Ad T1

অসাধু কর্মচারীকে শো’কজ করে বিপাকে ইউএনও

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬: ৫৪
সেবা নিতে আসা লোকজনের কাছ থেকে অর্থ আদায় ও কর্মস্থলে নিয়মিত উপস্থিত না হওয়াসহ বিভিন্ন অপরাধে অফিসের তিন কর্মচারীকে শো’কজ করে বিপাকে পড়েছেন আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফারিহা তানজিন। ইতোমধ্যে দু’যুবদল নেতার সহায়তায় অভিযুক্ত তিন কর্মচারী
সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফারিহা তানজিনকে নিয়ে নানান অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ। অফিস পিওনসহ তিন কর্মচারীদের এমন কাণ্ডে উপজেলা ছাপিয়ে জেলা জুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।
আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়সহ অফিসের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের অফিস সহকারী মতিউর রহমান রহস্যজনক কারণে একটানা
৬৮ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। একইভাবে অফিস সহায়ক আমির আলী ও বিলকিস আক্তারের বিরুদ্ধে অফিস ফাঁকির পাশাপাশি সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে উৎকোচ আদায়ের বিস্তার অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি সেবাগ্রহীতারা ইউএনওকে মৌখিক অবহিত করেন।
এর পরপরই তাদের তিনজনকেই প্রাথমিকভাবে মৌখিকভাবে সর্তক করে দেন উপজেলা নির্বাহি অফিসার। এতেও তারা সংশোধন না হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারিহা তানজিন অতিসম্প্রতি তাদের তিনজনেই শোকজ করেন। এরপরই ওই তিন কর্মচারী ইউএনও'র ওপর ক্ষিপ্ত হন। তারা আরও জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন পূর্বে রাজিহার এলাকায় একটি অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ঘটনায় অভিযান
পরিচালনা করে অর্ধলাখ টাকা জরিমানা করেন ইউএনও। এসময় উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল উত্তর জেলা যুবদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য হেমায়েত তালুকদার ও যুবদল নেদতা সালমান রহমান রিপন উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তাকে
জরিমানা মওকুফ করার অনুরোধ করেন। কিন্তু মামলা হওয়ার কারণে তিনি জরিমানা
মওকুফ করতে অস্বীকৃতি জানালে তারা ইউএনওর ওপর চরম ক্ষিপ্ত হন। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ওই তিন অফিস কর্মচারী এবং যুবদল নেতা মিলে ইউএনও'র বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার শুরু করেছেন। উল্লেখিতরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহি আফিসার অফিস পিওনকে চায়ের কাপ ছুড়ে মেরেছেন বলে অপপ্রচার শুরু করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অফিসের কয়েকজন কর্মচারীরা বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অফিস সহকারী মতিউর রহমানের ক্ষমতার দাপটে অফিসের কর্মচারীরা সর্বদা তটস্থ ছিলেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অফিসে না এসে আত্মগোপনে চলে যায় ফ্যাসিস্টের দোসর মতিউর। একটানা ৬৮ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে এক যুবদল নেতার ছত্রছায়ায় অফিসে যোগদান করেন মতিউর।
তারা আরও বলেন, স্থানীয় এক যুবদল নেতার ছত্রছায়ায় সেই মতিউর রাতারাতি ভোল্ট পাল্টিয়ে এখন নিজেকে বিএনপির নির্যাতিত কর্মী দাবি করে। এমনকি আবার অফিসে দাপট দেখাতে শুরু করেছে। তার অবৈধ সুযোগ সুবিধা না দেয়ার কারণেই তিনি ইউএনও'র বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার শুরু করেছে।
কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে জানতে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মতিউর রহমান নিজেকে বিএনপি সমর্থক দাবি করলেও অন্যকোন বিষয়ে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। এ বিষয়ে বরিশাল উত্তর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হেমায়েত তালুকদার বলেন, তার ড্রেজারে বালু উত্তোলনের ঘটনায় জরিমানা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে বিষয়টির সাথে আমি কোনভাবেই যুক্ত নই। এমনকি কর্মচারীদের সাথে যে ঘটনা ঘটছে সে বিষয়ে অফিস কর্মচারীদের সাথে কোন যোগসাজস নেই বলেও দাবী করেন তিনি।
সার্বিক বিষয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারিহা তানজিন বলেন, অফিসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পাশাপাশি অফিস কর্মচারীদের অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় এবং স্থানীয় এক অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ী ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলনের ঘটনায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করার কারণেই তারা সম্মিলিতভাবে তাদের লোকজন দিয়ে আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, অফিসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে সেই অফিস কখনও দুর্নীতি মুক্ত করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন একজন কর্মচারী তার অফিস প্রধানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মাধ্যমে এধরনের বক্তব্য দিতে পারেনা। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমএস
Ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত