ভোরের রাজশাহী যেন অন্যরকম। কুয়াশার চাদরে ঢাকা চারপাশ, সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাস সব মিলিয়ে নগররজুড়ে নেমে এসেছে শীতের দাপট। গতকাল রোববার দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। ঠান্ডা বাতাসে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন, ফাঁকা রাস্তায় কমেছে মানুষের উপস্থিতি।
শীতের এই প্রকোপ সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষদের। রাজশাহী মহানগরীর কোর্ট এলাকায় সকাল থেকেই কাজে বের হওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন দিনমজুর জয়নাল আবেদিন। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে তিনি বলেন, ভোরে বের হইছিলাম, কিন্তু বাতাস খুব বেশি। একটু থেমে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে বের হই। শরীর ঠান্ডায় শক্ত হয়ে আসছে। ৯টা পর্যন্ত কোনো কাজ জোটেনি।
নগরীর বহরমপুর রেল বস্তিতে শীতের দৃশ্য আরো করুণ। খোলা জায়গায় জ্বালানো আগুন ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। কারো হাতে চায়ের কাপ, কারো গায়ে ছেঁড়া-পুরোনো কম্বল। আগুনের পাশে বসে থাকা এক বৃদ্ধ বলেন, রাতটা কোনোভাবে কাটাইছি। এখনো কোনো শীতের কাপড় পাই নাই। আগুন না জ্বালাইলে টিকাই মুশকিল।
বস্তিবাসীদের অভিযোগ, রাজশাহীতে এখনো পর্যাপ্ত সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়নি। ফলে নিম্নআয়ের মানুষগুলোকে নিজের উদ্যোগেই ঠান্ডা মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক রাজিব খান জানান, শুক্রবারের তুলনায় শনিবার তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে হিমেল হাওয়া বেড়েছে, যা আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এতে শীতের তীব্রতা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস থাকায় রাজশাহীতে শীতের প্রকোপ ধীরে ধীরে বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষ। তারা দ্রুত শীতবস্ত্র বিতরণ, ভাসমান মানুষের জন্য অস্থায়ী আশ্রয় এবং সামাজিক সহায়তা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।
সমাজবিজ্ঞানী তৌফিক আহম্মেদ মনে করেন, প্রতিবছর শীত এলেই দেখা যায় সবচেয়ে বেশি ভোগে নিম্নআয়ের মানুষ। দিনমজুর, বস্তিবাসী কিংবা ভাসমান মানুষের জন্য শীত মানে কাজ হারানো ও স্বাস্থ্যঝুঁকি একসঙ্গে। রাষ্ট্র ও সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগ না থাকলে এই মানুষগুলো আরো প্রান্তিক হয়ে পড়ে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা জানান, শীতের তীব্রতায় শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে শীত খুবই বিপজ্জনক। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত কমে যায়। এই সময় কম্বল বিতরণের পাশাপাশি গরম খাবার ও প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তাও জরুরি।
মানবাধিকারকর্মী আনোয়ার হোসেন বলছেন, শীতের শুরুতেই যদি পরিকল্পিতভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হতো, তাহলে এতটা দুর্ভোগ হতো না। এখনো রাজশাহীতে অনেক বস্তি ও খোলা জায়গায় থাকা মানুষ কোনো সহায়তা পায়নি। প্রশাসনের পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসা জরুরি।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

