Ad T1

কমেছে বিদেশি ঋণ

রোহান রাজিব
প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ১৪

পরিশোধের চাপে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ কমেছে। গত বছরের শেষ তিন মাসে ৭৩৬ মিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ কমেছে। এ সময় বেসরকারি খাতের ঋণ সবচেয়ে বেশি কমেছে। মূলত টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ঋণগ্রহীতারা তাদের ঋণ পরিশোধ করেছে। এ কারণে বেসরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণ কমেছে বলে জানিয়েছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি ১০৩ দশমিক ৬৩৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ছিল ১০৪ দশমিক ৩৭৪ বিলিয়ন ডলার। মোট বিদেশি ঋণের মধ্যে সরকারি খাতের ঋণ ২১১ মিলিয়ন ডলার কমে ডিসেম্বর শেষে স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮৪ দশমিক ২১৩ বিলিয়ন ডলার। গত সেপ্টেম্বরে ছিল ৮৪ দশমিক ৪২৭ বিলিয়ন ডলার। আর বেসরকারি খাতের ঋণ তিন মাসে ৫২২ মিলিয়ন ডলার কমে স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৪২৪ বিলিয়ন ডলার। গত সেপ্টেম্বর শেষে এ খাতের ঋণের স্থিতি ছিল ১৯ দশমিক ৯৪৬ বিলিয়ন ডলার। গত তিন মাসে বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেশি কমেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, করোনাকালীন সময়ে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের সুদহার কম থাকায় ব্যাপক আকারে ঋণ নেওয়া হয়েছিল। যদিও ওই সময়ে দেশের রিজার্ভের অবস্থান ভালো ছিল। তবে করোনা-পরবর্তী সময়ে ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়ে যায়। আবার ডলার দরে অস্থিরতা শুরু হয়। একইসঙ্গে বিদেশি ঋণের সুদহারও বৃদ্ধি পায়। এসব কারণে ব্যবসায়ীরা নতুন ঋণ না নিয়ে আগের ঋণ পরিশোধে বেশি মনোযোগ দেন। এর ফলে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ কমে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের স্থিতি কমে হয়েছে ১০ দশমিক ১৩১ বিলিয়ন ডলার। সেপ্টেম্বর শেষে ছিল ১০ দশমিক ৭২৭ বিলিয়ন ডলার। বিভিন্ন বিদেশি উৎস থেকে দেশের বেসরকারি খাতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের নেওয়া সর্বোচ্চ এক বছর মেয়াদের জন্য তহবিল স্বল্পমেয়াদি ঋণ হিসেবে ধরা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য আমদানিকারকরা বিদেশি ঋণদাতাদের থেকে ঋণ নেন, যা বায়ার্স ক্রেডিট নামে পরিচিত। আমদানি দায় পরিশোধে ব্যাংকগুলোও বিদেশি উৎস থেকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়ে থাকে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সুদহার বেশ কমেছে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটার প্রভাব নেই। কারণ বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিংয়ে ডাউনগ্রেডেড হওয়ার কারণে রিস্ক প্রিমিয়ামের সুদহার বেড়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশের আগে সুনাম ছিল, যা এখন নেই।

সূত্র জানায়, বিদেশি ঋণ কমার পেছনে নতুন ঋণ পাওয়া যাচ্ছে কম। আবার গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ওভারডিউ পরিশোধের চাপ ছিল গত বছরের শেষদিকে। এসব কারণেই বিদেশি ঋণ কমেছে।

ইআরডির তথ্যমতে, গত জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মোট বিদেশি ঋণ-অনুদান ছাড় হয়েছে ৪১৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৯৯ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। এ হিসাবে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড় কমেছে ১৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের আট মাসে ৩৮৫ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের বিদেশি ঋণ ছাড় হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৭৭ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। অবশ্য অনুদান ছাড়ের পরিমাণ বেড়েছে। অনুদান এসেছে ২৭ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে আসে ২২ কোটি ডলার।

চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বিদেশি ঋণের সুদাসল বাবদ ২৬৩ কোটি ৬৪ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২০৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ বিদেশি সুদাসল পরিশোধে সরকারের ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। গত জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মূল ঋণ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ১৬৯ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধ করা হয় ১২২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এই অর্থবছরের আট মাসে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ৯৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে এটি ছিল ৮০ কোটি ৫৯ লাখ ডলার।

বিষয়:

বিদেশি ঋণ
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত