হেপাটাইটিস সচেতনতাই মুক্তি

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৪: ৩৬

হেপাটাইটিস একটি ভয়ানক ব্যাধি । সাধারণ কথায় লিভার তথা যকৃতের প্রদাহকে বলা হয় হেপাটাইটিস। কোনো ব্যক্তির হেপাটাইটিস হওয়ার অসংখ্য কারণ থাকতে পারে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বিভিন্ন ধরনের হেপাটোট্রপিক ভাইরাস। এ ধরনের ভাইরাস সরাসরি যকৃৎকে সংক্রমিত করে এবং যকৃতেই বংশবৃদ্ধি করে। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি, ই, জি ইত্যাদি হলো বিভিন্ন ধরনের হেপাটোট্রপিক ভাইরাস, যা বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী হেপাটাইটিসের অন্যতম কারণ।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার মানুষ ও প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন হেপাটাইটিস বি ও সি—এ দুই ভাইরাসের কারণে মৃত্যুবরণ করে। আর আমাদের দেশে প্রতিবছর ২০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে এই রোগে। তবে আশার কথা, এই দুই নীরব প্রাণঘাতী ভাইরাস প্রতিরোধযোগ্য। আমাদের দেশে প্রায় এক কোটি মানুষ এই দুই ভাইরাসে আক্রান্ত। চিকিৎসক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসার জন্য তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধে আত্মনিয়োগ করা।’ আর অ্যাকিউট হেপাটাইটিসের ৩৫ শতাংশ, ক্রনিক হেপাটাইটিসের ৭৫, লিভার সিরোসিসের ৬০ ও লিভার ক্যানসারের ৬৫ শতাংশের জন্য হেপাটাইটিস বি ভাইরাস দায়ী। পুরুষরা নারীদের তুলনায় বেশি সংখ্যায় আক্রান্ত।

এদের মধ্য শিশু রয়েছে চার লাখ। আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা ৫৭ লাখ এবং নারীর সংখ্যা ২৮ লাখ। ১৮ লাখ প্রজননসক্ষম নারী হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। আক্রান্ত পরিবারের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। চাকরি পদপ্রার্থী ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সের নাগরিকদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষ বেশি সংখ্যায় আক্রান্ত। বাংলাদেশে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্তের হার শূন্য দশমিক ২ থেকে ১ শতাংশ। আর এই ভাইরাসগুলো ধীরে ধীরে লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা মানুষ প্রথমপর্যায়ে বুঝতে পারে না। আশঙ্কার বিষয় হলো, হেপাটাইটিস ‘বি’ এবং ‘সি’কে জনস্বাস্থ্যের হুমকি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০৩০ সাল নাগাদ তা নির্মূল করার পরিকল্পনা নিয়েছে। লক্ষ্য হচ্ছে, হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ রোগীর সংখ্যা ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনা। মৃত্যুহার ৬৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। সারা পৃথিবীতে ৩৫ কোটিরও বেশি মানুষ কোনো না কোনো হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বসবাস করছে। এই ভাইরাস সংক্রমণের ফলে সাধারণ জন্ডিস থেকে শুরু করে লিভার ফেইলিওর, লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসারের মতো জটিল ও দুরারোগ্য রোগ হতে পারে। আর প্রতি ১০ জনের ৯ জন জানেই না তারা হেপাটাইটিস বি বা সি ভাইরাসে আক্রান্ত।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত জনসংখ্যা ৫ দশমিক ১ শতাংশ। বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের বাস। দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ লাখ মানুষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা ৫৭ লাখ। নারীর সংখ্যা ২৮ লাখ ও শিশু রয়েছে ৪ লাখ। আক্রান্ত পরিবারের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। লিভারের জন্য আরেকটি ক্ষতিকর ভাইরাস হলো হেপাটাইটিস সি। লিভার সিরোসিসের ৩০ শতাংশ ও লিভার ক্যানসারের জন্য ১৭ শতাংশ দায়ী হেপাটাইটিস সি ভাইরাস। আর হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্য দশমিক ২ থেকে ১ শতাংশ। তাদের বেশির ভাগের বয়স ২৮ বছরের বেশি।

স্বাস্থ্যবিধি ও জীবনযাত্রার উন্নতি

* পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন হেপাটাইটিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

* হাত ধোয়া, নিরাপদ পানি পান করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন খাবার গ্রহণ করার গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা।

* নিরাপদ যৌন সম্পর্ক স্থাপন এবং ইনজেকশনের সিরিঞ্জ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা।

সাধারণের জন্য করণীয়

* হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা।

* নিজেদের এবং পরিবারের সদস্যদের হেপাটাইটিস পরীক্ষার জন্য উৎসাহিত করা।

* সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে কী করণীয়, তা জানা।

* হেপাটাইটিস প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা। তাই হেপাটাইটিস নির্মূলে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আসুন, আমরা সবাই মিলে এই রোগ প্রতিরোধে কাজ করি এবং একটি সুস্থ সমাজ গঠনে সহায়তা করি।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান

জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি

জুলাই সনদে কখন স্বাক্ষর করবে এনসিপি, জানালেন নাহিদ

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভাপতি নিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন স্থগিত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সৈনিক শামসুদ্দিনের ইন্তেকাল

বোরকা নিয়ে কটূক্তি ঢাবি শিক্ষার্থীর, নিন্দা জানালো ছাত্রীসংস্থা

হাটহাজারীতে থানার ভেতর পুলিশের ওপর চড়াও সাবেক শিবির নেতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত