলএ) হুমায়ুন কবীর।
মসজিদ নির্মাণ নিয়ে বিতর্কের জেরে দলে তার সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও মুর্শিদাবাদের বহরমপুর মহকুমার রেজিনগর গ্রামে মসজিদ নির্মাণ করার প্রতিজ্ঞা করেন হুমায়ুন কবীর। মসজিদ নির্মাণে ৩০০ কোটি টাকার বাজেট ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুর্শিদাবাদের ভরতপুর আসন থেকে নির্বাচিত এই এমএলএ।
হুমায়ুন কবীর দাবি করেন, ২৫ বিঘা এলাকা নিয়ে মসজিদ চত্বর গড়ে উঠবে, যেখানে কলেজ, হাসপাতাল, গেস্ট হাউস ও সভাকক্ষও থাকবে। মসজিদ নির্মাণের জন্য এক শিল্পপতি ৮০ কোটি টাকা দিয়েছেন।
এদিকে, এ ঘটনার বিপরীতে মুর্শিদাবাদে রামমন্দির নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন জেলার ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা শাখারভ সরকার। শনিবার মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের বানজেটিয়ায় মন্দিরের জন্য ভূমিপূজা করা হয়।
শাখারভ সরকার বলেন, বহরমপুরে আমরা অযোধ্যার রামমন্দিরের অবিকল মন্দির তৈরি করব। রামমন্দিরের দাতব্য ট্রাস্ট তৈরির মাধ্যমে আমরা শিলা প্রতিষ্ঠা করেছি। বহরমপুরের মন্দির বিরাট আকারে তৈরি করা হবে এবং এর সঙ্গে একটি হাসপাতাল ও একটি স্কুল যুক্ত থাকবে।
মসজিদ ও মন্দির প্রতিষ্ঠার কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ভঙ্গের শঙ্কায় কলকাতা হাইকোর্টে পিটিশন করা হয়েছিল। তবে আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে রাজি হয়নি। রাজ্য সরকারের ওপরই নিরাপত্তা ও শান্তি রক্ষার দায়িত্ব অর্পণ করে আদেশ দেয় হাইকোর্ট।
শনিবার রেজিনগরে বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে হুমায়ুন কবীর বলেন, আমি কোনো অসাংবিধানিক কাজ করছি না। হাইকোর্ট বলে দিয়েছে, হুমায়ুন কবীর কোনো অসাংবিধানিক কাজ করেনি।
কিন্তু বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ঘোষণার পরপরই বিজেপি মন্দির তৈরির পাল্টা ঘোষণা দেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ঘোষণা করার পরই বিজেপি বললে মুর্শিদাবাদে রামমন্দির স্থাপন করবে। আমরা বাধা দেইনি। সবার নিজ নিজ ধর্ম পালন করার অধিকার ভারতবর্ষের সংবিধানে রয়েছে।
তবে মসজিদ ধ্বংস করতে এলে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুমায়ুন কবীর বলেন, মধ্যপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, মুর্শিদাবাদ থেকে একেকটি ইট খুলে নিয়ে যাবেন। তাহলে বলি, পশ্চিমবঙ্গে যে ৩৭ শতাংশ জনসংখ্যা রয়েছে তারা জীবন দিয়ে বাবরি মসজিদ রক্ষা করবে।
অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেছেন, ৩৩ বছর আগে মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত হানা হয়েছিল। সে আঘাতে আজ সামান্য হলেও প্রলেপ পড়েছে। আমি বলছি, এখানে বাবরি মসজিদ তৈরি হবে হবে হবেই।
উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ নিয়ে দীর্ঘদিন সাম্প্রদায়িক বিরোধ চলে আসছিল। হিন্দুত্ববাদীদের মতে, এ স্থানে হিন্দু দেবতা রাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার স্মরণে এখানে একটি স্মৃতিমন্দির ছিল। মোগল সম্রাট বাবরের আমলে মন্দিরটি ধ্বংস করে মসজিদ তৈরি করা হয়। তবে এ-সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ হাজির করা হয়নি।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা হামলা চালিয়ে মসজিদটি গুঁড়িয়ে দেয়। এরপর দীর্ঘদিন এ স্থান নিয়ে আইনি লড়াই চলে। ২০১৯ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এ জমি মন্দির তৈরির জন্য বরাদ্দের রায় দেয়। অপরদিকে মুসলমানদের ক্ষতিপূরণের জন্য ভিন্ন জায়গায় মসজিদ তৈরি করে দেওয়ার আদেশ দেয়। আাদালতের রায় অনুসারে বাবরি মসজিদের স্থানে রামমন্দির তৈরি হয়। ২০২৪ সালে এ মন্দিরের উদ্বোধন করা হয়। তবে আদালতের আদেশ অনুযায়ী মসজিদ নির্মাণের কাজ এখনো শুরু হয়নি।


৩০০ কোটি টাকা বাজেটে নতুন বাবরি মসজিদের ভিত্তি স্থাপন ভারতে
নতুন বাবরি মসজিদ বানাতে চেয়ে বরখাস্ত ভারতীয় রাজনীতিক