দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের মধ্যে ‘হাজার হাজার বছরের সংঘাত’ বন্ধ করার দাবি করেছেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বের পরিস্থিতি এমন উত্তপ্ত যে, যুক্তরাষ্ট্র নিজেই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘১৯৪৫’ নামে ম্যাগাজিনে প্রকাশিত নিবন্ধে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ ব্রেন্ট ইস্টউড এমনটাই দাবি করেছেন। নিবন্ধে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীন ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে গেলেও বর্তমান সামরিক প্রধানের চুক্তির সক্ষমতার কল্যাণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। এর ফলে বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা, যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রশমনে চুক্তি ও যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়। কিন্তু যুদ্ধ সবসময়ই এর নোংরা মাথা উঁচু করতে চায় এবং ২০২৬ সালে তাতে যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়তে পারে।’
নিবন্ধে বলা হয়, ২০২৬ সালে চীন, রাশিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। বিভিন্ন কারণেই দেশগুলোর সঙ্গে ওয়াশিংটনের সংঘাতের সূচনা হতে পারে।
প্রথমত, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাতের প্রচণ্ড সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বৈরী এ বিশ্বশক্তির বিভিন্ন পদক্ষেপেই উদ্বিগ্ন ও হতাশাগ্রস্ত ওয়াশিংটন। বিশেষ করে চীন যদি তাদের প্রচার অনুযায়ী তাইওয়ানকে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতে জড়াতে পারে। তবে দ্বীপ দেশটিতে বেইজিং আগ্রাসন চালালে ওয়াশিংটন তার কী প্রতিক্রিয়া জানাবে, এটি এখনো নিশ্চিত নয়। তবে আমেরিকা যে এতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে, তা নিশ্চিত।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন প্রায় চার বছর ধরে চলছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যখন রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে, তখন থেকে কিয়েভকে সহযোগিতার জন্য ওয়াশিংটন কোটি কোটি ডলার খরচ করেছে। ক্ষমতায় আসার পর এ সংঘাত বন্ধে ট্রাম্প বিবিধ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে এখনো সংঘাত চলমান। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যদি ইউক্রেনে হামলা অব্যাহত রাখেন, তবে এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিতে পারে।
এছাড়াও ক্যারিবীয় সাগরে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কথিত ‘মাদকবিরোধী অভিযান’ পুরো অঞ্চলে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ ভেনেজুয়েলার নৌযান লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান ভেনেজুয়েলার কাছাকাছি নিয়মিত টহল দিচ্ছে। ট্রাম্প ভেনেজুয়েলাকে ‘মাদক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, দেশটির অবৈধ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে মাদকের মাধ্যমে বিষাক্ত করছে। যদিও এখনো ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন নিশ্চিত নয় কিন্তু পরিস্থিতি যেকোনো সময় সংঘাতে গড়াতে পারে।
এদিকে, চলতি বছরের জুনে ইরানে ইসরাইলের আগ্রাসনের মধ্যে ইরানি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রতিক্রিয়ায় কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল ইরান। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও ২০২৬ সালে দুপক্ষের মধ্যে প্রক্সি যুদ্ধ শুরু হতে পারে।
পরিশেষে নিবন্ধে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সবসময়ই যুদ্ধ পরিস্থিতি চলে আসছে দক্ষিণ কোরিয়ার। ১৯৫০ সালে শুরু হওয়া দুই কোরিয়ার যুদ্ধ তিন বছর পর শেষ হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তা এখনো শেষ হয়নি। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে চুক্তির জেরে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার হামলা থেকে দেশটিকে রক্ষা করতে দায়বদ্ধ। যেকোনো সময় এ হামলা হতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়াতে পারে।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


গাজায় বিয়ের অনুষ্ঠানে ইসরাইলের হামলা, নিহত ৬
ইউক্রেনের বন্দরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত ৭