আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

পাকিস্তানের সাথে চুক্তি লঙ্ঘন করে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে অনুমোদন ভারতের

আমার দেশ অনলাইন

পাকিস্তানের সাথে চুক্তি লঙ্ঘন করে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে অনুমোদন ভারতের

সিন্ধু পানি চুক্তি (ইন্ডাস ওয়াটার্স ট্রিটি—আইডব্লিউটি) লঙ্ঘন করে ভারত চেনাব নদীর ওপর দুলহস্তি স্টেজ–২ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বলে জানিয়েছে দ্য নিউজ। প্রকল্পটি ভারতের অবৈধভাবে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর (আইআইওজেকে)-এ বাস্তবায়িত হবে।

প্রায় ৩,২৭৭ কোটি ভারতীয় রুপি ব্যয়ে নির্মিতব্য এই প্রকল্পের কাজ আগামী বছরের শুরুতেই শুরু হতে পারে। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনএইচপিসি লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। সূত্রের বরাতে জানানো হয়েছে, দুলহস্তি স্টেজ–২ থেকে সর্বোচ্চ ২৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্লেষকদের মতে, পহেলগাম ঘটনার পর সিন্ধু পানি চুক্তি কার্যত স্থগিত রাখার ভারতের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটেই এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনার জেরে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সামরিক পদক্ষেপ দেখা যায়।

ভারতের এই পদক্ষেপের পরও পাকিস্তান আইডব্লিউটির প্রতি তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞের অধীনে চলমান প্রক্রিয়ায় সদিচ্ছার সঙ্গে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, গত আগস্টে স্থায়ী সালিশি আদালত (পার্মানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন) রায়ে বলেছিল, পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোর পানি পাকিস্তানের অবাধ ব্যবহারের জন্য ভারতকে “স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতে দিতে হবে”।

১৯৬০ সালের আইডব্লিউটি অনুযায়ী, সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীর পানি ব্যবহারের অধিকার পাকিস্তানের এবং রবি, বিয়াস ও সুতলজ নদীর পানি ভারতের জন্য নির্ধারিত। পাকিস্তানের অভিযোগ, দুলহস্তি স্টেজ–২ প্রকল্পটি এই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করছে।

ভারত চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার পর সিন্ধু অববাহিকায় একাধিক বিতর্কিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে সাওয়ালকোট, রাটলে, বুরসার, পাকাল দুল, কওয়ার, কিরু এবং কিরথাই–১ ও ২। দুলহস্তি স্টেজ–২-কে এই কৌশলেরই অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত দিক থেকেও এই প্রকল্প পাকিস্তানের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চেনাব নদী পাকিস্তানের ভূখণ্ডে প্রবাহিত হওয়ায়, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন আইডব্লিউটির মূল চেতনাকে অস্বীকার করে আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘনের শামিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

দুলহস্তি স্টেজ–২ প্রকল্পে দুলহস্তি স্টেজ–১-এর বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করা হবে। ৩৯০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন স্টেজ–১ প্রকল্পটি ২০০৭ সালে চালু হয়। নতুন ধাপে মারুসুদার নদী থেকে পানি এনে পাকাল দুল প্রকল্পের মাধ্যমে দুলহস্তি বাঁধে সরবরাহ করা হবে, যাতে বিদ্যমান পানিসম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।

তবে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে যে, পানিপ্রবাহের এই পরিবর্তন নদীর স্বাভাবিক গঠন ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। পাকাল দুল প্রকল্পের নিচের দিকে মারুসুদার নদীর প্রায় ২৫ কিলোমিটার অংশে উল্লেখযোগ্য জলবৈজ্ঞানিক পরিবর্তন ঘটতে পারে।

সিন্ধু পানি চুক্তি কী?

পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে পানি বণ্টন সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে সিন্ধু পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের জন্য তিনটি পূর্বাঞ্চলীয় নদী—সুতলজ, বিয়াস ও রবি—এবং পাকিস্তানের জন্য তিনটি পশ্চিমাঞ্চলীয় নদী—সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব—নির্ধারিত হয়।

চুক্তিতে একতরফাভাবে তা স্থগিত বা বাতিল করার কোনো বিধান নেই এবং বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। পাকিস্তান তার সেচ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এই নদীগুলোর পানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। দেশটি আশঙ্কা করছে, উজানে ভারতের বাঁধ ও জলাধার নির্মাণ তার কৃষি ও পানিনিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে—যদিও ভারত এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

সূত্র: জিও নিউজ

এসআর

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন