Ad T1

বেড়ীবাঁধ পুনর্বাসন ঢাল অরক্ষিত, জলোচ্ছ্বাস ঝুঁকিতে সন্দ্বীপবাসী

সন্দ্বীপ (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৮: ৪৪

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ১২ দশমিক ৩৪০ কিঃ মিঃ বেড়ীবাঁধ পুনর্বাসন ঢাল সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়েছিল গত কয়েক মাস আগে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম জামান ব্রাদার্স। গত বছরের অর্থাৎ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে কাজ শুরুর কথা ছিল।

পাউবোর তথ্যমতে, সন্দ্বীপ উপজেলার আয়তন ৭৩২ দশমিক ৪২ কিলোমিটার। সন্দ্বীপে বেড়িবাঁধের দৈর্ঘ্য ৫৫ কিলোমিটার। ইতোমধ্যে সিসি ব্লক দ্বারা ৯ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সুরক্ষিত আছে। এরপরও অধিক ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে ২৯ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ।

সন্দ্বীপ-এর পানিসম্পদ ব্যবস্থা প্রধানত অভ্যন্তরীণ খাল দ্বারা পরিচালিত হয়। দ্বীপের বিভিন্ন অংশে বাঁধের উচ্চতাও পর্যাপ্ত নয়। সন্দ্বীপ এলাকাটি ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সরাসরি সমুদ্রের সংস্পর্শে থাকায় ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসের প্রবণতা রয়েছে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে (২২৫ কিলোমিটার বেগে) দ্বীপটিতে অবস্থিত ৮০ ভাগ বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছিল। ওই ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল বলে বলা হয়েছে।

জলবায়ুজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় সম্পাদিত সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে বাঁধের অভ্যন্তরে বন্যার পানির সর্বাধিক গভীরতা ৩ মিটার থেকে ৩.৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০৫০ সালের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসের কারণে বন্যার পানির সর্বাধিক গভীরতা বেড়ে ৪ মিটার থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। সন্দ্বীপের ৫৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৪৫.৩৪ কিলোমিটার বাঁধের উচ্চতা ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস প্রতিরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত নয় বলে জানা গেছে।

সন্দ্বীপ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সমুদ্রের ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস হতে ১৮হাজার হেক্টর এলাকার জনগণের জানমাল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষা করার উদ্দেশ্যে একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর আওতায় ২টি রেগুলেটর, ৭টি রেগুলেটর পুনর্বাসন এর মাধ্যমে নেট ১৫ হাজার ১শ ৭১ হেক্টর এলাকায় সমুদ্রের লবণাক্ত পানির প্রবেশ রোধ করে আবাদি কৃষি জমি রক্ষা করা, নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা। সে সাথে ৮৮ দশমিক ৭০ হেক্টর ম্যানগ্রোভ বনায়নের মাধ্যমে উপকূলীয় সবুজ ব্যষ্টনী সৃষ্টি করে টেকসই পরিবেশ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।

পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সন্দ্বীপের কৃষি, মৎস্য ও সামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। সাথে পাল্টে যাবে এই দ্বীপ উপজেলার মানুষের জীবনযাত্রাও। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে শুধুমাত্র এই উপজেলায় ফসল উৎপাদন হবে এক লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। যা বর্তমানের চেয়ে ২২ হাজার ২৯৩ মেট্রিক টন বেশি।

সূত্র আরো জানায়, সন্দ্বীপ উপকূলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলাস্থ পোল্ডার-৭২ এর অন্তর্গত কালাপানিয়া, মুসাপুর, সারিকাইত ও মগধরা এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের স্থায়ী পুনর্বাসনসহ ঢাল সংরক্ষণ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়। প্রকল্পে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল ৫৬৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের অধীনে বাঁধের ঢাল সুরক্ষা কাজ ২৯ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার, বাঁধ পুনঃআকৃতিকরণ ৪৫ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার, সিল্ট অ্যাক্সিলারেটর নির্মাণ এক দশমিক ৫ কিলোমিটার, পোল্ডার ৭২-এ ড্রেনেজ সাতটি খালের পুনঃখনন ১৯ দশমিক ১৮ কিলোমিটার, নতুন রেগুলেটর নির্মাণ দুটি, রেগুলোটর সংস্কার সাতটি, ম্যানগ্রোভ বনায়ন ৩২ দশমিক ৩ কিলোমিটার, পোল্ডারের উত্তর দিকে নতুন বাঁধ নির্মাণ ১০ দশমিক ২২ কিলোমিটার, উত্তর দিকে খাল পুনঃখনন ৬ দশমিক ৮ কিলোমিটার, উত্তর দিকে নতুন খাল খনন ৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার, উত্তর দিকে রেগুলেটর নির্মাণ তিনটি, উড়ির চরে তীর সংরক্ষণ কাজের ৭ দশমিক ৩ কিলোমিটার।

অথচ এখনও শেষ হয়নি ১২ দশমিক ৩৪০ কিলোমিটার ঢাল সংরক্ষণের কাজ। কালবৈশাখী ঝড়-বৃষ্টি এসে যাওয়ায় চলমান কাজও হচ্ছে বাধাগ্রস্ত। তাতে ঝুঁকিপূর্ণ ২৯ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অধিকাংশ নিয়ে বিপাকে পড়বে দ্বীপবাসী। বিশেষ করে পশ্চিম সারিকাইত সওদাগর হাট ও বাংলাবাজার মাঝামাঝি বেড়ীবাঁধ অংশসহ পশ্চিম মুছাপুর-আজিমপুর বেড়িবাঁধ।

প্রকল্পের কাজের বিষয়ে জানতে সন্দ্বীপ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার আরিফ উদ্দিন এর মোবাইল ফোনে বারবার চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিগ্যান চাকমা'র কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান,এ বিষয়ে সন্দ্বীপ পানি উন্নয়ন বোর্ড তাঁকে কাজের অগ্রগতি নিয়ে কোন রিপোর্ট করেনি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত