আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

আল জাজিরার প্রতিবেদন

কীভাবে ট্রাম্পের প্রিয়পাত্র হলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান

আমার দেশ অনলাইন

কীভাবে ট্রাম্পের প্রিয়পাত্র হলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান
ছবি: সংগৃহীত

যুদ্ধ বন্ধে তার কৃতিত্বের কথা নানা প্রসঙ্গে তুলে ধরতে পছন্দ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সবশেষ গত ২২ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আবারো দাবি করেন, তিনি আটটি যুদ্ধ বন্দ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধ বন্ধ করে দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের সেনাপ্রধান এবং অত্যন্ত সম্মানিত ফিল্ড মার্শাল এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, আমি এক কোটি মানুষের জীবন বাঁচিয়েছি, সম্ভবত আরো বেশি।

বিজ্ঞাপন

এটি এই বছরের জুনের পর থেকে কমপক্ষে ১০ তম ঘটনা, যেখানে ট্রাম্প, প্রকাশ্যে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের প্রশংসা করেন।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল অক্টোবরে মিশরে শার্ম আল-শেখ শান্তি সম্মেলনে দেয়া ট্রাম্পের ভাষণ। যুদ্ধবিরতিতে তাদের প্রচেষ্টার জন্য বিশ্ব নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে, ট্রাম্প পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের অবদানকে স্বীকৃতি দেন। পাকি সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে অভিহিত করেন প্রিয় ফিল্ড মার্শাল হিসেবে।

এরআগেও বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে ট্রাম্প মুনিরকে ‘একজন মহান যোদ্ধা’, ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ এবং ‘ব্যতিক্রমী মানুষ’ হিসেবে বর্ণনা করেন। গত জুন মাসে ওয়াশিংটনে দু’জনের প্রথম বৈঠকের পর, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের সঙ্গে দেখা করতে পেরে ‘সম্মানিত’।

যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক, যা মাত্র কয়েক বছর আগেও টানাপোড়েনের মধ্যে ছিল, তবে তা পরিবর্তিত হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ এই পরিবর্তনকে ২০২৫ সালের মে মাসে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে চার দিনের যুদ্ধের কথা উল্লেখ করেন, যুক্তি দেন, এটি সম্পর্ক উন্নয়নে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই যুদ্ধে ‘বিজয়’ দাবি করেছে। পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী খুররম দস্তগির খান আল জাজিরাকে বলেন, ভারতের সঙ্গে সংঘাত আন্তর্জাতিকভাবে সেনাপ্রধান মুনিরের মর্যাদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

সংক্ষিপ্ত যুদ্ধ, দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব:

ভারত ও পাকিস্তান, দুটি পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী, যারা বেশ কয়েকটি যুদ্ধ করেছে এবং কয়েক দশক ধরে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এই বছরের শুরুতে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে এপ্রিলে এক হামলার পর এই অঞ্চলকে সংকটে ফেলে দেয়। এতে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়।

ভারত পাকিস্তানকে দোষারোপ করে, তবে তা অস্বীকার করে পাকিস্তান।

গত ৭ মে ভারত পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে হামলা চালায়। পাকিস্তান বিমান অভিযানের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানায়, দাবি করে যে তারা কমপক্ষে ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। কয়েকদিন পরে ভারত বিমান হামলার খবর নিশ্চিত করে, কিন্তু সংখ্যাটি নির্দিষ্ট করে বলেনি। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়।

পাকিস্তান ওয়াশিংটনের ভূমিকা স্বীকার করে এবং পরে ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে। তবে ভারত জোর দিয়ে বলে, যুদ্ধবিরতি সম্পূর্ণরূপে দ্বিপক্ষীয় সংলাপের মাধ্যমেই হয়েছিল, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় নয়।

খুররম দস্তগির খান বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির জন্য ট্রাম্পকে কৃতিত্ব দিতে দিল্লির অস্বীকৃতি একটি সুযোগ তৈরি করেছে, যা পাক সেনাপ্রধান মুনির এবং প্রধানমন্ত্রী শরিফ দ্রুত কাজে লাগাতে এগিয়ে আসেন।’

দস্তগির খানের সঙ্গে একমত হয়ে পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সালমান বশির মে মাসের সংঘাতকে সম্পর্ক উন্নয়নের ‘নির্দিষ্ট মোড়’ হিসেবে অভিহিত করেন।

তিনি বলেন, পাকিস্তানের কূটনৈতিক ভাগ্য পুনরুজ্জীবিত করার জন্য আসিম মুনির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

পরিবর্তনের প্রথম লক্ষণ:

পাকিস্তান একসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ছিল এবং ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হামলার পর দেশটিকে একটি প্রধান নন-ন্যাটো মিত্র হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল।

পরবর্তী বছরগুলিতে সম্পর্ক ভেঙে পড়ে, কারণ মার্কিন কর্মকর্তারা ইসলামাবাদকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধে দ্বিচারিতার জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন।

তবে তার দ্বিতীয় মেয়াদের মাত্র দুই মাস পরে, ট্রাম্প ভিন্ন সুরে কথা বলেন। মার্চ মাসে কংগ্রেসের একটি যৌথ অধিবেশনে দেয়া ভাষণে তিনি ২০২১ সালের আগস্টে কাবুল বিমানবন্দরে বোমা হামলার একজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার জন্য পাকিস্তানকে ধন্যবাদ জানান।

ইসলামাবাদ-ভিত্তিক সানোবের ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক কামার চিমা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সব সময় এমন একজন মিত্রের প্রয়োজন ছিল যে তাদের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে, এবং যদিও তারা গত বহু বছর ধরে ভারতকে উল্লেখযোগ্যভাবে সমর্থন করে আসছিল, কাবুল বোমা হামলাকারী গ্রেপ্তারের পর, ওয়াশিংটন বুঝতে পারে পাকিস্তান তাদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার ক্ষমতা রাখে।’

ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনীতে সেনা পাঠানোর আগ্রহ দেখিয়েছে পাকিস্তান।

চিমার মতে, ‘ফিল্ড মার্শাল একজন সেনা-কূটনীতিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। মুনির তার সামরিক-কূটনীতির দক্ষতা ব্যবহার করে পাকিস্তানকে তুলে ধরেছেন।’

চিমা বলেন, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে আসিম মুনির দুইবার যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। মুনির দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে পাকিস্তানকে একটি আঞ্চলিক খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য করছে, মুনির ও পাকিস্তান আরো বড় ভূমিকা পালন করতে পারবে।

আরএ

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন