গাজায় স্বাস্থ্য সংকট কয়েক প্রজন্ম থাকবে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৫১
ছবি: বিবিসি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস সতর্ক করে বলেছেন, গাজা একটি স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন, যা আগামী কয়েক প্রজন্ম ধরে স্থায়ী হবে।

বিবিসি রেডিও ৪-এর টুডে অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, গাজা উপত্যকার জনসংখ্যার জটিল চাহিদা মেটাতে ত্রাণের পরিমাণ ব্যাপক মাত্রায় বাড়াতে হবে।

বিজ্ঞাপন

গত ১০ অক্টোবর হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর থেকে ইসরাইল গাজায় আরো চিকিৎসা সরবরাহ এবং অন্যান্য ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। তবে ডব্লিউএইচও প্রধান বলছেন, গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা পুনর্নির্মাণের জন্য এগুলো প্রয়োজনের চেয়ে কম।

তেদ্রোস বলেন, তিনি যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে চুক্তির পরে যে সাহায্য আসছে, তা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম।

পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুর্ভিক্ষ, ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এবং পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন অবকাঠামো ধ্বংসের ফলে রোগবালাইয়ের কবলে পড়েছে গাজাবাসী।

তিনি আরো বলেন, এ ছাড়া গাজায় মানবিক সাহায্যের প্রবেশাধিকার সীমিত। এটি একটি অত্যন্ত মারাত্মক সংমিশ্রণ, যা পরিস্থিতিকে আরো বিপর্যয়কর করে তোলে।

গাজার দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি দুর্ভিক্ষ ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে এক করলে দেখতে পাবেন যে; বর্তমান পরিস্থিতি একটি সংকট, যা আগামী কয়েক প্রজন্ম থায়ী হবে।’

মঙ্গলবার জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, ১০ অক্টোবর থেকে ৬ হাজার ৭০০ টনেরও বেশি খাদ্যবাহী লরি গাজায় প্রবেশ করেছে। কিন্তু তা দৈনিক প্রয়োজনীয় ২ হাজার টন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। গাজায় প্রতিদিন ত্রাণবাহী ৬০০টি লরি পৌঁছানো দরকার কিন্তু গড়ে ২০০ থেকে ৩০০টি পৌঁছাচ্ছে।

তেদ্রোস বলেন, ‘সাহায্যকে অস্ত্র বানানো করা উচিত নয়’। তিনি ইসরাইলকে ত্রাণ সরবরাহের ক্ষেত্রে শর্ত আরোপ না করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ডব্লিউএইচও প্রধান বলেন, ‘পূর্ণ প্রবেশাধিকার থাকা উচিত, কোনো শর্ত থাকা উচিত নয়, বিশেষ করে জীবিত জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার পর।’

যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা সম্পর্কে তেদ্রোস বলেন, ‘যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র শান্তি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছে, তাই সব পক্ষ এটিকে সম্মান করছে কি না, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।’

ইসরাইল বর্তমানে দুটি ক্রসিং পরিচালনা করছে, দক্ষিণ-পূর্বে কেরেম শালোম এবং মধ্য গাজার কিসুফিম। কিন্তু সব ক্রসিং খুলে দিতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাহায্য সংস্থাগুলো।

তেদ্রোস বলেন, ‘গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য উপলব্ধ সব ক্রসিং প্রয়োজন। আগে নিবন্ধন বাতিল হয়েছে এমন সব সাহায্য সংস্থাকে পুনরায় গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তিনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জাম সীমান্তে জব্দ করা হয়েছে। কারণ ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ বলেছে, এগুলো সামরিক কাজে ব্যবহৃত হতে পারে।’

তার ভাষ্য, ‘যদি আপনি একটি ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করতে চান, তাহলে আপনার ক্যানভাস এবং তাঁবুর জন্য স্তম্ভের প্রয়োজন হবে। এসব সরঞ্জাম অন্য কাজে ব্যবহৃত হতে পারে, এমন অজুহাতে আপনি যদি সেগুলো জব্দ করেন তাহলে এখানে তাঁবু হবে না।’

তেদ্রোস বলেন, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি অন্যত্র চিকিৎসা করতে ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছেন। যদিও ইসরাইলে ধর্মীয় ছুটির কারণে দুই সপ্তাহ ধরে কোনো ফ্লাইট উড়েনি। তিনি বলেন, চিকিৎসা স্থানান্তরের জন্য অপেক্ষা করতে করতে এর আগে ৭০০ জন মারা গেছেন এবং ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

সূত্র : বিবিসি

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত