দুই বছর ধরে গাজায় ইসরাইলের বর্বর আগ্রাসনের পর শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে যুদ্ধবিরতি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনায় সম্মত হয় ইসরাইল ও হামাস। চুক্তি অনুয়ায়ী গাজা উপত্যকার নির্দিষ্ট এলাকা থেকে সেনাবাহিনী সরিয়ে নিয়েছে ইসরাইল। যুদ্ধবিরতির খবরে দক্ষিণ গাজায় পালিয়ে যাওয়া হাজার হাজার ফিলিস্তিনি গাজা সিটিতে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে শহরটির বেশিরভাগ অংশই ইসরাইলের বোমার আঘাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, উত্তর দিকে ক্ষতিগ্রস্ত সরু উপকূলীয় রাস্তা ধরে হেঁটে মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করছেন বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি। সন্তান ও পরিজন নিয়ে হাসিমুখে নিজ গৃহে ফিরছেন তারা। ফিরে আসাদের অনেকেই ২০ কিলোমিটাররেও বেশি পথ হেঁটেছেন। কেউ পিঠে করে মালামাল বহন করছেন, কেউবা গাধার গাড়ি বা ছোট ট্রাক ভাড়া করেছেন। কেউ কেউ ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়েছেন আবার কেউ উড়িয়েছেন বিজয়ের প্রতীক। কিন্তু ক্লান্ত চেহারায় ছিল খুশির ঝিলিক। কয়েক মাস ধরে বাস্তুচ্যুতি, ক্ষুধা এবং ভয়ের পর অনেকেই দুর্বলতা এবং অপুষ্টিতে ভুগছেন।
আলা সালেহ নামে এক শিক্ষক বিবিসিকে জানিয়েছেন, বোমা হামলার সময় গাজা সিটি থেকে খান ইউনুসে পালিয়ে গিয়েছিলেন তারা। এখন আবার ফিরছেন। রাস্তাটি দীর্ঘ আর কঠিন, নেই খাবার ও পানি। তবে যারা ফিরছেন তাদের মুখে হাসি থাকলেও নেই স্বস্তি। কারণ তাদের বাড়িঘর বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। গাজা সিটি এবং উত্তর থেকে প্রায় সাত লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। কারণ গাজা সিটিকে হামাসের ‘শেষ শক্ত ঘাঁটি’ হিসেবে বর্ণনা করে এখানে তীব্র বোমা হামলা চালায় ইসরাইল।
মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নিজেদের ঘরবাড়িসহ বেশিরভাগ অবকাঠামোর এমন নিশ্চিহ্ন অবস্থা দেখে হতভাগ তারা। সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কয়েক ডজন ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বাসিন্দারা ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এবং তাদের আশপাশের এলাকার অবশিষ্টাংশের ছবি তুলছেন।
এদিকে, হামাসসহ বিভিন্ন ফিলিস্তিনি সংগঠন স্পষ্ট জানিয়েছে, গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থার যেকোনো সিদ্ধান্ত একান্তই ফিলিস্তিনিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কারণ এ ভূখণ্ডে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হচ্ছে।
শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে হামাস, ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ এবং পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) জানিয়েছে, গাজাবাসীর দৃঢ়তা ও ঐক্যের ফলেই গাজা থেকে তাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতিতে ইসরাইলের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, তারা যেকোনো বিদেশি অভিভাবকত্বকে প্রত্যাখ্যান করছে। একই সঙ্গে জোর দিয়ে বলেছে, গাজা উপত্যকা এবং এর প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশাসনের প্রকৃতি ফিলিস্তিনিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, যা এ ভূখণ্ডের জাতীয় প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্বই সরাসরি নির্ধারণ করবে। দলগুলো আরো জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি-পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য একটি ‘জরুরি জাতীয় বৈঠক’-এর প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
তারা বলেছে, এটি ফিলিস্তিনি অবস্থানকে ঐক্যবদ্ধ করবে, একটি বিস্তৃত জাতীয় কৌশল প্রণয়ন করবে এবং অংশীদারত্ব, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্নির্মাণ করবে। তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ওপর কর্তৃত্বশীল দল ফাতাহ এ বৈঠকে অংশ নিতে সম্মত হয়েছে কি না তা স্পষ্ট নয়। যদিও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি নতুন আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘বোর্ড অব পিস’ গঠন করা হবে, যা গাজার জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন তত্ত্বাবধান করবে, যেখানে বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন ট্রাম্প নিজেই। এর সদস্যদের মধ্যে থাকবেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার।
আগামীকাল সোমবার হামাসের হাতে বন্দি ইসরাইলের জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, তার ২০ দফা চুক্তির অংশ হিসেবে ২০ জন জীবিত বন্দি এবং বন্দি অবস্থায় মারা যাওয়া আরো ২৮ জনের লাশ হস্তান্তর করা হবে।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন ট্রাম্প। এ সময় তিনি আরো বলেন, সোমবার ‘একটি বড়দিন’ হতে যাচ্ছে। কারণ হামাস ইসরাইলি কারাগারে বন্দি প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে জীবিত এবং মৃত ৪৮ ইসরাইলি বন্দিকে মুক্ত করবে।
অন্যদিকে, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে লাশ উদ্ধার শুরু হয়েছে। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, শুক্রবার গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় ১৫৫টি লাশ আনা হয়, যার মধ্যে ১৩৫টি ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করা হয়। ৪৩টি লাশ পাঠানো হয় গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালে। ৬০টি লাশ একই অঞ্চলের আল-আহলি আরব হাসপাতালে, চারটি নুসেইরাতের আল-আওদা হাসপাতালে, ১৬টি দেইর-আল-বালার আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে এবং ৩২টি লাশ খান ইউনুসের নাসের হাসপাতালে পাঠানো হয়।


মিশরে গাজা শান্তি সম্মেলনে অংশ নিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে ব্যাপক সংঘর্ষ